Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ঝালাইয়ের কাজে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক, বেতনের চেয়ে বেশি আয়

অধ্যাপক কবির আবু বেলাল। ছবি: বিবিসি।
অধ্যাপক কবির আবু বেলাল। ছবি: বিবিসি।
[publishpress_authors_box]

নাইজেরিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ঝালাইয়ের কাজ করে বেতনের চেয়ে বেশি টাকা আয় করেন। কবির আবু বিলাল নামের ওই অধ্যাপক দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর জারিয়ার বাসিন্দা।

অন্য অনেক দেশের মতো নাইজেরিয়ায়ও ঝালাইয়ের কাজকে একটি অসম্মানজনক পেশা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নিজের ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ খুলে তার সহকর্মীদের ও সমাজকে চমকে দেন।

অধ্যাপক কবির বিবিসিকে বলেন, “একজন অধ্যাপক হয়েও ওয়েল্ডার হিসেবে কাজ করে আমি মোটেও লজ্জিত নই। এ থেকে আমার আয়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনের চেয়ে বেশি।”

৫০ বছর বয়সী অধ্যাপক কবির নাইজেরিয়ার আহমেদু বেলো ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের গবেষক শিক্ষার্থীদের পড়ান এবং তাদের গবেষণা তত্ত্বাবধান করেন। এটি একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশটির সবচেয়ে বড় ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও একটি।

কবির আবু বেলাল ১৮ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করছেন এবং পদার্থবিদ্যা ও বৈদ্যুতিক প্রকৌশলের উপর বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন।

তার সহকর্মী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ইউসুফ জুব্রিল বলেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় সহকর্মীরা এই ঘটনাকে অদ্ভুত বলে মনে করেন। তবে তিনি মনে করেন, কোনও কাজকেই ছোট করা বা অসম্মানের চোখে দেখা ঠিক নয়।

ইউসুফ বলেন, “অধ্যাপক কবির আবু বেলাল যা করছেন, তা মোটেই অসম্মানজনক নয়, বরং প্রশংসনীয়। তার কাছ থেকে সমাজের শেখা উচিৎ যে কোনও কাজই ছোট বা অসম্মানজনক নয়।”

অধ্যাপক আবু বেলালও বলেন, সমাজের সব মানুষের এবং বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে মন আরও খোলা হওয়া দরকার।

“উচ্চশিক্ষিত হলেই ঝালাইয়ের মতো কোনও কাজ করা যাবে না, এই ধারণা ঠিক নয়। শিক্ষা কাউকে এমন কাজ করতে মানা করে না। আমি বরং বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীদের কোনও কাজকে অসম্মান করার প্রবণতা দেখেই অবাক হই।”

২০২২ সালের দ্য নাইজেরিয়ান গ্র্যাজুয়েট রিপোর্টে দেখা যায়, দেশটির উচ্চ শিক্ষিতদের ৪০ শতাংশেরও বেশি বেকার। রিপোর্টটি তৈরি করেছে স্টাটার্ন নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। স্টাটার্ন দেশটির চাকরীপ্রার্থী ও কর্মজীবিদেরকে কাজ খুঁজে পেতে সহায়তা করে।

ঝালাইয়ের কাজ করে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িও কেনেন অধ্যাপক কবির আবু বেলাল। ছবি: বিবিসি।

অধ্যাপক আবু বেলাল প্রায় বিশ বছর আগে জারিয়া শহরে একটি ছোট ওয়ার্কশপ খুলেছিলেন। ২০২২ সালে পূর্ণ অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার এক বছর পর তিনি বড় একটি ওয়ার্কশপ দেন। জারিয়া শহরে কাজের প্রচুর চাহিদা থাকায় তিনি বড় দোকান নেন।

এতে তিনি আরও যন্ত্রপাতি কেনার এবং বড় কাজ করার সুযোগ পান। গ্রাহকরা তাকে ধাতব দরজা ও জানালার ফ্রেমের মতো জিনিস তৈরি করতে বলে।

তিনি বলেন, “যত ছোট কাজই হোক না কেন আমি তা করে দেই। এমনকি মাত্র একটি দরজা হলেও আমি তা আনন্দের সঙ্গেই ঝালাই করে দেই।”

অধ্যাপক আবু বেলাল বলেন, ছোটবেলায় তিনি রেডিওসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি খুলে ফের জোড়া লাগাতে পছন্দ করতেন। সেই ভালোলাগা থেকেই তিনি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন।

তবে নাইজেরিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা প্রধানত তত্ত্বগত হওয়ায় তার ব্যবহারিক কাজ করার সুযোগ কম ছিল। আর সে কারণেই তিনি ঝালাইয়ের কাজের দোকান দেন। এতে তিনি বাড়তি আয় করার সুযোগও পান।

নাইজেরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা খুব বেশি বেতন পান না। শিক্ষকতা পেশায় জড়িতদের বেতন মাত্র ৩৯০ ডলার ৫৫৫ ডলার। নাইজেরিয়ান মুদ্রা নাইরায় যার পরিমাণ ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ। দেশটিতে শিক্ষকদের বেতন সহসাই বাড়ে না। এজন্য সরকারের সঙ্গে অনেক দেনদরবার করতে হয়।

তরুণদেরও বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেন অধ্যাপক আবু বেলাল। ছবি: বিবিসি।

অধ্যাপক কবির আবু বেলাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি ঝালাইয়ের কাজ করে তিনি তার অভাব দূর করতে পেরেছেন এবং একটি দামি মার্সিডিজ গাড়িও কিনেছেন।

এমনকি যারা তার এই কাজকে ছোট করে দেখেছেন তাদেরকেও তিনি অভাবের সময় টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন।

কবির বলেন, “২০২২ সালে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৮ মাসের জন্য ধর্মঘটে গেলে আমাদের বেতন দেওয়া হয়নি। কিন্তু তখন আমার কাছে সবসময়ই টাকা ছিল এবং কয়েকজন সহকর্মী আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসলে আমি তাদেরকেও টাকা দেই।”

তিনি তার ওয়ার্কশপে তরুণদেরকেও ঝালাইয়ের কাজ শেখান। তার দোকানে এখন ১২-২০ বছর বয়সী অন্তত ১০ জন কাজ শিখছেন। এদের তিনি প্রতিমাসে বেতন-ভাতাও দেন।

অধ্যাপক আবু বেলাল তার পাঁচ সন্তানকেও শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব কাজের দক্ষতা অর্জন করতে বলেন। তিনি বলেন, “আমি আমার সন্তানদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এখানে নিয়ে আসি কাজ শেখানোর জন্য। আমি চাই তারাও কাজটি শিখুক, যাতে তারাও কখনো জীবন-জীবিকার সমস্যায় না পড়ে।”

অধ্যাপক আবু বেলালের জন্য তার এই যৌথ কর্মজীবন পুরোপুরি উপযুক্ত। তিনি উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষকতার ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম। তারা ভাষায়, “আমি জ্ঞান দিতে ভালোবাসি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত