কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মামলার হয়রানিতে ফেলা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দায়িত্বও সরকার নেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আন্দোলনের মুখে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর কোটার নতুন হার নির্ধারণ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এসে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কিছুই করা হয়েছে। কোটা সংস্কারের জন্য আমরা আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছি। আন্দোলনের নামে যেসব সহিংসতা হয়েছে, তা তদন্তের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিশনের প্রধান বিচারপতি খোন্দকার দিলুরুজ্জামান কাজ শুরু করেছেন।”
গত মাসে হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায় দেওয়ার পর এই মাসের শুরুতে রাজপথে আন্দোলনে নামে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ কেন্দ্রিকই ছিল এই আন্দোলন। ধীরে ধীরে তার পরিসর বেড়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ে।
গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীরা আক্রান্ত হওয়ার পরদিন মঙ্গলবার সহিংস হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এরপর তিন দিনে শতাধিক মৃত্যুর পর সান্ধ্য আইন জারি করে সেনা মোতায়েন করতে হয় সরকারকে।
এদিকে আপিল বিভাগ এই মামলার শুনানি এগিয়ে এনে রবিবার রায় দেয়। তাতে হাইকোর্টের রায় বাতিলের পাশাপাশি কোটার অনুপাত কমিয়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার আদেশ দেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচির প্রথম দিকে শাহবাগে করা পুলিশর মামলার পাশাপাশি সংঘাতের নতুন মামলাগুলোতে হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এই বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “মামলার তথ্যাদি সরকারকে দেওয়া হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে হওয়া মামলাগুলোও প্রত্যাহার করা হবে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে সরকার।”
হতাহত শিক্ষার্থীর সংখ্যার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর আহত এবং নিহত শিক্ষার্থীদের পরিচয় জানা যাবে। এ মুহূর্তে সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। পরিচয় জানার পর আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
আন্দোলন করলেও সহিংসতায় শিক্ষার্থীরা জড়িত নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা শান্তিপূর্ণ কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের ভয়ের কিছু নেই। তাদের অযথা হয়রানি করা হবে না। এমনকি আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বা একাডেমিক কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হবে না। তারা ক্যাম্পাসে নিরাপদে থাকবে।”
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত ঢুকে পড়ে সরকারের উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে নাশকতা চালিয়েছিল।
আইনমন্ত্রী বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করেছি। এখন তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। তারা যেন শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্যাম্পাসে ফেরেন।”