Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সংলাপে বক্তব্য রাখেন। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সংলাপে বক্তব্য রাখেন। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
[publishpress_authors_box]

জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র কাঠামোতে সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, তা করা না গেলে অন্তর্বর্তী সরকারের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, অসংখ্য ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে সুযোগ পাওয়া গেছে, তা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।

শনিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে একথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে; আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টাকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহসভাপতি করা হয়েছে।

শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা। এই সংলাপে ২৬টি দল ও জোটের প্রায় ১০০ নেতা অংশ নেন।  

গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক করতে ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করবেন বলে সংলাপের সময় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ড. ইউনূস।

রাষ্ট্র কাঠামোতে সংস্কার আনা না গেলে অন্তর্বর্তী সরকারের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের (সংস্কার নিয়ে) ব্যর্থ হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমরা ব্যর্থ হতে চাই না।” 

তিনি বলেন, “প্রতিজ্ঞা করি, আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই। যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, তাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে সবরকম চেষ্টা করব, তাদের সে স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।

“তারা এ ত্যাগ না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খোঁজার আমাদের কোনও সুযোগ থাকতো না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সে সুযোগ পেয়েছি।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাপী অভূতপূর্ব সমর্থন থাকার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ছোট, মাঝারি এবং বড় সব দেশই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।

“আমরা যখন তাদের (বিশ্বনেতাদের) সঙ্গে কথা বলি, তারা জিজ্ঞেস করে যে তুমি কী চাও, আমরা সবকিছু দেব…আমরা এই সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাই না” বলেন তিনি।

জাতিসংঘ সরকারকে সমর্থন দিয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্ট ক্ষমতাচ্যুত সরকারের নৃশংসতা প্রকাশ করে বিশ্বকে (দৃষ্টি) বদলে দিয়েছে।

গোপন নির্যাতন কেন্দ্র আয়নাঘরে তার সাম্প্রতিক সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে গুমের শিকারদের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেছে।

তিনি সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন, যাতে কেউ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত পরবর্তী সরকার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে না পারে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর উপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, যাতে সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করা যায়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সংলাপে অংশ নেন।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানরাও সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবার উচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করা।”

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা কেবল মাত্র সুপারিশগুলো নিয়ে এসেছি, আমরা শুধু সাচিবিক কাজগুলো আপনাদের করে দিলাম। এটা আমার কাজ না, এটা আপনাদের কাজ, যেহেতু আপনারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন।

আসরের নামাজের বিরতি চলাকালে প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের কথা সাংবাদিকদের জানান তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, “আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ শুরু হয়েছে। বলা যায়, এটা প্রস্তুতিমূলক সভা।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত