Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি : প্রেস সচিব

shafiqul alam
[publishpress_authors_box]

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কক্সবাজার হয়ে জাতিসংঘের ‘মানবিক করিডোর’ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বাসসকে তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সরকার তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি।”

বাংলাদেশ লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলেও দেশটির রাজধানী সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আরাকান আর্মির অস্ত্রসহ অন্য রসদ সরবরাহের পথও জান্তা বাহিনী বন্ধ করে রেখেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রবিবার মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেছিলেন, “এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য করিডোর) একটা হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।”

বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর গুরুত্বপূর্ণ এমন সিদ্ধান্ত কারা, কোথায়, কোন প্রক্রিয়ায় এবং কিসের ভিত্তিতে নিচ্ছে, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে কি-না সেই প্রশ্নও তুলেছেন।

তাদের মতে, দেশের ভেতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এবং একই সাথে মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি ছাড়াও মিয়ানমারে প্রভাব আছে- এমন আঞ্চলিক সব পক্ষ একমত না হলে প্রস্তাবিত করিডোরটি বাংলাদেশের জন্য সামরিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো মানবিক করিডোরের জন্য বাংলাদেশের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দর ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার উপকূলের অনেক জায়গাই ব্যবহার করতে পারে।

শফিকুল আলম বাসসকে বলেন, “আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।”

তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সঙ্কট চলছে।

দুর্যোগের সময়ে বিভিন্ন দেশকে সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ভূমিকম্পপরবর্তী সময়ে মিয়ানমারকে সহায়তা প্রদান করা।

প্রেস সচিব সতর্ক করে বলেন, “এছাড়াও আমরা উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের মানবিক সঙ্কট দীর্ঘ হলে রাখাইন থেকে আরও মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমরা সামাল দিতে পারব না।”

শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে যে, জাতিসংঘ সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পর সোমবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আর যুদ্ধ দেখতে চাই না।”

তিনি বলেন, “আরাকানদের সাথে যোগাযোগের জন্য হিউম্যানিটিরিয়ান প্যাসেজ নিয়ে ইউনুস সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সকল রাজনৈতিক দলের সাথে বসে সরকারের সে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।

এতে দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির’ মুখে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এই রুট ব্যবহার করে সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে লজিস্টিক সহায়তা প্রদানে সম্মত রয়েছে।

তিনি বলেন, “তবে, রাখাইনে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করব।”

বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্বের বড় কোনও শক্তি এই করিডোরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যে প্রতিবেদন করা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রপাগান্ডা বলে দাবি করেন তিনি।

প্রেস সচিব বলেন, “বিগত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে একের পর এক বিদ্বেষপূর্ণ বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে আমরা দেখেছি, যা এখনও চলছে। এ ধরনের প্রচারণাও তার ব্যতিক্রম নয়।”

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গা ঢল। তাতে কয়েক মাসেই ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল ৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা।

সম্প্রতি সমকাল জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ইতোমধ্যে যৌথভাবে তাদের আঙুলের ছাপও নিয়েছে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর)। এদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াল অন্তত ১৩ লাখ ১৩ হাজারে।

বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গার অধিকাংশই সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে থাকছে বছরের পর বছর। কিছু রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়া হয় কয়েক বছর আগে। তারপর থেকে বার বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চালানো হলেও তা সফল হয়নি।

সম্প্রতি থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শিওর সঙ্গে বৈঠকের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির খবর দেন।

তাকে উদ্ধৃত করে বাসস জানায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত