Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

এবার দুর্গাপূজায় ভারতে যাবে না কোনও ইলিশ

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সঙ্গে দেখা করেন ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের সদস্যরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সঙ্গে দেখা করেন ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের সদস্যরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনও ইলিশ মাছ যাবে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

তিনি বলেন, “প্রতি বছর দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ উপহার পাঠানো হয়। তবে এবার ভারতে কোনও ইলিশ যাবে না।”

মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের (এফএলজেএফ) সদস্যরা। তাদের সঙ্গে আলাপেই এসব কথা উঠে আসে।

সবশেষ গতবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশের ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিকে ৫০ মেট্রিকটন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়।

ওই বছর ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, চার বছরে ভারতে ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

সেসময় তিনি বলেছিলেন, ইলিশ কেবল জাতীয় সম্পদই নয়, কূটনীতির অংশেও পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতে দুর্গাপূজার সময় সীমিত পরিসরে ইলিশ রপ্তানি হয়, তা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিকসহ কূটনীতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় উপদেষ্টা বলেন, “দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না। ফলে এবার দুর্গাপূজায়ও ভারতে যাতে কোনও ইলিশ না যায় তার জন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি। অবৈধ পথেও যেন কোনও ইলিশ যেতে না পারে সে বিষয়ে সীমান্ত এলাকায় কঠোর থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি।”

স্বল্প আয়ের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া ইলিশ মাছের দাম নাগালের মধ্যে নেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন ফরিদা আখতার।

এসময় মাংস আমদানির প্রসঙ্গেও কথা বলেন উপদেষ্টা। কিছু অর্থলোভী ব্যবসায়ী ভারতীয় গরুর পাশাপাশি মাংস আমদানির পাঁয়তারা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এই চক্রের তৎপরতা থেমে নেই। প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতে সরকারিভাবে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে মাংস আমদানি করব না। উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে মাংসের দাম কমানোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

নতুন করে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করতে একটি পক্ষ তৎপরতা শুরু করেছে বলেও জানান তিনি। তবে বর্তমান সরকার কোনও মাংস আমদানি করতে চায় না বলে জানান তিনি।

ফরিদা আখতার বলেন, দেশের লাখ লাখ খামারি গবাদিপশু লালন-পালনের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে ২০-২৫ লাখ পশু অবিক্রিত থেকে যায়। এমন পরস্থিতিতে দাম বৃদ্ধির অজুহাত তুলে মাংস আমদানি করলে শুরুতে হয়ত কম দামে পাওয়া যাবে, কিন্তু মাংসের চাবিকাঠি চলে যেতে পারে অন্য দেশের কাছে।

“এই বাজারটা নষ্ট করে ফেললে আমাদের সমাজ কোন অবস্থায় পড়বে এটাও চিন্তা করার বিষয়। উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে মাংসের দাম কমানোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা সচেতন আছি জনগণ যাতে স্বল্প ও ন্যায্য মূল্যে মাংস খেতে পারে এবং খামারিরা টিকে থাকতে পারে।”

হিমায়িত মাংসের পুষ্টিগুণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, আমদানি করলে এসব মাংস দেশে পৌঁছতে অনেক সময় লাগবে। আবার সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা না হলে এসব মাংসের পুষ্টিগুণ যেমন নষ্ট হবে তেমনি এই মাংস খেলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হবে।

দেশের বাজারে পশুখাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “খামারিদের খরচ কমাতে পশু খাদ্যের দাম কমানো হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিলে কৃষি খাতের মতো ভর্তুকির বিষয়েও আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। এই খাতের প্রান্তিক চাষি ও উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হবে।”

উন্নত জাত লালন-পালনকে সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি দেশিয় জাতের পশু টিকিয়ে রাখতে করনীয় কী তাও নির্ধারণ করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা। এজন্য বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তিনি।

সিন্ডিকেট ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের কারণে পশু খাদ্য, মাংস-ডিমের দাম বেড়ে যায় বলে মনে করেন ফরিদা আখতার। এই সিন্ডিকেট ভাঙার ওপর জোর দেন তিনি।

তার মতে, সিন্ডিকেট ভাঙার পাশাপাশি বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ালে দাম কমে আসবে।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার অভিযোগ করে বলেন, “পোলট্রি খাতে করপোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে প্রান্তিক খামারিরা জিম্মি হয়ে আছে। মুরগি উৎপাদন করে বাজারে নায্যমূল্য পাওয়া যায় না। লাভ হচ্ছে সিন্ডিকেটকারীদের। আর নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ খামারিরা। পাশাপাশি কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের নামে খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে। শিগগিরই এসব অনিয়মের লাগাম টানা হবে।”

ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং খামারিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ঋণের কিস্তি তিন মাস স্থগিত রাখার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনার খবর গণমাধ্যমে বেশি বেশি উঠে আসা দরকার বলে মনে করেন উপদেষ্টা। তিনি সাংবাদিকদের এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সমস্যাগুলো উঠে এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাণিসম্পদ খাতকে গণমাধ্যমে ভালোভাবে তুলে ধরলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত