এর আগে ইঙ্গিতে বললেও এবার স্পষ্ট করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস; জানালেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদাতারা যখন দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফিরে আসা ঠেকানোর দাবিতে সোচ্চার, তখন বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একথা জানান বলে বাসসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেই।”
গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রক্তাক্ত অধ্যায় পেরিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। তাতে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তারপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে। এরপর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে এই প্ল্যাটফর্মের নেতারা। তারা বলছেন, ‘গণহত্যাকারী ও ফ্যাসিস্ট’ আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না।
প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূসও আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী আখ্যায়িত করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিদেশে বসে তাদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে আসছেন।
এখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতি না হলেও জুলাই আন্দোলনের সময় যে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সেজন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের কথা বলেছেন বলে ্বাসস জানায়।
বৃহস্পতিবার বিদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “তবে দলের (আওয়ামী লীগের যে সব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচার করা হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সম্ভাব্য অপরাধের অভিযোগ থাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), হেগ-এ মামলা করার বিষয়টি সরকার বাতিল করেনি।
ক্ষমতায় পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে অভ্যুত্থানকারীদের গড়া নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি নির্বাচনের চেয়ে সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে।
ড. ইউনূস এর আগে বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এই বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে, অধিকতর সংস্কার করা হলে নির্বাচন চলে যেতে পারে আগামী বছরের জুন নাগাদ।
তবে নাগরিক পার্টি গঠন এবং তাদের দাবিকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাদের মনে সন্দেহ জেগেছে, নির্বাচন পেছানোর একটি পাঁয়তারা চলছে।
ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনও দাবির কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে না।
তিনি প্রতিনিধি দলের কাছে এটাও ব্যাখ্যা করে বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিত সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে অন্তর্বর্তী সরকার বদ্ধপরিকর, একথাও বলেন তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের নীতি-নির্ধারণে দিক-নির্দেশনা দিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা ও স্বাক্ষরের পরিকল্পনাও রয়েছে।
ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষার কথা জানান। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশবিরোধী অপতথ্য প্রচারের একটি বড় অংশ ভারতীয় গণমাধ্যম থেকেই আসছে।
কমফোর্ট ইরো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানোর মোকাবেলায় সহায়তার আশ্বাস দেন বলে বাসস জানায়।