Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
দাবা অলিম্পিয়াডে ওয়ালিজা-ওয়াদিফা

দুই বোনের যে কীর্তি আর কারও নেই

বুদাপেস্টে দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেবেন দুই বোন ওয়ালিজা ও ওয়াদিফা। ছবি: সকাল সন্ধ্যা।
বুদাপেস্টে দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেবেন দুই বোন ওয়ালিজা ও ওয়াদিফা। ছবি: সকাল সন্ধ্যা।
[publishpress_authors_box]

জুডিত পোলগার ও সোফিয়া পোলগারের সঙ্গে কি দারুণ মিলই না রয়েছে ওয়ালিজা আহমেদ ও ওয়াদিফা আহমেদের! হাঙ্গেরির দুই নারী গ্র্যান্ডমাস্টার খেলেছেন ১৯৮৮ সালের থেসালোনিকি দাবা অলিম্পিয়াডে। দুজনেই সম্পর্কে বোন।

জুডিত ও সোফিয়ার দেশ হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে আগামী ১০-২৩ সেপ্টেম্বর হবে দাবা অলিম্পিয়াড। আর সেই অলিম্পিয়াডে অংশ নেবেন বাংলাদেশের দুই বোন ওয়ালিজা ও ওয়াদিফা।

এর আগে দুবার সুযোগ পেয়েও দাবা অলিম্পিয়াডে যাওয়া হয়নি ওয়ালিজার। প্রথমবার ২০২০ সালে করোনায় বাতিল হয় রাশিয়ার অলিম্পিয়াড। দ্বিতীয় বার ২০২২ সালে দেশের বন্যা পরিস্থিতি ও মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে ভারতের চেন্নাইয়ে অলিম্পিয়াডে যেতে পারেননি তিনি। তবে এবার শুধু অলিম্পিয়াডেই যাচ্ছেন না, ওয়ালিজার সঙ্গী হয়েছেন ছোট বোন ওয়াদিফাও।

হাঙ্গেরির দুই বোন জুডিত পোলগার ও সোফিয়া পোলগার এক সঙ্গে খেলেছেন দাবা অলিম্পিয়াডে। ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশের দাবা ইতিহাসে প্রথম জাতীয় দলের জার্সিতে দুই বোন খেলবেন অলিম্পিয়াডে। অথচ অলিম্পিয়াডে যাওয়ার কথাই ছিল না ওয়ালিজার। সাধারণত জাতীয় দাবার সেরা পাঁচ দাবাড়ু সুযোগ পান অলিম্পিয়াডে। ওয়াদিফা আগেই অলিম্পিয়াড নিশ্চিত করলেও ওয়ালিজাকে সুযোগ পেতে খেলতে হয়েছে প্লে-অফ। সেটাও দেশের সেরা দাবাড়ু রানী হামিদের সঙ্গে। প্লে-অফ জিতে তবেই দাবা অলিম্পিয়াডে সুযোগ পেয়েছেন ওয়ালিজা।

এই অলিম্পিয়াডের বাংলাদেশের মেয়েদের দলে ওয়ালিজা-ওয়াদিফা ছাড়াও অংশ নেবেন আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ, নোশিন আঞ্জুম ও নুশরাত জাহান আলো।

বাংলাদেশের হয়ে এর আগেও দুই বোন এক সঙ্গে দাবা খেলেছেন। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সৈয়দা শাবানা পারভীন নিপা ও সৈয়দা আফসানা পারভীন নীরা খেলেছেন জাতীয় দলে। কিন্তু ওই দুই বোনের এক সঙ্গে অলিম্পিয়াডে খেলা হয়নি। শুধু নিপা ১৯৯২ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অলিম্পিয়াডে খেলেছেন।

অবশ্য এর আগে গত বছর ভারতের জামশেদপুরে এশিয়ান জুনিয়র দাবায় ওয়ালিজা ও ওয়াদিফা এক সঙ্গে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। 

দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ালিজা ও ওয়াদিফা। ছবি: সকাল সন্ধ্যা।

দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে রবিবার দাবা অলিম্পিয়াড উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলন। বাংলাদেশের ব্লেজার গায়ে সম্মেলন কক্ষে সবার আগে এলেন ওয়ালিজা। পেছনেই ঢুকলেন ওয়াদিফা। দুই বোনের চোখে মুখে রোমাঞ্চ। প্রথমবার অলিম্পিয়াডে খেলার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত ওয়ালিজা, “খুবই ভালো লাগছে আমার।  প্রথমে ওয়াদিফা ‍সুযোগ পেলে মনে হচ্ছিল যদি আমিও ওর সঙ্গে যেতে পারতাম। ইচ্ছা পূরণ হবে কিনা তখনও জানতাম না। এরপর আমি প্লে-অফে জিতে দলে ঢুকি।”

অলিম্পিয়াডের মতো বড় আসরে খেলতে যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে পারেননি দাবাড়ুরা। গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব মাত্র ১০ দিন অনুশীলন করিয়েছেন তাদের। এই প্রতিযোগিতায় যাওয়ার আগে এই প্রস্তুতি যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ওয়ালিজা, “মাত্র ১০টা ক্লাস করিয়েছেন রাজীব স্যার। তবে যদি আরও আগে থেকে শুরু করতেন, আরও দীর্ঘমেয়াদে অনুশীলন পেলে ভালো হতো।’

গত মে মাসে জাতীয় নারী দাবা শেষ হয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে বলতে গেলে প্রতিযোগিতামূলক দাবায় খেলতে পারেননি দুই বোনের কেউ। তারপরও লক্ষ্য আন্তর্জাতিক মাস্টার নর্মের, “আমি যদি ওখানে সাড়ে ৬ পয়েন্ট পাই তাহলে আন্তর্জাতিক মাস্টার নর্ম হবে। তাছাড়া প্রতিপক্ষ যদি সহজ পাই তাহলে দল হিসেবেও ভালো করার ইচ্ছা আছে।”

মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার ওয়ালিজার রেটিং ১৯৩৬। বরং তার চেয়ে এগিয়ে ছোট বোন ওয়াদিফা। ইস্পাহানি স্কুল ও কলেজে নবম শ্রেণীর ছাত্রী ওয়াদিফা। আর ওয়ালিজা ভিকারুন নিসা নুন স্কুল ও কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন এই বছর।

এর আগে এশিয়ান জুনিয়র, ওয়েস্টার্ন এশিয়ান জুনিয়র ও ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় খেলেছেন ওয়ালিজা। যদিও ছোট বোন ওয়াদিফা বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি খেলেছেন ভারত, শ্রীলঙ্কা, দুবাই, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়া, নেপালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়।

দাবার বোর্ডে ওয়ালিজা আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত।

ছোট বেলা থেকেই দাবার বোর্ডে আগ্রহ দুই বোনের। বাবা মাঈনুদ্দিন আহমেদ ইতালি প্রবাসী। যদিও ইতালিতে ছোটবেলায় বিভিন্ন দাবা টুর্নামেন্টে খেলতেন দুই বোন। তবে বাংলাদেশে চলে আসার পর মায়ের আগ্রহ ও সমর্থনে খেলে চলেছেন দাবা।

 বোনের সঙ্গে জাতীয় দলে খেলছেন ওয়াদিফা। এতে আনন্দ বেড়েছে দ্বিগুণ ওয়াদিফার, “আপুর সঙ্গে খেলব এক দলে। এটা গর্বের ব্যাপার। আর ও না পারলে আমাকে পারতে হবে। অথবা ও ভালো খেললে আমাকেও ভালো খেলতে হবে। আপু ভালো করলে আমারও উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তখন। ”

দু বোনের মধ্যে কে ভালো খেলে? ওয়াদিফা বলছিলেন, “দুজনই একই রকম খেলি। আপুর সঙ্গে খেলা পড়লে আগে কান্নাকাটি করতাম। আমি জানি ওর কাছে হেরে যাব। এ জন্য কান্না পেত। এমনও হয়েছে হেরে যাচ্ছি দেখে আপুকে বোর্ডে বসিয়ে রেখে রিজাইন না করে নিচে চলে গেছি। আপু তখনও বসে আছে দাবার বোর্ডে (হাসি)।”

বাংলাদেশে এমনিতেই নারী দাবাড়ুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পুরুষ গ্র্যান্ডমাস্টার ৫ জন থাকলেও নেই নারী গ্র্যান্ডমাস্টার। তাই দুই বোনই স্বপ্ন দেখেন গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার। ওয়াদিফার হয়ে সেই কথাটাই যেন বললেন ওয়ালিজা, “আমরা স্বপ্ন দেখি দুই বোনই মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হবো।”

সোফিয়া পোলগার ১৯৯০ সালে হয়েছেন গ্র্যান্ডমাস্টার। পরের বছর হয়েছেন জুডিত। কে জানে এই দুই বোনকে আদর্শ মানা ওয়ালিজা-ওয়াদিফাও হয়তো একদিন বাংলাদেশের মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পাওয়ার কীর্তি গড়তে পারেন। সেই পথে হেটে যেতেই যে সাদা-কালো বোর্ডে দুই বোন বুনে চলেছেন রঙিন স্বপ্ন।   

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত