মিয়ানমারের কাউকেও কোনোভাবে আর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসে ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা’ শেষে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি এবং কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল যুদ্ধ করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ওই দেশের কোনও নাগরিক বা অন্য কাউকে আর অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।”
মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের জেরে দফায় দফায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসে দেশটির সেনা সদস্যসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা।
সর্বশেষ গত ৫ মে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৮৮ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
এর আগে দুই দফায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি ও সেনা বাহিনীর ৬১৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। এর মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। তার আগে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও কাস্টমস কর্মকর্তাকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভাটি চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সভা শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয়রত বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিয়ে করণীয় বিষয়ে এই মতবিনিময় সভা। সভায় ক্যাম্পের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফেলা দুইশর বেশি অংশ দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে আর কাউকে অবৈধভাবে ঢুকতে দেওয়া হবে না– এ বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের অস্থিরতার আঁচ এসে পড়ছে ক্যাম্পগুলোতে। সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, মিয়ানমার থেকে আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আর এদিক থেকেও কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। এটা নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।”
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চলবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে, যারা ক্যাম্পে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। কিন্তু ক্যাম্পে এসব আর চলবে না। সেখানে এপিবিএন, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব একসঙ্গে যৌথ টহল দেবে।
সেনাবাহিনীও প্রস্তুত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সবসময় প্রস্তুত সেনাবাহিনী। যখন জরুরি প্রয়োজন পড়ে তখন সেনাবাহিনীও কাজ করে।”
রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে নিরাপদ করাই মূল উদ্দেশ্যে– একথা জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “এখানে (ক্যাম্পে) খুন-খারাবি, রক্তপাত এসব চলবে না। সেই জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে, যৌথভাবে কাজ করবে। আর ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য কেটে ফেলা কাঁটাতারের বেড়াগুলো সংস্কার ও দ্রুত মেরামতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, এপিবিএন প্রধান সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন, ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর, ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. ইকবাল, ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক হাসান বারী, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তিনি।