Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

বিমানবন্দর থেকে নতুন নিয়মে পণ্যছাড়ে সাড়া মিলছে না কেন 

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় নেওয়া হচ্ছে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের পণ্যগুলো।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় নেওয়া হচ্ছে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের পণ্যগুলো।
[publishpress_authors_box]

যাত্রীর উপস্থিতি ছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো শাখা থেকে পণ্যছাড় না দেওয়ার নতুন নিয়ম চালুর পর তিন দিনে কোনও পণ্য খালাস হয়নি। জালিয়াতি ধরার পড়ার শঙ্কায় বিমানবন্দরে কর্মরত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের চক্রটি পণ্যছাড় নিচ্ছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত ১৫ আগস্ট ‘যাত্রীর তথ্য জালিয়াতি করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্যছাড়’ শিরোণামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সকাল সন্ধ্যা। এরপর জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত অনেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের আবেদন ফরম জব্দ করে নিয়ে আসে কাস্টম গোয়েন্দা দল এআইআর। সেই ফরমের সঙ্গে যাত্রীর তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। চলছে জড়িত সিঅ্যান্ডএফের বিরুদ্ধে তদন্ত।

এই তদন্ত চলাকালে সোমবার চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্যছাড়ে নতুন নিয়ম চালুর নির্দেশনা দেন চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার ফাইজুর রহমান। তবে সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার দুপুর পর্যন্ত কোনও যাত্রী পণ্যছাড়ের জন্য বিমানবন্দর কার্গো শাখায় উপস্থিত হননি।

প্রশ্ন উঠেছে, যেহেতু নতুন নিয়মে কোনও যাত্রী উপস্থিত হয়ে পণ্যছাড় করছেন না, এতে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে এতদিন যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্যছাড় নেওয়া হতো, সেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে না?

এ বিষয়ে বিমানবন্দরে কর্মরত চট্টগ্রাম কাস্টমের সহকারী কমিশনার সোমেন চন্দ্র চাকমা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দেখুন আমরা এখন যেই কাজটি করছি, সেটি হচ্ছে যাত্রী নিজের উপস্থিতি ছাড়া এবং জেনুইন ডকুমেন্ট ছাড়া কোনও আবেদন ফরম জমা নিচ্ছি না। এই কঠোরতার কারণে হয়তো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা ভাবছে ফেইক ডকুমেন্ট দিয়ে পণ্য খালাস হবে না। তাই তারা আবেদন জমা দিতে আসছে না।

“আমি আপনাকে হলফ করে বলতে পারি, আমার শিফটিংয়ে জেনুইন ডকুমেন্ট, জেনুইন যাত্রী ছাড়া কেউই পণ্যছাড় নিতে পারবে না। আমরা শুধু যাত্রীকেই এই সুবিধা দেব। আর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাথে আমার এক্সট্রা খায়-খাতির নাই যে তাদের অনৈতিক আবদার আমি রাখব। সেই ভয়ে হয়তো ভুয়া ডকুমেন্টে পণ্য ছাড়ের আবেদন জমা পড়েনি।”

সোমেন চন্দ্র চাকমা বলেন, “জেনুইন যাত্রী এবং যাত্রীর নিজের উপস্থিতি ছাড়া আবেদন ফরম জমা না নেওয়ার কাস্টম কমিশনার মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনা আমরা সোমবার চালু করেছি। এর ফলে সোমবার, মঙ্গলবার কোনও আবেদন ফরম জমা পড়েনি। বুধবার দুপুর পর্যন্ত কোনও আবেদন নেই।

“নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রতিদিন কত আবেদন ফরম জমা পড়ল, সেই তথ্য সাথে জেনুইন কাগজপত্র কাস্টম হাউসে জমা দিচ্ছিলাম। সোমবার থেকে আমাদের রেজিস্ট্রার খাতা খালি যাচ্ছে।”

চট্টগ্রাম বিমানবন্দর তিন শিফটে তিনজন সহকারী কাস্টম কমিশনার দায়িত্বে থাকেন। তাদের অধীনে কাজ করেন রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের একটি দল। আবেদন ফরম পূরণের সব প্রক্রিয়া করে থাকেন সেই রাজস্ব এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারাই।

বুধবার থেকে বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করছেন আরেক সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ডিউটিতে কে থাকল, সেটা বিষয় না। নিয়ম তো সবার জন্য প্রযোজ্য। আমারও মনে হয় প্রপার ডকুমেন্ট দিতে না পারার ভয় কাজ করছে তাদের মধ্যে।”

চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন ২০টির মতো আবেদন ফরম জমা পড়ে। অভিযোগ আছে, বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের অগোচরে পাসপোর্ট, বোর্ডিং কার্ড, অন্যান্য তথ্য নিয়ে আবেদন ফরম জমা দেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধিরা। আবেদনে যাত্রীর স্বাক্ষর যেমন জাল করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা, তেমনি যাত্রীর উপস্থিতি ছাড়াই বিমানবন্দরের কার্গো শাখা থেকে পণ্যছাড় করে নেন তারা। এতে প্রতি চালানে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মতো আর্থিক লেনদেন হয়। যাত্রীদের অগোচরে ছাড় নেওয়া এসব চালানে অবৈধ, আমদানি নিষিদ্ধ এবং সিগারেটের মতো উচ্চশুল্কের পণ্য বিমানবন্দর দিয়ে ছাড় হয়ে যাচ্ছে। এতে করে সরকার বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

এই জালিয়াতি ঠেকাতে চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার যাত্রীর উপস্থিতিতেই পণ্যছাড়ের বাধ্যবাধকতা চালু করেন।

বিমানবন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, শুধু যাত্রীর উপস্থিতিতে আবেদন ফরম জমার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা গেলেই অনিয়ম বন্ধ হবে। আর আগে যাদের বিরুদ্ধে এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার ছিল, তাদের ফরমগুলো নিয়ে সেই যাত্রীদের কাস্টমে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারলেই জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

অভিযোগ উঠেছে, ইতোমধ্যে যেসব ‘এ’ ফরম এআইআর শাখা জব্দ করেছে, তাদের বিপরীতে যাত্রী খোঁজা শুরু হওয়ায় তটস্থ হয়ে পড়েছে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। তারা যেকোনো মূল্যে সেই যাত্রীদের টাকা-পয়সা দিয়ে অনুরোধ করে কাস্টমে উপস্থিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৪০টির মতো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নিবন্ধন আছে। কিন্তু কাজ করে মাত্র ৮-১০টি প্রতিষ্ঠান। মূলত এই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরাই অবৈধভাবে পণ্যছাড়ের সঙ্গে জড়িত। এদের বাইরে নতুন কোনও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের পণ্যছাড়ে কাজ করার সুযোগ নেই। ফলে সব অপকর্মের সঙ্গে তারাই জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

কী কারণে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আবেদন ফরম জমা দিচ্ছে না, সেটি জানতে অন্তত চারটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে এসএনবি ট্রেড এবং প্রহার ট্রেডের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে গেলে দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। আল মোস্তফা ট্রেডের ফোন নম্বরেও সাড়া মেলেনি। আর এক্সিলিয়েন্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মালিক রাফাত হোসাইনকে ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে জেসমিন আকতার পরিচয়ে একজন বলেন, তারা বিমানবন্দরে সিঅ্যান্ডএফের কাজ করেন না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত