নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) গ্যাসক্ষেত্রের এক স্তরেই সাড়ে ১৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।
জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বরনগরের ওয়াছেকপুর গ্রামে এই গ্যাস কূপটি খননের পর একথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।
বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপের প্রকল্প পরিচালক প্রিন্স আল হেলাল এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, কূপটির ৩১১৩ মিটার গভীরে তৃতীয় এবং সর্বনিম্ন স্তরে সাড়ে প্রায় সাড়ে ১৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান মিলেছে।
সোমবার গ্যাসের প্লেয়ার লাইনে আগুন দিয়ে ডিএসটি টেস্ট চালানো হয়। এই কূপের তিনটি স্তরে গ্যাস আছে বলেও জানান তিনি। উপরিভাগের বাকি দুই স্তরেও কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন গ্যাস পাওয়ার আশা করছেন তারা।
প্রিন্স আল হেলাল আরও জানান, দেশের গ্যাস সংকট মোকাবেলায় ২০২৩-২০২৫ এর মধ্যে মোট ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে বাপেক্সের মাধ্যমে মোট ২৮৪১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি কূপ খননের প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই প্রকল্পের আওতায় বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপের খনন কাজ শুরু হয় এ বছরের ২৯ এপ্রিল।
১৫ জুলাই ৩১১৩ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন কার্যক্রম সমাপ্ত করা হয়। খননকালে কূপটিতে মোট তিনটি স্তরে পর্যাপ্ত গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এরমধ্যে ১ম স্তর ১৯২১-১৯৭৩ মিটার (৫২ মিটার)। এ স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। ২য় স্তর ২৫৪৮-২৫৮৫ মিটার (৩৭ মিটার)। এ স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি ছিল ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ৩য় স্তর ৩০৮১-৩১০১ মিটার (২০ মিটার)। এ স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি ছিল ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
প্রিন্স আল হেলাল বলেন, “৩য় স্তরে মজুদ গ্যাসের মধ্যে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে আশা করছি। বর্তমানে টেস্টিং কার্যক্রম চলছে।”
কূপ খনন অধিকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “কূপের প্রতিটি স্তরে কি পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডিএসটি পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক হাওলাদার অহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বর্তমানে বাপেক্সের দুই শতাধিক প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
গ্যাস পাওয়ার খবরে বাপেক্সের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশাপাশি খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এখান থেকে উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা যেন পায় সেদিকে দৃষ্টি রাখা।
এর আগে বাপেক্সের মাধ্যমে খনন শেষে ১৯৭৬ সালে বেগমগঞ্জ-১ কূপে গ্যাস পাওয়া গেলেও তা উত্তোলিত হয়নি। এরপর ১৯৭৮ সালে বেগমগঞ্জ-২ কূপ খনন করা হলে কূপটিতে গ্যাস আবিষ্কৃত হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বেগমগঞ্জ-৩ কূপ খনন করা হয় এবং সেই কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ফেনী-নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপর এই এলাকায় বাপেক্স বেগমগঞ্জ-৫ ও ৬ নম্বর কূপ খননের পরিকল্পনা করছে।