নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় মা-মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় মো. মেহরাজ (৪৮) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের মুন্সি (৫০) ধর্ষণের উদ্দেশ্যে মেহরাজকে দিয়ে ওই নারীর বাড়িতে চুরির ঘটনা সাজান।
উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চরকাজী মোখলেছ গ্রামে গত সোমবার মধ্যরাতে ঘরে ঢুকে এক নারী (৩০) ও তার ১২ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ পায় পুলিশ।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, স্বামীর বাড়িতে না থাকার সুযোগে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদের টিনের তৈরি বসতঘরে সিঁধ কেটে ঢোকে। এরপর ওই ব্যক্তি দরজা খুলে দিলে ঘরে ঢোকেন আরও দুজন। তখন ওই গৃহবধূ ‘চোর’ বলে চেঁচিয়ে উঠলে তার মুখ, হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়। পাশের কক্ষে থাকা তার ১২ বছর বয়সী মেয়েকেও দুর্বৃত্তরা বেঁধে ফেলে।
এরপর তারা ওই নারী ও তার মেয়েকে ধর্ষণ করেন বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছেন। ওই ঘর থেকে এক জোড়া কানের দুল, দুটি নাকফুল ও নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকাও দুর্বৃত্তরা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই নারী দুইজনের নাম উল্লেখসহ তিনজনকে আসামি করে চরজব্বর থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন– চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সি ও স্থানীয় গরুর বেপারী মো. হারুন (৪২)।
মামলার পর মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালী জেলা শহর থেকে প্রধান আসামি আবুল খায়ের মুন্সিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বুধবার সকালে নিজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মেহরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেহেরাজ একই এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে। গ্রেপ্তারের পর তাকে এবং মামলার প্রধান আসামি আবুল খায়ের মুন্সিকে মুখোমুখি করা হলে তারা পুলিশের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে এসপি জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আবুল খায়ের মুন্সি তার জমির বর্গাচাষী মো. মেহরাজকে দিয়ে ওই গৃহবধূর বসতঘরে সিঁধ কাটায়। সিঁধ কেটে মেহরাজ ঘরে ঢুকে দরজা খুলে দিলে মো. হারুনকে নিয়ে ঘরে ঢোকেন আবুল খায়ের মুন্সি।
পুলিশ সুপার জানান, এরপর আবুল খায়ের মুন্সি ও হারুন ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় মেহরাজ ওই নারীর পঞ্চম শ্রণি পড়ুয়া ১২ বছরের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় কানে থাকা স্বর্ণের কানের দুল ও ঘরে থাকা নগদ টাকা নিয়ে যায়।
মূলত হারুন গৃহবধূর বসতঘরে মালামাল আছে বলে মেহরাজকে চুরি করতে উদ্বুদ্ধ করে জানিয়ে এসপি বলেন, সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে দরজা খুলে দেওয়ার পর হারুনের সঙ্গে মুন্সি মেম্বারকে দেখে মেহরাজ অবাক হয় এবং বুঝতে পারে ধর্ষণ করতে তাকে দিয়ে চুরির ঘটনাটি সাজানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার সময় অবুল খায়ের মুন্সির পরনে থাকা কালো প্যান্ট, কালো কানটুপি এবং সিঁধ কাটার কাজে ব্যবহৃত কোদাল ও কাচি জব্দ করেছে পুলিশ। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। সেখানে রিমান্ড প্রার্থনা করে তথ্য যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলার আরেক আসামি হারুনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।