Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সাহিত্যের নোবেল জয়ে এশিয়ার প্রথম নারী হান কাং

সাহিত্যে নোবেলজয়ী দক্ষিণ কোরিয়ার হান কাং।
সাহিত্যে নোবেলজয়ী দক্ষিণ কোরিয়ার হান কাং।
[publishpress_authors_box]

এশিয়ার প্রথম নারী হিসাবে সাহিত্যে নোবেল পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং।

১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার চালুর পর নারী সাহিত্যিক হিসাবে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পাওয়া নারীদের মধ্যে তিনি অষ্টাদশ। আর এশিয়ার মতো দক্ষিণ কোরীয় হিসাবেও তিনিই প্রথম।

বৃহস্পতিবার দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি ২০২৪ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য হান কাংয়ের নাম ঘোষণা করে।

এর মধ্য দিয়ে চারটি ক্ষেত্রে এবারের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হলো। শুক্রবার শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা হবে। দুদিন বিরতির পর ঘোষণা হবে অর্থনীতিতে বিজয়ীর নাম।

হান কাংকে মনোনীত করার কারণ হিসাবে নোবেল কমিটি বলেছে, “অসাধারণ এক কাব্যিক গদ্যের বাঁধনে তিনি গেঁথেছেন ইতিহাসের যন্ত্রণাক্লিষ্ট আখ্যান এবং উন্মোচন করেছেন মানবজনমের ভঙ্গুরতার স্বরূপ।”

৫৩ বছর বয়সী হান কাংয়ের সাহিত্য জগতে পদচারণা শুরু কবিতা দিয়ে। ১৯৯৩ সালে তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটি ছিল কবিতার। কিন্তু তারপর তিনি গদ্য রচনায় ঝুঁকে পড়েন। দুই বছর পর তার ছোট গল্পের বই আসে বাজারে।

নোবেলের আগে ২০০৭ সালের দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছিলেন হান ক্যাং। তিন খণ্ডের এই উপন্যাস অনূদিত হয়েছে ২৩টি ভাষায়, এটি নিয়ে সিনেমাও হয়েছে।

হান কাং অষ্টাদশ নারী হিসাবে সাহিত্যে নোবেল জিতলেন।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্দ্রে ওলসন সাহিত্যিক হান কাংয়ের লেখার প্রশংসা করে বলেছেন, ভঙ্গুর মানুষের বিশেষ করে নারীদের দৈহিক বেদনা সহানুভূতির সঙ্গে আঁকা হয়েছে তার গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলোতে।

“দেহ ও আত্মা, জীবিত এবং মৃতের মধ্যে সংযোগ এক অনন্য সচেতনতার মধ্যদিয়ে কাব্যিক এবং পরীক্ষামূলক শৈলীর মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি সমসাময়িক গদ্য সাহিত্যের এক নতুন ভাষাশৈলীর উদ্ভাবকও হয়ে ওঠেন।”

নোবেল সাহিত্য কমিটির সদস্য আনা-কারিন পাম বলেছেন, “হান প্রগাঢ় গীতিকাব্যধর্মী গদ্য লিখেছেন, যা একই সঙ্গে কোমল ও নৃশংস এবং কখনও কখনও কিছুটা হলেও পরাবাস্তব।”

দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, হান ক্যাং এর গল্প-উপন্যাসগুলোতে পিতৃতন্ত্র, সহিংসতা, শোক এবং মানবতার অন্বেষণ করা হয়েছে। বলা হয়, সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারনার মধ্য দিয়েই নারীবাদের এক নতুন ধরনের ভাষা সৃষ্টি করেন হান।

২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে-জং (বর্তমানে প্রয়াত) শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জেতার পর হান দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় নাগরিক, যিনি এই পুরস্কার পাচ্ছেন।

কিম দায়ে-জংকে দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্ববর্তী সামরিক শাসনের সময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং যুদ্ধে বিভক্ত উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তার প্রচেষ্টার জন্য শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছিল।

হানের নোবেল জয় দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারকেই প্রতিফলিত করে।

২০২০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ান পরিচালক বং জুন-হোর সিনেমা ‘প্যারাসাইট’ জিতেছিল অস্কার। দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি নেটফ্লিক্স ড্রামা ‘স্কুইড গেম’ এবং বিটিএস ও ব্ল্যাকপিঙ্কের মতো কে-পপ ব্যান্ডগুলোর বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার মধ্যে এবার হান দেশটির সাহিত্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন।

বলা হচ্ছে, সাহিত্যে নোবেল জয়ের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতির পর কোরিয়ানরা এবার বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্কৃতিতেও নিজেদের জায়গা করে নিতে শুরু করল।

সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলে আসছিল যে নোবেল কমিটি ইউরোপীয় এবং উত্তর আমেরিকান লেখকদের ওপর খুব বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, যাদের ভাষার শৈলী ভারী হলেও গল্পের গভীরতা কম।

এছাড়া সাহিত্যে নোবেলপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই পুরুষ। সাহিত্যে এখন পর্যন্ত ১১৯ জন নোবলজয়ীর মধ্যে মাত্র ১৮ জন নারী। সর্বশেষ ২০২২ সালে ফ্রান্সের আনা এর্নো নারী সাহিত্যিক হিসেবে নোবেল জিতেছিলেন।

নোবেল জিততে যাচ্ছেন, তা যে হান আঁচ করতেও পারেননি, তা স্পষ্ট হয় সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব ম্যাটস মালমের কথায়।

তিনি পুরস্কার ঘোষণার সময় বলেন, “তার (হান) সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। অন্য দিনগুলোর মতোই সাধারণ একটি দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। ছেলের সঙ্গে মাত্রই রাতের খাবার খেয়ে উঠেছিলেন।

“তিনি একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন এমন কিছু শোনার। তবে পরে তার সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে। ডিসেম্বরের (পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান) প্রস্তুতি নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।”

২০০৭ সালে দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার জয়ের পর নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলেছিলেন হান।

তিনি বলেছিলেন, উপন্যাস লেখা তার কাছে নিজের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মতো একটি ব্যাপার।

“আমি কেবল আমার লেখার মাধ্যমে আমার মনে জাগা প্রশ্নগুলো সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করি এবং আমি প্রশ্নগুলোর মধ্যে থাকার চেষ্টা করি।”

দ্য ভেজিটেরিয়ানের ইংরেজি অনুবাদক ডেবরাহ স্মিথের সঙ্গে হান কাং।

‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাস নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাতে চেয়েছিলাম আমি। আমি এমন একজন নারীর গল্প বলতে চেয়েছিলাম, যিনি মানুষ হয়ে না থাকার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন।”

হানের উপন্যাস ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’ ২০১৮ সালে বুকার পুরস্কারের ফাইনালিস্ট বা চূড়ান্ত সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল।

ইংরেজিতে অনূদিত হওয়া হানের কাজের মধ্যে রয়েছে- ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’, ‘গ্রিক লেসনস’, ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’ ও ‘দ্য হোয়াইট বুক’।

দ্য হোয়াইট বুকও তার একটি অসাধারণ কাব্যিক উপন্যাস। এতে তিনি জন্মের পরপরই তার বড় বোনের মৃত্যুর গল্প বলেছেন। তার সাম্প্রতিকতম উপন্যাস ‘উই ডু নট পার্ট’ আগামী বছর ইংরেজিতে প্রকাশিত হবে।

নোবেল কমিটির সভাপতি ওলসন তার উপন্যাস হিউম্যান অ্যাক্টসকে ‘সাক্ষ্য সাহিত্য’ অভিহিত করেছিলেন।

১৯৮০ সালে নিজ শহর গোয়াংজুতে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের দমন-পীড়ন নিয়ে হান এই উপন্যাসটি লেখেন।

১৯৭০ সালে গোয়াংজুতে জন্মগ্রহণ করার পর নয় বছর বয়সে হান কাং তার পরিবারের সঙ্গে রাজধানী সিউলে চলে আসেন। তিনি একটি সাহিত্যিক ঐতিহ্য থেকেই এসেছেন। তার বাবাও একজন স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক ছিলেন। লেখালেখির পাশাপাশি হান শিল্প-সঙ্গীতেও নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, তার সমগ্র সাহিত্যকর্মে যার প্রতিফলন দেখা যায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত