Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

পরমাণু অস্ত্রবিরোধী জাপানি সংগঠন পেল শান্তির নোবেল

peace nobel nihon 2
[publishpress_authors_box]

শান্তিতে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছে পরমাণু অস্ত্রবিরোধী জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিও।

নোবেল কমিটি জানিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে ভূমিকার জন্য সংগঠনটিকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান তুলে ধরে তারা দেখিয়েছে, পৃথিবীতে আর কখনও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

পরমাণু বোমার আঘাত থেকে যারা বেঁচে ফিরেছিল, তাদের নিয়েই কাজ করে নিহন হিদানকিও। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞের এক দশক পর সেখানে বেঁচে যাওয়া মানুষের হাত ধরে গড়ে ওঠে সংগঠনটি।

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে শান্তিতে নোবেল জয়ীর নাম ঘোষণা করে।

এসময় নোবেল কমিটির প্রধান ইয়ারগেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস সংগঠনটির এই ‘অসাধারণ উদ্যোগ’কে ‘পরমাণু অস্ত্রবিহীন বিশ্ব গড়ার’ প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে প্রশংসা করেন।

নোবেল কমিটি বলছে, পরমাণু অস্ত্র আর কখনও ব্যবহৃত না হয় সেজন্য সংগঠনটি যেভাবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ব্যবহার করছে তা প্রশংসনীয়।

ফ্রাইডনেস বলেন, সংগঠনটি ‘নিউক্লিয়ার ট্যাবু’ বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারবিরোধী অবস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

১৯৫৬ সালে যখন নিহন হিদানকিও গড়ে তোলা হয়, তখন তাদের লক্ষ্য ছিল আহতদের সহায়তা দিতে জাপানি সরকারকে চাপ দেওয়া এবং পরমাণু অস্ত্র বিলুপ্ত করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলা। সেই কাজই তারা করে আসছে দীর্ঘকাল ধরে।

সংগঠনটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে যে ধরনের ‘ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে এবং যেভাবে ভুগতে হয়েছে, তার স্বাক্ষ্য দিয়েছে সারা বিশ্বে থাকা ভুক্তভোগীরা।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতার প্রায় এক দশক পর কাজ শুরু করে নিহন হিদানকিও। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা শহরে ইউরেনিয়াম বোমা ফেলে, তাতে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজার জন।

এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়। তার দুই সপ্তাহ পর জাপান আত্মসমর্পণ করে, এর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

শান্তিতে নোবেল পাওয়ার খবর জানার পর সংগঠনটির প্রধান তোশিয়ুকি মিমাকি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এমন কিছু ঘটতে পারে।”

নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, এবার শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন ২৮৬ জন, তার মধ্যে ১৯৭ জন ব্যক্তি আর ৮৯টি প্রতিষ্ঠান। পুরস্কারের ঘোষণা নোবেলপ্রাইজ ডট ওআরজি এবং ফেইসবুক, এক্স, ইউটিউবে নোবেল পুরস্কারের অফিসিয়াল ডিজিটাল চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

প্রথা অনুযায়ী এবারও অক্টোবরের প্রথম সোমবার (৭ অক্টোবর) চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

সোমবার যৌথভাবে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকিনকে চিকিৎসাশাস্ত্র বা ওষুধশাস্ত্রে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মাইক্রোআরএনএ এবং বহুকোষী প্রাণের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকাতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আবিষ্কারের জন্য নোবেল জয় করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই বিজ্ঞানী।

কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ‘মেশিন লার্নিংকে’ বা যন্ত্রকে শেখাতে মৌলিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের জন্য মঙ্গলবার এ বছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পান জন জে হপফিল্ড ও জেফ্রি ই হিন্টন। এদের একজন আমেরিকান, আরেকজন ব্রিটিশ।

বুধবার রসায়ন শাস্ত্রে নোবেলবিজয়ী তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। এদের মধ্যে ডেভিড বেকার ও জন এম জাম্পার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আর ডেমিস হাসাবিস যুক্তরাজ্যের নাগরিক।

ডেমিস হাসাবিস ও জন এম জাম্পার নামের দুই বিজ্ঞানী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরিচিত প্রায় সব প্রোটিনের গঠনের পূর্বাভাস করতে পেরেছেন। আরেক বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার জীবনের মৌলিক উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে সম্পূর্ণ নতুন প্রোটিন তৈরি করেছেন।

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যান বুকার বিজয়ী কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, ছোট গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হান কাংকে ২০২৪ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

সুইডিশ বিজ্ঞানী ও ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর ৫ বছর পর তার নামে ও রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর পাঁচ ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হয়।

পরে আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে ১৯৬৯ সালে চালু করা হয় অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার। সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পুরস্কার প্রবর্তন করে, তবে পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি পরিচালনা করে সুইডেনের রয়্যাল একাডেমি অব সায়েন্স।

প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যু দিবসে নোবেল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে পুরস্কার বিজয়ীরা স্বর্ণপদক, প্রশংসাপত্রসহ একটি ডিপ্লোমা এবং বর্তমানে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার পান।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রচেষ্টার জন্য ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই বাংলাদেশে গঠন করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ড. ইউনূস এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত