ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ১৫৬ উপজেলায় সব মিলিয়ে ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশের কিছু বেশি। ভোটের এই হারকে উৎসাহব্যাঞ্জক বলে মনে করেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, সৃষ্ট সংকট আসলে ভোটে নয়, রাজনীতিতে।
মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ভোট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এসব কথা বলেন।
প্রথম দফায় কেন্দ্রগুলোয় ভোটার খরার কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন আবহাওয়া, ধান কাটার মৌসুম ইত্যাদি নানা কারণের কথা উল্লেখ করেছিল।
দ্বিতীয় ধাপে কেন ভোট কম পড়ল, সিইসির কাছে সে প্রশ্নের উত্তর জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “নিঃসন্দেহে ব্যক্তিগতভাবে আমি ৩০ শতাংশ ভোটকে উৎসাহব্যাঞ্জক মনে করি না। এর অন্যতম কারণ হতে পারে দেশের একটা বড় রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে এবং ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছে। এটি জনগণকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করেছে।”
তবে যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে বা ব্যবস্থায় এই ধরনের চেষ্টা থাকতে পারে, পক্ষ-বিপক্ষ থাকতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে ভোট নিয়ে কোনও সংকট নেই উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “সংকট হচ্ছে রাজনীতিতে। রাজনীতি যদি আরও সুস্থ ধারায় প্রবাহিত হয় তাহলে আগামীতে হয়তো ভোটের স্বল্পতার যে সমস্যা তা কাটিয়ে ওঠা যাবে। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে যারা ভোটার তাদেরকে স্বশাসন বুঝতে হবে। স্বশাসন হচ্ছে নিজেই নিজেকে শাসন করা।”
দেশের রাজনীতিতে যে সংকট রয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, “ভবিষ্যতে সুস্থ ধারায় দেশের সামগ্রিক রাজনীতি প্রবাহিত হবে। ভোটাররা উৎসাহিত হবে, ভোটাররা আরও উৎসাহব্যাঞ্জক পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে আসবেন।”
এসময় ভোট সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের জবাব দেন সিইসি।
দ্বিতীয় দফার ভোটে তেমন সহিংসতা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হতাহত হয়েছে দু-একজন। তাদের হয়তো হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সহিংসতা হয়নি। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল।
“নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটার উপস্থিতির হার ৩০ শতাংশের বেশি হবে। একেবারে নির্ভুল তথ্য হয়তো আগামীকাল পাবেন।”
কোথাও কোথাও নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের আহত হওয়ার খবর শুনেছেন বলেও জানান সিইসি। তবে এটাও জানান, সঠিক তথ্য এখনও তার কাছে আসেনি।
সিইসি জানান, সবমিলিয়ে ১৫৬ উপজেলায় ৩৩ জন আহত হয়েছেন। যার মধ্যে এক-দু’জন গুরুতর আহত। এছাড়া স্ট্রোক করে দুজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।
অনিয়ম-ভোট কারচুপির চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রশাসন তৎপর ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, নানা অভিযোগে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হতে চেয়েছিলেন। যার মধ্যে ১০ জনকে জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে ঘটনাস্থলেই কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে।
ভোটে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ ওঠে।
জবাবে তিনি বলেন, “এর কোনও সুষ্পষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। আপনার সাহস করে তথ্য সংগ্রহ করবেন, আমাদের সমর্থন আপনাদের সঙ্গে থাকবে।”
সবশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড় ভোট পড়েছিল ৪১ শতাংশের বেশি। এর আগে ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলায় ভোট পড়ে ৬১ শতাংশ। তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে।