বাংলাদেশে এখন ‘সংস্কার নয়, গণঅরাজকতা’ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
শনিবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে এ মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্ট নিরাপদ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতিকে নিয়ে শনিবার সকালে ফুল কোর্ট সভা ডেকেছিলেন ওবায়দুল হাসান । এ খবর পেয়ে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ’ আন্দোলনকারী।
তারা ‘দফা এক দাবি এক, বিচারপতির পদত্যাগ’, ‘সংস্কার সংস্কার’, ‘বিচার বিভাগ বিচার বিভাগ, পুনর্গঠন পুনর্গঠন’ স্লোগান দিতে থাকে।
আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্তের খবর আসে। এর এক ঘণ্টা পর আইন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেনও একই সময়ে পদত্যাগ করেন।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জয় ফেসবুক পোস্টে বলেন, “একটি দেশের সুপ্রিম কোর্টকে কোনও প্রক্রিয়া ছাড়াই, নির্বাচিত সংসদ ছাড়াই কীভাবে পরিবর্তন করা যায়? এটি সংস্কার নয়, এটি গণঅরাজকতা। বাংলাদেশে কোনও আইনশৃঙ্খলা নেই যখন এমনকি সুপ্রিম কোর্টও নিরাপদ নয়।”
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হোসেনসহ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির সবাই পদত্যাগের পর শনিবার রাতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সৈয়দ রেফাত আহমেদকে। তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।”
এ ঘটনার সমালোচনা করে আন্দোলনকারীদের মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতির পদে বসানো হয়েছে অভিযোগ করে ফেসবুকে জয় বলেন, “আজ প্রতিবাদকারীরা সুপ্রিম কোর্ট আক্রমণের হুমকি দিয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
“তারা আদালতের পদত্যাগ দাবি করেছে এবং তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়োগের একটি তালিকা সরবরাহ করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং প্রতিবাদকারীদের মনোনীত বিচারকদের নিয়োগ করেছে।”
জয় দাবি করেন, আন্দোলনকারীরা ৪১ জন সাংবাদিকের তালিকা দিয়ে প্রেস ক্লাব থেকে তাদের বহিষ্কারের দাবি তুলেছে।
তিনি বলেন, “আমার মায়ের সরকারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের অভিযোগ আনার পর এ ঘটনা কি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আরও গুরুতর আক্রমণ নয়?
“তাহলে কি এখন জনতা সাংবাদিকদের বহিষ্কার করার জন্য তালিকা দেবে? আমি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত শুনতে চাই। আপনারা অতীতে এতটা সরব ছিলেন, এখন কেন নীরব?”