Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

পাহাড় কাটায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ অধিদপ্তরে নোটিশ

পাহাড়
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট তৈরির প্রকল্পের জন্য কাটা হচ্ছে পাহাড়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের জন্য পাহাড় কাটার ঘটনায় অবশেষে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের পাশে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১ এর কাজে এস্কেভেটর ব্যবহার করে পাহাড় কাটার অভিযোগ ওঠে সংস্থাটির বিরুদ্ধে । তবে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, পাহাড় নয় টিলা কেটে কিছু কাজ করা হচ্ছে।

যদিও আইন অনুযায়ী, যথাযথ কারণ না থাকলে পাহাড় বা টিলা কিছুই কাটা যাবে না।

এ ঘটনা পরিবেশ অধিদপ্তর জানলেও ব্যবস্থা নেয়নি বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যেই সোমবার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর নোটিশ পাঠান পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ।

এছাড়া এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ নয় জনকে নোটিশ পাঠিয়েছে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। মঙ্গলবার ডাকযোগে পাঠানো হয় এই নোটিশ।

বেলার আইনজীবী জাকিয়া সুলতানার সই করা নোটিশ দেওয়া হয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের দমহাপরিচালক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালককে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, পাহাড় কাটার কার্যক্রম বন্ধ করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬খ ধারা লঙ্ঘনের দায়ে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা উপযুক্ত তথ্য প্রমাণসহ কারণ দর্শাতে হবে।

সেখানে বলা হয়, “বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬খ ধারা অনুযায়ী পাহাড় কর্তন আইনত দণ্ডনীয়। সরেজমিন তদন্তে দেখা যায় যে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডে কলতলী বাইপাস রোডের পশ্চিমে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১ এর অভ্যন্তরে পাহাড় কর্তন করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন- ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬খ ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে। পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে পাহাড় কর্তন করার দায়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬খ ধারায় অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।”

ফ্ল‍্যাট বানাতে পাহাড় কাটছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নুরুল আমিন জানান, পাহাড় কাটার ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করেই এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে পাহাড় কাটা বন্ধ করে তথ্য প্রমাণাদি জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।”

এছাড়া বেলার নোটিশটিতে বলা হয়েছে, “চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় পাহাড় কাটা বন্ধে ২০১১ সালে জনস্বার্থে বেলা একটি মামলা দায়ের করে। ১৯ মার্চ ২০১২ সালে চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত উল্লেখিত জেলাগুলোয় অবস্থিত সকল পাহাড় কর্তন বন্ধে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। একইসাথে আদালত উল্লেখিত এলাকায় পাহাড় কেটে কোনও আবাসন প্রকল্প বা ইটভাটা স্থাপন করা হয়ে থাকলে তা ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দেন।”

আদালতের নির্দেশ থাকার পরও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকায় বেলা হাইকোর্ট বিভাগে পাহাড় কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম বিভাগের সব পাহাড়ের তালিকা (দাগ, খতিয়ানসহ) এবং পাহাড়গুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করে তা আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

পাশাপাশি ২০১২ সালের ১৯ মার্চ দেওয়া রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড় কাটারোধে সরকারের সংস্থাগুলো কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরেও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কলাতলী এলাকায় পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ বিষয়টি তুলে ধরে বেলার নোটিশে বলা হয়েছে, “এরই মধ্যে উল্লেখিত পাহাড়ের যে পরিমাণ কাটা হয়েছে সেখানে দেশিয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণের এবং রিটেইনিং ওয়াল স্থাপনের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। সেইসাথে কক্সবাজার জেলার সর্বশেষ বিদ্যমান পাহাড়গুলোকে আরও ক্ষতি, ধ্বংস ও কর্তন থেকে রক্ষার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাহাড় কাটা বিষয়ে আদালতের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা প্রতিটি পাহাড়ে প্রদর্শন করার অনুরোধ জানাচ্ছে বেলা।”

পাশাপাশি পাহাড়ের মাটি দ্বারা জলাধার ভরাটের কার্যক্রম বন্ধে ও এরই মধ্যে ভরাট হয়ে যাওয়া জলাশয় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানায় বেলা।

তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর মোহাম্মদ নুরুল আবছারের দাবি, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পাহাড় কেটে কোনও স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি।

তিনি বলেন, “প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন দুটি ভবনের পূর্ব ও উত্তর পাশে বিদ্যমান টিলা জাতীয় দুইটি উঁচু জমি থেকে প্রতি বর্ষাকালে মাটি ধসে পড়ে। এতে ভবন দুইটির বেজমেন্ট ও নিচতলার মালামাল এবং কর্তব্যরত শ্রমিকদের জীবন হুমকির মধ্যে থাকে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এসব দুর্ঘটনায় জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর লক্ষ্যে খাড়া টিলার পাশগুলো কেটে ৪৫ ডিগ্রি ঢাল সৃষ্টি করে তাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর মাধ্যমে ঢাল স্থিতিকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত