Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
মাথায় মৃত্যুদণ্ডের খাঁড়া

পালিয়ে যান সৌদি আরবে, ঘুরে গিয়েছিলেন দেশেও

জেএমবির নেতা নুর মোহাম্মদকে ২০ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেএমবির নেতা নুর মোহাম্মদকে ২০ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
[publishpress_authors_box]

লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত নুর মোহাম্মদ ২০ বছর পর গ্রেপ্তার হলেন। এই সময়ে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে, মাঝে একবার দেশে ঘুরেও গিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার বিমানবন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪০ বছর বয়সী নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।

নুর মোহাম্মদের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঝড়াবর্ষা গ্রামের কলেজপাড়ায়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির এই নেতা সাবু, শামীম, মাহবুবুর রহমান এমন নানা নামে পরিচয় দিতেন।

এটিইউর মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার মাহফুজুল আলম রাসেল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয় নুর মোহাম্মদকে।

তার দেশে ফেরার খবর পেয়েছিল গোয়েন্দারা। তার ভিত্তিতেই বিমানবন্দরে ওঁৎ পেতে ছিল তারা।

২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়েছিল। তার তিন বছর পর মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। তাতে নুর মোহাম্মদসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তারা নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির ‘কিলিং স্কোয়াডের’ সদস্য।

গ্রেপ্তার এড়াতে নুর মোহাম্মদ ২০০৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান বলে জানায় এটিইউ।

এসপি রাসেল বলেন, গাইবান্ধার একটি মাদ্রাসা থেকে ২০০৭ দাখিল পাস করেন নুর মোহাম্মদ। এরপর আর পড়াশোনা করেননি। ২০০৮ সালে গোপনে সৌদি আরবে চলে যান।

নুর মোহাম্মদ ২০১৭ সালে একবার দেশে ফিরে বিয়েও করেন। কিছুদিন পর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই সৌদি আরবে ফিরে গিয়েছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা রাসেল বলেন, ভিজিট ভিসায় স্ত্রীকে ১ বছর সৌদি আরবে রাখার পর দেশে পাঠিয়ে দিলেও নিজে আর ফেরেননি। মঙ্গলবার ভোরে আসার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আলোচিত হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জঙ্গিনেতার এভাবে পুলিশের চোখ এড়িয়ে বিদেশে যাওয়া, এসে ঘুরে আবার ফিরে যাওয়া প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

সেই বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার রাসেল বলেন, “নুর মোহাম্মদ নিজের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা বদলে পাসপোর্ট তৈরি করে দেশ ছেড়েছিল।”

এই কাজে তাকে যারা সহায়তা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। আর নুর মোহাম্মদকে নিয়েও আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।

হুমায়ুন আজাদকে ছুরি দিয়ে মেরেছিলেন নুর মোহাম্মদ

এটিইউর মুখপাত্র মাহফুজুল আলম রাসেল জানান, ২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন নুর মোহাম্মদ।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশের বইমেলা চলাকালে টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।

লেখালেখির জন্য জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে ছিলেন এই শিক্ষক। বিশেষ করে ‘পাক সার জামিন সাদ বাদ’ বইটি প্রকাশের পর তার উপর হুমকি বেড়েছিল।

পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমানের নির্দেশে দলটির একদল সদস্য পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন আজাদকে হত্যার জন্য হামলা চালিয়েছিল।

সেদিন ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। হুমায়ুন আজাদের ঘাড় মাথা, গলায় উপর্যুপরি কুপিয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে গিয়েছিল।

ঘটনার পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছিলেন। তিন বছর পর ২০০৭ সালে সেই মামলায় পুলিশ পাঁচজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানির নেতৃত্বে দলটির ‘কিলিং স্কোয়াডের’ সদস্যরা হুমায়ুন আজাদকে হত্যার উদ্দেশে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের মধ্যে নুর মোহাম্মদের হাতে ছিল ছুরি, মিজানুর রহমানের হাতে ছিল চাপাতি, আনোয়ারুল ও নুরুল্লাহ নামে অন্য দুজনের হাতে ছিল বোমা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, “বইমেলার গেটের বিপরীত পাশে একটা চটপটির দোকানে তারা অপেক্ষা করছিলেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে সানি ইশারা দিয়ে হুমায়ুন আজাদের পিছু নিতে বলেন। তখন নূর মোহাম্মদ ও মিজানুর চাপাতি-ছুরি বের করে হুমায়ুন আজাদকে কোপাতে শুরু করেন। রাস্তার লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।”

পরে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মিজানুর বলেছিলেন, “আমি ও নূর মোহাম্মদ ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করি। দূরে থাকা লোকজন ছুটে এলে আনোয়ারুল একটা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তখন লোকজন পালাতে থাকে। আমরাও পালিয়ে যাই।”

এটিইউ জানিয়েছে, নুর মোহাম্মদ জেএমবির আমির শায়খ রহমানের কাছে বায়াত গ্রহণ করে সংগঠনে যুক্ত হন। তাকে সংগঠনে দাওয়াত দিয়েছিলেন শায়খ রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি। 

হামলার পর দেশে চিকিৎসা নিয়ে হুমায়ুন আজাদ ওই বছরের আগস্টে জার্মানিতে গিয়েছিলেন। সেখানে কয়েকদিন পর তার মৃত্যু হয়।

হামলার কারণেই হুমায়ুন আজাদ মারা গেছেন উল্লেখ করে পরে হত্যাচেষ্টা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। সিআইডির নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় তদন্তও চলে।

অভিযোগপত্রে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল, চিকিৎসা প্রতিবেদন, জার্মানি থেকে পাঠানো মৃত্যুর সনদ, ময়না তদন্ত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে, আক্রমণের কারণেই হুমায়ুন আজাদ মারা যান।

দীর্ঘদিনের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকার আদালতে হত্যামামলার রায় হয়। তাতে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য মামলায় জঙ্গিনেতা সানির মৃত্যুদণ্ড আগেই কার্যকর হয়ে যাওয়ায় তিনি বাদ পড়েন।

নূর মোহাম্মদকে পলাতক দেখিয়েই সেই রায় হয়েছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত