জুলাই আন্দোলনের সময় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে হাজির করা হয় সোমবার। এদিন এজলাসে ওঠানোর পর থেকেই তাকে দেখা যায় বিমর্ষ অবস্থায়। বিমর্ষ অবস্থাতেই তিনি পানি পান করতে চাইলে নারী পুলিশের সহযোগিতায় তাকে পানি পান করানো হয়।
এজলাসে থাকার সময় তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তেও দেখা যায়।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় এনামুল হক নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকার ভাটারা থানার মামলায় এদিন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক বিল্লাল ভূঁইয়া।
শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ ফারজানা হকের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানির জন্য ১০টার দিকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে তাকে এজলাসে তোলা হয়। পাঁচ মিনিট পরে বিচারক এজলাসে ওঠেন। ১০টা ৮ মিনিটের দিকে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। শুনানি চলাকালে নুসরাত ফারিয়াকে বিমর্ষ দেখা যায়।
প্রথমে নুসরাতের পক্ষে তার আইনজীবী ফারহান মোহাম্মদ আরাভ, মোর্শেদ আলম শাহিন জামিন চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, “নুসরাত ৯ জুলাই বাংলাদেশ থেকে কানাডা যান। এরপর ১৪ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন। তিনি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও করেছেন। তিনি কোনও দলের পক্ষে ছিলেন না। আমরা তার জামিনের প্রার্থনা করছি।”
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী তাকে কারাগারে আটক রাখার পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, “নুসরাত ফারিয়া এজাহারনামীয় আসামি। তদন্তেপ্রাপ্ত না। থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়।
“আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তিনি স্বনামধন্য নায়িকা। আরেকজন স্বনামধন্য নায়ক ফেরদৌসকেও আমরা খুঁজছি। ফ্যাসিস্টরা কি করে, দেশের নায়ক, নায়িকা, ফুটবলারদের পিক করে দলে নেয়। ফ্যাসিস্টদের লোভে পড়ে তারাও চলে যায় আনুকূল্য পেতে, উচ্চপর্যায়ে যেতে। সেও পলককে অবলম্বন করেছে এবং সেখানে গিয়েছে।”
নুসরাত ফারিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, অভিনয় দোষের কিছু না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দোষের। তিনি বলেছেন, প্রতিটা ঘরে একজন হাসিনা রয়েছে। মানে প্রতিটা ঘরে ফ্যাসিস্ট রয়েছে। প্রতিটা ঘরের মেয়েরা কি ফ্যাসিস্ট? এ ধরনের বক্তব্য উস্কানিমূলক। হাসিনাকে খুশি করতে বক্তব্য রেখেছেন। ফ্যাসিস্টের পক্ষে কথা বলতে উদ্ধুদ্ধ করেছে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হতে তিনি জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।”
অনলাইন জুয়ার প্রসঙ্গ টেনে এ আইনজীবী বলেন, “ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ অনলাইন জুয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে। অনলাইনে সে নিজেও জুয়া খেলে। আবার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। একটা গান দেখেছি ‘সবাই মিলে খেলবো, আনন্দ করে ফিরবো’ এ ধরনের জুয়ার অ্যাপসের কারণে যুব সমাজ নষ্ট হচ্ছে।”
নাট্যকার, অভিনেতা, অভিনেত্রী সবাই একটা গোষ্ঠী হয়ে গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যেন আর কেউ ফ্যাসিস্টের জন্ম দিতে না পারে। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ওপর এরা গরম পানি নিক্ষেপ করতে দেশ-বিদেশ থেকে প্ররোচনা দিয়েছে।
“তারা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করেছে। আন্দোলন দমাতে, হত্যা করতে হাসিনা যে নির্দেশ দিয়েছিল, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তা পালন করতে যেকোনো স্থান থেকে সহযোগিতা করেছে। তাদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি হামলার সাথে সম্পৃক্ত। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য খুঁজছিল পুলিশ। এয়ারপোর্টে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
জামিনের বিরোধিতা করে ওমর ফারুক বলেন, “তারা কিন্তু বসে নাই। দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে, ফ্যাসিস্টকে ফিরিয়ে আনতে গুপ্ত মিছিল করে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। আসামি জামিন পেলে আবার ষড়যন্ত্র করবে, ফ্যাসিস্ট ফেরাতে কাজ করবে, মামলার তদন্তে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। তার জামিনের বিরোধিতা করছি।”
শুনানি শেষে আদালত নুসরাত ফারিয়া ঘটনার সময় দেশের বাইরে ছিলেন কিনা, আন্দোলনের পক্ষে পোস্ট করেছেন কিনা সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জামিনের বিষয়ে ২২ মে শুনানির তারিখ ধার্য করেছে আদালত।
এরপর ১০টা ২৭ মিনিটে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে তাকে হাজতখানায় নেওয়া হয়।
ভাটারা থানায় এনামুল হক নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় রবিবার নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিলে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এসময় এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে।
পরে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাটি করেন তিনি।