ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন যুক্ত হওয়া মেট্রোরেল গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার মুখে পড়েছে। বেশ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে চলাচল, পরিবর্তন হয়েছে নির্ধারিত সূচীর।
মেট্রোরেলের এসব সমস্যার জন্য যাত্রীরাই দায়ী বলে মনে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার মতে, যাত্রীদের অনভ্যস্ততা, জোর করে দরজা বন্ধ করতে চাওয়ার প্রবণতা চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে।
ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছরের ৫ নভেম্বর মতিঝিল-উত্তরা রুটে মেট্রোরেল চালু হয়। সে সময় ট্রিপ ছিল ১৫২টি, ১০ মিনিট পরপর। যাত্রীদের চাপে নতুন সূচি কার্যকর হয় গত ১৭ ফেব্রুারি শনিবার, ৮ মিনিট পরপর। ট্রিপ দাঁড়ায় ১৭৮টি।
তবে নতুন সূচির প্রথম দিনই দুপুরে আধ ঘণ্টার বেশি অচল ছিল যানজটের নগরী ঢাকার গণপরিবহনে স্বস্তি আনা মেট্রোরেল।
ট্রেন কী কারণে আটকে ছিল, সে বিষয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শুধু শনিবারই নয়, তার আগে বৃহস্পতিবার সকালেও সমস্যা হয় মেট্রোরেল চলাচলে।
ডিএমটিসিএল জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালে কিছু সময় শিডিউল অনুযায়ী রেল পরিচালনা করা যায়নি। এর কারণ ছিল বিদ্যুতের ঘাটতি ও সিগন্যাল সিস্টেমে ত্রুটি।
আগের দিন বুধবার রেলের তারে ঘুড়ি আটকে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল ঘণ্টাখানেক ব্যাহত হয়।
সোমবার এসব বিষয়ে কথা বললেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
মেট্রোরেল মানুষের দুর্ভোগ দূর করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যান্ত্রিক বিষয়ে মাঝেমধ্যে সমস্যা হবেই। আমি আবারও বলছি, বারবার বলব, আমাদের যারা মেট্রোরেল ব্যবহার করে, তারা এটি ব্যবহারে অনভ্যস্ত। এ কারণে কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে। সেখান থেকে প্রবলেম হতেই পারে।
“যাত্রীরা দরজা জোর করে বন্ধ করতে চায়। জোর করে বন্ধ করতে গেলে যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে। এটা বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলগাড়ি না।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রসঙ্গও ওঠে।
আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেছে-দলটির এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপির রাজনীতিতে মিথ্যাচার চিরজীবনই অপরিহার্য। এটা তাদের চিরাচরিত মিথ্যাচারেরই ধারাবাহিকতা। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই, কর্মীরা হতাশ। এখন কিছু না কিছু বলে কর্মীদের কাছে, জনগণের কাছে থাকতে চেষ্টা করছে।”
বিএনপির বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ এর সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি।
একই ধরনের অভিযোগ জাতীয় পার্টি ইস্যুতেও উঠেছে বলে সে প্রসঙ্গে জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, “জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল গঠন করেছে। এর বাইরে যারা জাতীয় পার্টির নামে ভাগ সৃষ্টির চেষ্টা করছে, সেটা তাদের নিজেদের ব্যাপার। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতীয় সংসদের কেউ নেই। বাইরে যারা করছে, তারা পার্লামেন্টের সঙ্গে জড়িত নয়। তাই আমাদের এনিয়ে মাথাব্যথা বা উদ্বেগ নেই।”
বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষায় সদা জাগ্রত জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমারে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, এর ফলে সীমান্তে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি থাকতে পারে। কাজেই আমরা এ বিষয়ে প্রস্তুত আছি।”
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে, কিছু কমছে। কমার প্রবণতা বিদ্যমান। চলমান বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব আমাদের দেশে পড়বে, এটা খুব স্বাভাবিক। কথা হচ্ছে, এ ব্যাপারে সরকার কোনও উদাসীনতা দেখিয়েছে কি না। সরকার তো এখানে সক্রিয়। আমরা তো চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা নিষ্ক্রিয় বসে নেই। আমাদের যা করণীয়, তা করছি।”
ভাষা দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
ভাষা দিবস ঘিরে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি আছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “রাত ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে ফুল দিবেন। সঙ্গে থাকবেন মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা।
“২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় নিউ মার্কেটের প্রান্ত থেকে আজিমপুর হয়ে শহীদ মিনারে যাব। আমাদের মূল সংগঠন ও সহযোগী সংগঠন থাকবে। পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি একুশের আলোচনা সভা তেজগাঁওয়ে নতুন অফিসে দুপুর ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ আরও অনেকে।
