Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

নীরব ওবায়দুল কাদের সরব হয়ে শোনালেন পালানোর গল্প

অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুদিন আগে ৩ আগস্ট ধানমণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ওবায়দুল কাদের। তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি।
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুদিন আগে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ধানমণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ওবায়দুল কাদের। তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি।
[publishpress_authors_box]

অভ্যুত্থানের তিন মাস পর সকাল সন্ধ্যা নিশ্চিত হয়ে জানিয়েছিল ওবায়দুল কাদেরের ভারতে পালানোর খবর। তারপর ডুব দিয়েই ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। রবিবার হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পাতায় তার একটি বিবৃতি আসে; তার একদিন বাদেই ভারতের একটি সংবাদপত্রে এল তার সাক্ষাৎকার।

সোমবার ভারতের বাংলা নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়াল ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে তিনি ৫ আগস্টের পর তিন মাস দেশে লুকিয়ে থাকার গল্পটি শুনিয়েছেন ওয়ালের নির্বাহী সম্পাদক অমল সরকারকে।

ভারতে বসে এতদিন নীরব থাকার পর এখন সরব হয়েছেন তার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। অভ্যুত্থানের সময় তাদের সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতা স্বীকার করলেও নিজের ব্যর্থতা মানতে নারাজ তিনি।

গত বছরের জুলাইজুড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবাদুল কাদেরের কণ্ঠ প্রতিদিনই শোনা যেত। আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট- তার এই বক্তব্য বেশ সমালোচিতও হয়েছিল।

সর্বশেষ ৩ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে দেখা গিয়েছিল তাকে। সেদিন তিনি বলেছিলেন, কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের যা দাবি ছিল, তা মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন বেহাত হয়ে চলে গেছে তৃতীয় পক্ষের হাতে।

এর একদিন বাদে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। গণভবন, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চলে যায় ছাত্র-জনতার দখলে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সব পালিয়ে যান, ক্ষোভের আগুনে পোড়ে দলটির কার্যালয়।

এরপর মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ দেশে ধরা পড়েন, কাউকে বিদেশে দেখা যায়। কিন্তু কাদেরের দেখা মিলছিল না কোথাও।

গত বছরের ২০ নভেম্বর সকাল সন্ধ্যা নিশ্চিত হয় ওবায়দুল কাদেরের ভারতে চলে গেছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, “ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন দেশের ভেতরই আত্মগোপনে ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি ভারতে গেছেন; বর্তমানে আসামের গৌহাটিতে অবস্থান করছেন।”

৫ আগস্টের পর কীভাবে দেশে লুকিয়ে ছিলেন, সেই বিবরণ দিয়ে কাদের দ্য ওয়ালকে বলেন, সেদিন পরিচিত একজনের বাসায় তিনি উঠেছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে।

“আমার বাসায় তখন হামলা শুরু হয়ে গেছে। যে বাসায় গিয়ে উঠি, সেখানেও হামলা, লুটপাট শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। প্রায় পাঁচঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম।”

যারা হানা দিয়েছিল, তাদের হাতে ধরাও পড়েছিলেন জানিয়ে কাদের বলেন, “আশ্চর্যের বিষয় হলো আমাকে চিনতে পেরে ছেলেগুলো বলল- আপনার নেত্রী চলে গেছেন, আপনি যাননি কেন? আমি চুপ করেছিলাম। ওদের একদল আমাকে সেনা, আর একদল জনতার হাতে তুলে দিতে চাইল। তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। একদল আবার আমার সঙ্গে সেলফি তুলল।

“কী মনে করে ওরা আমাদের রাস্তায় নিয়ে গেল। ধরে নিয়েছিলাম, জনতার হাতে তুলে দেবে। ওরা সেটা না করে আমাদের পোশাক বদল করিয়ে, মাস্ক পরিয়ে একটা ট্যাক্সিতে চাপিয়ে দূরে এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চেক করা হচ্ছিল। গাড়ি চেক করতে আসা লোকজনকে ছেলেগুলো বলল- আমাদের চাচা-চাচিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। ছেড়ে দাও। বড় রাস্তা থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী দূরে আর এক জায়গায় চলে যাই।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এরপর তিন মাস দেশেই লুকিয়ে থেকে দেশে আন্দোলন গোছানোর চেষ্টা করছিলেন বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তবে অসুস্থতার কারণে শেষে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

“আমি অসুস্থ। বাইপাস সার্জারি হয়েছে আগেই। অনেক ওষুধ খেতে হয়। এক পর্যায়ে আমার ওষুধ খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ধরা পড়লে ওষুধ খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেত। এদিকে মাথার ওপর ১১২টা খুনের মামলা। একের পর এক নেতা ধরা পড়ছেন। তখন অনেকেই বললেন, দেশে থাকা ঠিক হবে না। এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই।”

সকাল সন্ধ্যা তখন জানতে পেরেছিল, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে মেঘালয়ের তুরা এলাকায় প্রথমে পৌঁছেছিলেন কাদের। এরপর তিনি আসামের গৌহাটিতে গিয়ে ওঠেন।

এখন সরব হওয়ার নেপথ্যে

ভারতে যাওয়ার পর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশেই এতদিন চুপ ছিলেন বলে জানান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এখন মুখ খোলাও তার নির্দেশেই বলে জানান তিনি।

“তিনি (শেখ হাসিনা) আমাকে বলেন- তোমাকে এখন কিছু করতে হবে না, তুমি ভালো করে চিকিৎসা করাও। পারলে মুক্তিযুদ্ধ, সমকালীন রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করো। কখন কী করতে হবে আমি বলে দেব।

“আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কখনও দেখা করার চেষ্টা করিনি। কারণ উনি যেখানে আছেন, সেটা হাই সিকিউরিটি জোন। উনি যদি প্রয়োজন মনে করেন, ঠিক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। উনিই সম্প্রতি আমাকে সক্রিয় হতে বলেছেন।”

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

নিজের ব্যর্থতা মানতে নারাজ ওবায়দুল কাদের তার কাজের মূল্যায়নের ভার দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপরই দিচ্ছেন।

“আমাকে আমার নেত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে কাজ করেছি। জেনারেল সেক্রেটারি হিসাবে আমার ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। আই অ্যাম নট ইমিউনড ফ্রম মিসটেকস। মানুষ মাত্রেই ভুল করে। এমন তো নয় যে সাধারণ সম্পাদক ভুল করেন না।”

তিনি আরও বলেন, “আমি কখনও ছাত্রলীগ, যুবলীগকে অভ্যুত্থান দমন করতে পথে নামতে বলিনি। আমার ভাষণের ভিডিওতে দেখবেন, ছাত্রলীগ কথাটাই আমি উচ্চারণ করিনি।

“আমি কাজ করেছি, চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি, পারসেন্টেজ নিইনি। কমিশনের বিনিময়ে কাউকে পদায়ন করিনি। সেদিক থেকে আমি নিজেরে নির্দোষ বলে দাবি করতে পারি।”

আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকার পরও মানুষের ক্ষোভ বুঝতে না পারার জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন সাবেক মন্ত্রী কাদের।

জুলাই অভ্যুত্থান দমনের জন্য এরই মধ্যে বিচারের কাঠগড়ায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গণহত্যার অভিযোগে দল হিসাবেও আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত