Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

ওড়িশায় সোফিয়ার ইতিহাস

ওড়িশার প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক।
ওড়িশার প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক।
[publishpress_authors_box]

মাত্র ৩০ দিনের প্রস্তুতিতে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন সোফিয়া ফিরদৌস। কংগ্রেসের টিকেটে তিনি রাজ্যের প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক (এমএলএ) হয়েছেন।

এ বছরের শুরুর দিকে সোফিয়া তার বাবা ওড়িশার কটক শহরের কংগ্রেস বিধায়ক মোহাম্মদ মকিমের পুনঃনির্বাচনের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন শুরু হওয়ার মাত্র এক মাস আগে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তারা বাবা প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারান।

মোহাম্মদ মকিম মেট্রো বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি রিয়েল এস্টেট ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ওড়িশা গ্রামীণ আবাসন উন্নয়ন করপোরেশন (ওআরএইচডিসি) ঋণ জালিয়াতির মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর কোনও প্রার্থী না থাকায় কংগ্রেস মকিমের মেয়ে সোফিয়াকেই প্রার্থী করে। কটকের বিজেপি প্রার্থী পূর্ণচন্দ্র মহাপাত্রকে ৮০০১ ভোটে হারিয়ে দেন সোফিয়া।

ওড়িশার প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী নন্দিনী শতপথীও এই আসন থেকেই ১৯৭২ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

৩২ বছর বয়সী সোফিয়া একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ব্যাঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) থেকেও এক্সিকিউটিভ জেনারেল ম্যানেজমেন্টে উচ্চতর ডিগ্রি নেন।

সোফিয়া তার বাবার কোম্পানিতেই একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। ২০২৩ সালে কনফেডারেশন্স অব রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (ক্রেডাই) ভুবনেশ্বর চ্যাপ্টারের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এই সংগঠনের নারী শাখার পূর্ব জোনের সমন্বয়ক হিসেবেও কাজ করেছেন সোফিয়া।

এছাড়া ইন্ডিয়ান গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (সিআইআই) ভুবনেশ্বর চ্যাপ্টারের কো-চেয়ার ও আইএনডব্লিউইসির কোর মেম্বার ছিলেন সোফিয়া। তার স্বামী শেখ মিরাজ উল হকও একজন শিল্পপতি।

এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সোফিয়া অকপটে তার অপ্রত্যাশিতভাবে রাজনীতিতে প্রবেশের কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমি রাজনীতিবিদ নই। আদালতের রায়ে আমার বাবা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারালে আমাদের বাসভবনের সামনে দলের ৪০০-৫০০ জন সমর্থক একটি সমাবেশ ডাকে। কটকে আমার বাবা যে কঠোর পরিশ্রম এবং শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছিলেন, তারা তা স্বীকার করে নিয়ে সর্বসম্মতভাবে আমাকেই ভোটের মাঠে নামতে সমর্থন করেন।”

তবে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে সোফিয়া তার বাবার নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়েছিলেন। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়া থেকে শুরু করে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার চালানোর পাশাপাশি কংগ্রেসকর্মীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন।

এতে দলের তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে তার পরিচিতি ও সখ্য গড়ে উঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সবাই তাকে প্রার্থী হিসেবে পছন্দ করেছিল। এছাড়া দলের জ্যেষ্ঠ নেতা গিরিবালা বেহেরাও ফোন করে তাকে সমর্থন করেন।

নির্বাচনের আগে প্রচারাভিযানের জন্য মাত্র ৩০ দিন সময় থাকায় সোফিয়া কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

তিনি তার প্রাথমিক আশঙ্কার কথা স্মরণ করে বলেন, “আমার কাছে মাত্র এক মাস সময় ছিল। আমার প্রধান ভয় ছিল, লোকে বাবার মতোই আমার ওপর আস্থা রাখতে পারবে কি না? তারা আমার বাবাকে ভালোভাবে চিনেছে, কারণ তিনি তৃণমূলে অনেক কাজ করেছেন। তিনি ২০১৪ সালে হারলেও ২০১৯ সালে বিজয়ী হন। তাহলে মানুষ কেন আমাকে এত তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করবে এবং ভোট দেবে?”

সোফিয়া বলেন, “প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আমি প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং এরপর বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রচরণা চালিয়েছি। আমার হাতে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য মাত্র এক মাস সময় ছিল, তাই আমি কেবল ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারে মনোনিবেশ করেছি। আর এই কৌশলটিই কাজে লেগেছে। আমি মনে করি আমার বাবার ভালো কাজের জন্যই লোকে আমাকে ভোট দিয়েছে।”

ওড়িশা বিধানসভার অন্যতম কনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে সোফিয়া ফিরদৌস এখন বিজেপি ও নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলের (বিজেডি) পাকা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন।

তিনি বলেন, “আমি রোমাঞ্চিত। আমি ২০১৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলাম। তার ২-৩ বছরে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটির (রেরা) যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমি অনেক পড়াশোনা করি এবং রেরা-তে উপস্থাপনা শুরু করি। এভাবেই আমি সরকারের নীতি বিষয়ক পরামর্শদাতা হয়ে উঠি। তারপরও আমার সিনিয়ররা, যাদের বয়স ৫০ ও ৬০ এর কোঠায়, তারা বলবে ‘সে এখনো বাচ্চা মানুষ’। আমি এটিকে একটি ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছি।”

ওড়িশার ‘আয়রন লেডি’ খ্যাত সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং কটকের সাবেক এমএলএ নন্দিনী শতপথীর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সোফিয়া তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান।

কটকের পয়নিষ্কাশন ও মশার সমস্যা সমাধান করার পাশাপাশি তিনি ভারতের অলঙ্কার শিল্পের রাজধানী হিসেবে কটক শহরের মর্যাদা বাড়ানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষাও পোষণ করেন।

‘মুসলিম বিধায়ক’ হিসেবে তার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সোফিয়া ফিরদৌস বলেন, “আমি একজন ওড়িয়া, একজন ভারতীয় এবং প্রথমে একজন নারী। রিয়েল এস্টেট খাতে আমার কর্ম ও পেশাগত জীবনজুড়ে আমি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং রাজনীতিতেও তা করে যাব। কিন্তু আমি কখনও নিজেকে মুসলিম রাজনীতিবিদ হিসেবে ভাবিনি।”

ভারতে এবার জাতীয় (লোকসভা) নির্বাচনের পাশাপাশি চারটি রাজ্যেও বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশা তার একটি।

রাজ্যটিতে এবার চমক দেখিয়েছে বিজেপি, লোকসভার ২১ আসনের মধ্যে ২০টিতেই জয় পেয়েছে দলটি। কংগ্রেস পেয়েছে ১টি আসন। আর বিজেডি একটি আসনও পায়নি।

লোকসভার পাশাপাশি বিজেপি ১৪৭ আসনের ওড়িশা বিধানসভার ৭৮টি আসনে জিতেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।

বিজু জনতা দল বা বিজেডি ৫১টি এবং কংগ্রেস ১৪টিতে জিতেছে। অন্যরা জয় পেয়েছে চারটিতে। কংগ্রেস যে ১৪টিতে জয় পেয়েছে, তার মধ্যে বড়বাড়ি-কটক আসনটি অন্যতম। এই বড়বাড়ি-কটকেরই এমএলএ হয়েছেন সোফিয়া।

এবার রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের মধ্য দিয়ে ওড়িশায় বিজু জনতা দলের (বিজেডি) নেতা নবীন পাটনায়েকের ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত