আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাকালে যে পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে তা বাংলাদেশের মানুষের দেড় বছরের আয়ের সমান বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। এই পরিমাণ অর্থ চুরিকে পুকুরচুরি নয়, সাগরচুরি বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ঢাকার পল্টনে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গত ১৫ বছরে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এটা করেছে গুটিকয়েক মানুষ। হিসেব করে দেখা গেছে এই টাকাটা আমাদের দেশের সমস্ত স্তরের মানুষের দেড় বছরের মোট আয়ের সমান। আর এ ধরনের একটি সাগরচুরি করতে গিয়ে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে।”
এই অর্থ লুটের উদারহরণ হিসেবে টিসিবির নাম উল্লেখ করেন তিনি। উপদেষ্টা জানান, সারাদেশে টিসিবির অফিস সংখ্যা ১৬টি, ড্রাইভার-পিয়নসহ জনবল মাত্র ১৪২ জন।
তিনি বলেন, “অথচ প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটিকে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দেয়। সংস্থাটির উপকারভোগী বাছাই ও ডিলার নিয়োগেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র।”
দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মতো কৃষি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও ধ্বংস করা হয়েছে অভিযোগ করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনের তথ্য সরবরাহ করে সেগুলোতে অসামঞ্জস্যতা থাকায়, আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার জরুরি।”
সয়াবিন তেলের দাম বাস্তবতা মেনে বাড়াতে হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “এটা না করলে বাজারে ব্যাপক সংকট তৈরি হতো, পণ্যের ঘাটতি বেড়ে যেত। সিন্ডিকেট নিয়ে কথা হচ্ছে। তেল-চিনির বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন উৎপাদক বা আমদানিকারক রয়েছে। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ যিনি, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। তিনি বাজারের একটা বৃহৎ অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। পালিয়ে যাওয়ার কারণে সরবরাহে যে ঘাটতি হয়েছে, সে তুলনায় বাজারে প্রভাবটা টের পাওয়া যাচ্ছে না।”
আসন্ন রমজানে খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, “খেজুর, ছোলা, ডালসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। যদিও বাজারে আলু নিয়ে আমাদের কিছু ব্যর্থতা রয়েছে। এটা মেনে নিয়ে আমরা আগামী বছরের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
সরকার পণ্যের দাম বেধে দিতে চায় না বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বরং আমরা এমন একটা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে চাই, যেখানে সব পণ্যের সরবরাহ থাকবে স্বাভাবিক এবং বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে এবং বাজারই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে। এজন্য আমরা প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি।”
অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, “আমাদের চাষের জমি কম। একারণে লক্ষ্য এখন ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য উৎপাদন করা। যেমন, রাশিয়া, ইউক্রেন শস্য উৎপাদন করবে, কারণ তাদের জায়গা আছে। আমাদের জায়গা কম, তাই থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো ভ্যালু অ্যাডেড শস্য উৎপাদন করতে হবে। একই সঙ্গে ডিম, মুরগি ও মাছের মতো পণ্যগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি যাতে এগুলো সহজলভ্য করা যায়, সেজন্য পোল্ট্রি খাদ্যের সরবরাহ বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “বাজার এখন অনেকটাই নিম্নমুখী। কিন্তু সেটার রিফ্লেকশন রিপোর্টে আমরা দেখি না। এক ধরনের জেনারালাইজ করে সব কথা বলা হয়।
“আমরা চাই আপনারা সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন। যাতে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটি সহজ হয়ে যায়।”
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে পাঁচজন, অনলাইন পত্রিকা ক্যাটাগরিতে দুইজন এবং টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে তিনজন সাংবাদিক এই পুরস্কার পেয়েছেন।
‘প্রিন্ট’ ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম হয়েছেন- আমাদের সময়ের সিনিয়র রিপোর্টার জিয়াদুল ইসলাম ও সময়ের আলোর বিজনেস এডিটর আলমগীর হোসেন। এ ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের দুই বিশেষ প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন হারুন ও এফএইচএম হুমায়ূন কবির। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।
অনলাইন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন জাগোনিউজ২৪ ডট কমের চিফ রিপোর্টার ইব্রাহীম হুসাইন অভি এবং দ্বিতীয় হয়েছেন যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মিজানুর রহমান চৌধুরী।
এছাড়া, টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার তৌহিদ হোসেন পাপন এবং দ্বিতীয় হয়েছেন যৌথভাবে একুশে টিভির সিনিয়র রিপোর্টার তৌহিদুর রহমান এবং ইনডিপেনডেন্ট টিভির সিনিয়র রিপোর্টার হরিপদ সাহা।