মহাতারকা থেকে মৃত নক্ষত্রে পরিণত হয়েছেন চলচ্চিত্র জগতে এমন তারকার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। কেউ কেউ তো আবার বেমালুম গায়েবই হয়ে গেছেন। এদের সবারই শুরুটা হয় বক্স অফিসে একটি হিট সিনেমা দিয়ে। তারপর কী যেন হয়! যেন ফ্লপের নেশায় পেয়ে বসে তাদের!
হলিউড-বলিউড মিলিয়ে এই পাঁচ ‘ওয়ান হিট ওয়ান্ডার’ নিয়ে এই লেখাটি।
এডওয়ার্ড ফারলং
মাত্র ১২ বছর বয়সেই পেয়েছিলেন দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। আর এই খ্যাতি ধরা দিয়েছিল জেমস ক্যামেরুনের ‘টারমিনেটর টু: জ়াজমেন্ট ডে’ চলচ্চিত্রটির জন্য। অ্যাডওয়ার্ড ফারলং এতে অভিনয় করেছিলেন গল্পের অন্যতম মূল চরিত্র জন কনর এর ভূমিকায়। ১৯৯১ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি জিতে নেয় অস্কার। কিন্তু এরপর ফারলং এর কোন সিনেমাই আর সাফল্যের মুখ দেখেনি।
ফারলং-এর কী হয়েছিলো ?
ছোটবেলা থেকেই ফারলং এর ব্যক্তিগত জীবন ছিল নানা সমস্যায় জেরবার। বড় হয়েছেন এক আত্মীয়ার কাছে। আর বড় বেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন ভয়াবহ নেশায়। হেরোইন আর কোকেনে তো অভ্যস্ত ছিলেনই, সঙ্গে যুক্ত হয় অ্যালকোহল আসক্তি। এমন এলোমেলো জীবনেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন অভিনয়। কিন্তু শুরুর সেই সাফল্য আর কোনদিনও ধরা দেয়নি।
পল হোগান
হলিউড সিনেমায় অভিনয় করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বহু তারকা শিল্পী। কিন্তু সেই আশির দশকে অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা পল হোগান নিজ দেশে নির্মিত সিনেমায় কাজ করেই পেয়েছিলেন আকাশছোঁয়া সাফল্য।
১৯৮৬-তে মুক্তি পাওয়া অস্ট্রেলিয়ান সিনেমা ‘ক্রোকোডাইল ডান্ডি’, ব্যবসায় সফল ছিল এমনকি হলিউডেও। কিন্তু সিনেমায় মাইক ড্যান্ডি চরিত্রে অভিনয় করা পল হোগান তার বাকি জীবনে এই সাফল্যের মুখ আর দেখেননি।
ধারণা করা হয়, ‘ক্রোকোডাইল ডান্ডি’র মিক ডান্ডি চরিত্র থেকে তিনি আর বের হতে পারেননি। সমালোচকরা মনে করেন, অভিনয়ে যথেষ্ট মুন্সিয়ানার অভাব ছিল তার।
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান স্টোরিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে সে কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন পল। নিজের ব্যাপারে ‘নট আ গুড অ্যাক্টর’- বলে অভিমত দিয়েছেন সেই সাক্ষাৎকারে।
জেনিফার গ্রে
‘ডার্টি ড্যান্স’ সিনেমার সাফল্য জ়েনিফার গ্রে-র প্রতি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু প্রত্যাশা আর সাফল্যে এক বিন্দুতে মেলেনা আর কোনদিনও। এই সিনেমা তাকে পাইয়ে দেয় গোল্ডেন গ্লোব নমিনিশেন।
অস্কারজয়ী অভিনেতার (জোয়েল গ্রে) কন্যা হওয়ায় তাকে ভাবা হতো ‘হলিউড প্রিন্সেস’। সে প্রত্যাশার চাপেই হয়তো জেনিফার ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তারকা খ্যাতি পাওয়ার পর পরই জেনিফার তার নাকে অস্ত্রোপচার করান। নিজের নাকের আকৃতি নিয়ে খুশি না থাকা জেনিফার ভেবেছিলেন অস্ত্রোপচার করালে হয়তো পেয়ে যাবেন তার কাঙ্ক্ষিত চেহারা। কিন্তু হলো শাপে বর। অস্ত্রপচারের পরে পর্দায় তাকে দেখে মোটেও খুশি হতে পারেনি শুভানুধ্যায়ীরা।
ধারণা করা হয়, জেনিফারের জন্য এই অস্ত্রপচারই কাল হয় । তার অভিনীত আর কোনও সিনেমাই পায়নি ‘হিট’ তকমা।
রাহুল রায়
নব্বই দশকের এক তুমুল জনপ্রিয় নাম রাহুল রায়। বাংলাদেশের মফস্বলের স্টেশনারি দোকাগুলোতেও রাহুলের পোস্টার কেনার ধুম ছিল একসময়। এমনকি চুলের ছাটেও ‘রাহুল কাট’ ছিল খুবই জনপ্রিয়।
মহেশ ভাটের ‘আশিকি’ (১৯৯০) দিয়েই রাহুল উপমহাদেশের কোটি তরুণীর হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই এক সিনেমাই। ‘আশিকি’-তে ঈর্ষণীয় সাফল্যের পর তাকে বলিউডের ‘নেক্সট বিগ থিং’ মনে করা হচ্ছিল। সেই রাহুল এরপর জন্ম দিলেন একের পর এক ফ্লপ সিনেমা। ‘আশিকি’র পর তাকে ‘জানাম’ এবং ‘সাপ্নে সাজান কি’ এর মতো সিনেমায় দেখা যায়, যেগুলোর কোনটাই বলিউডে ব্যবসা করতে পারেনি।
এর কারণ হিসেবে চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহেশ ভাটের একটি সিনেমায় সাফল্য পাওয়ার পর রাহুল একই ঘরানার সিনেমাতেই বার বার অভিনয় করছিলেন। যেগুলোতে ছিলনা ভিন্নতা। পাশাপাশি চকলেট বয় ইমেজ থেকেও রাহুল বের হতে পারছিলেন না একেবারেই।
সম্প্রতি, ভারতের টেলিভিশন হোস্ট সিদ্ধার্ত কান্নানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাহুল অবশ্য জানালেন ভিন্ন কিছু। রাহুল বলেন, “সিনেমার চরিত্র সম্পর্কে আমাকে যা বলা হতো, শুটিংয়ে গিয়ে বুঝতাম আসলে ব্যাপারটা ভিন্ন। আমি যেমন চাইছি তার কোন কিছুই আর হতো না।” আসলে পরিচালকরা ‘আশিকি’র সেই রাহুলকেই চাইতো। আর এক জিনিস দর্শক বারবার দেখবে কেন?
গায়ত্রী জোশী
প্রথম ছবিতে ‘বলিউডের কিং অব রোমান্স’ শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ কতটুকু এবং কয়জনের ভাগ্যেই বা ঘটে! গায়ত্রী যোশিকে স্বদেশ ছবিতে পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর এ সুযোগ দিয়েছিলেন। স্বদেশ সিনেমায় ভালো অভিনয়ের পরও প্রযোজকদের কাছ থেকে এরপরে ভালো কোনও সিনেমার প্রস্তাব পাননি।কিন্তু এটাই কি একমাত্র কারণ?
গায়ত্রীকে বলিউডে আর দেখা না যাওয়ার কারণ তিনি নিজেই ভারতীয় গণমাধ্যমে পেছনের আরেকটি কারণ জানিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে গায়ত্রী বলেন, “স্বামী ভিকাশ ওবেরয়ের সাথে পরিচয়ের পর মনে হতে থাকে বলিউডে কাজ করার চাইতে সংসারী হওয়াই আমার জন্য বেশি জরুরি।”
প্রসঙ্গত, রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ী ভিকাশ ওবেরয় ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের একজন, যার সম্পদের পরিমাণ ৪৮০ কোটি ডলার সমপরিমাণ বলে ফর্বস ম্যাগাজিন জানাচ্ছে।