গত ১০ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ২০ লাখ টন, তারপরও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় আমদানি করতে হয়।
এবারও ভারত থেকে আমদানির খবর শোনা গেছে। সেই খবরে কৃষকরা পেঁয়াজ আগেভাগে তুলে হাটে নিয়ে আসছেন। তাদের শঙ্কা, আমদানির পেঁয়াজ ঢুকলে যদি দেশের বাজারে দাম কমে যায়।
হালি (প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা থেকে চাষ) পেঁয়াজ তোলার মৌসুম সবে শুরু হলেও তা এখনও সংরক্ষণের উপযোগী হয়নি। কিন্তু হাটে বেশি পেঁয়াজ আসায় দাম গেছে কমে।
যদিও এর আগে মুড়িকাটা (কন্দ থেকে চাষ) পেঁয়াজে ভালো দাম পেয়েছিলেন চাষিরা।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন প্রায় আট বছর আগে। সরকারি চাকরি না পাওয়ার পর মনোযোগ দেন চাষবাসে।
প্রতি বছর পারিবারিক জমিগুলোয় পেঁয়াজ, ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেন আবু বক্কর। এই মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ থেকে আয় করেছেন ১০ লাখ টাকা।
আবু বক্কর জানান, বিঘাপ্রতি ফলন পেয়েছেন ৫০ মণ করে। সেগুলো প্রতি মণ ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
নিজেদের খাওয়ার জন্য আড়াই বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ করেছেন আবু বক্কর। সেগুলো তুলবেন আরও অন্তত তিন সপ্তাহ পর।
পাবনার বেড়া উপজেলার কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, “হালি পেঁয়াজ যখন জমি থেকে ওঠে, তখন দাম একটু কম থাকে। এটা স্বাভাবিক। এবার নতুন যেটা হয়েছে, আগে আমরা মুড়িকাটা পেঁয়াজে খুব কম দাম পেতাম। কিন্তু এ বছর প্রতি কেজিতে আমরা পেয়েছি ১০০-৯০ টাকা। যেখানে প্রতি কেজিতে খরচ ছিল সর্বোচ্চ ২০ টাকা। যাদের জমি লিজ নেওয়া, তাদের খরচ আরও একটু বেশি।”
বাংলাদেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের শীর্ষ জেলা পাবনা। সেখানে সম্প্রতি কৃষিপণ্যটির অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজের মণ ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা, তা ১৪০০ টাকায়ও নেমে এসেছিল সম্প্রতি। তবে গত তিন-চার দিন দাম কিছুটা বেড়ে এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় কেনা-বেচা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি কেজি পেঁয়াজের গড় উৎপাদন খরচ ২০ টাকার মতো।
তাই দরপতন দেখে পাবনার অনেক চাষি আগে ভাগে পেঁয়াজ তুলে বাজারে নিয়ে আসছেন।
পাবনা সদর উপজেলার চাষি মোক্তার হোসেন ৫ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। রমজানের আগে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩,৩০০ টাকা দামে বিক্রি করেছিলেন। গত সোমবার বিক্রি করেন ১,৬০০ টাকায়।
মোক্তার বলেন, “মুড়িকাটা পেঁয়াজে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছে। কিন্তু হালি পেঁয়াজের সময় দরপতন শুরু হয়েছে। এই দামে আমাদের খরচ পোষাচ্ছে না। যদিও জানি, কিছু দিন পেঁয়াজ রেখে দিলে দাম বাড়বে। কিন্তু এই সময় আমাদের অনেক খরচ থাকে বলেই তো হাটে পেঁয়াজ আনা হয়।”
পাবনা সদরের দুবলিয়া এলাকার পেঁয়াজ চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, “সম্প্রতি ভারত থেকে আমদানির খবর শোনা গেছে। খবর পাওয়ার পর থেকে কৃষকরা পেঁয়াজ আগেভাগে উঠিয়ে বাজার-হাটে নিয়ে আসছেন। হাটে বেশি পেঁয়াজ নিয়ে আসায় দামও কমে গেছে।”
কৃষকরা অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলে ফেলায় তা মোট ফলনে ঘাটতি তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
তাদের এই ধারণার সঙ্গে অনেকটাই সায় দিয়েছেন পাবনা জেলার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শামসুর রহমান।
তিনি বলেন, “লাভের আশায় অনেক চাষি অপরিপক্ক পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। এটা জেলার মোট উৎপাদনের ওপর অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। এতে আমাদের চাহিদা ও জোগানের হিসাবটা একটু এলোমেলো হবে।”
কী পরিমাণ ফারাক হতে পারে- প্রশ্নে শাসুর বলেন, “এখনও সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না।”
দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬ লাখ টনের কিছু বেশি বলে হিসাব দেখায় মসলা গবেষণা কেন্দ্র, যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে তা আরও কয়েক লাখ টন বেশি। দেশে উৎপাদন ৩২ লাখ টন হলেও তার অনেকটা নষ্ট হয়ে থাকে ২৩ লাখ টনের মতো। ফলে ৩ লাখ টনের ঘাটতি মেটাতে আমদানি করতে হয়, যার অধিকাংশ আসে ভারত থেকে।
মুড়িকাটা পেঁয়াজে পানির ভাগ বেশি বলে তা সংরক্ষণ করা যায় না। সংরক্ষণ করা হয় হালি পেঁয়াজ। যা পরে বছরজুড়ে বাজারে সরবরাহ হয়।
কিন্তু এবার অপরিপক্ক পেঁয়াজ কৃষকরা মাঠ থেকে তোলায় তা নিয়ে আগ্রহী না আড়তদাররা। কেননা, এই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে লোকসানের ঝুঁকি থাকে।
পাবনার করমজা চতুরহাটের আড়তদার সুজাউদ্দিন সুজন বলেন, রমজানের আগে হাটে পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল। তবে সেই পেঁয়াজগুলো কোনোটাই মজুত করার মতো না।
“কিনব কী? দাম বেশি পাওয়ায় এবার অধিকাংশ কৃষক অপরিপক্ক পেঁয়াজ জমি থেকে তুলেছেন। এগুলো মজুত রাখা যাবে না।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব দিচ্ছে, রোজার মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে ৩ লাখ টন হয়।
এবার রোজার আগে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। তবে রোজা শুরুর পর পাবনার বাজারে দেখা দেয় দরপতন।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদার চার ভাগের এক ভাগের জোগান দেয় পাবনা। তার ভেতরে সাঁথিয়া ও সুজানগরে চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। সে কারণে পেঁয়াজের বড় মোকামগুলো এই দুই উপজেলায়।
সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাট পেঁয়াজের বড় একটি মোকাম। এখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এই হাটে রমজানের আগে গড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০০০ থেকে ৩২০০ টাকা প্রতি মণ। সাড়ে ৩ হাজার টাকাও উঠেছিল দাম।
রমজান শুরু হওয়ার পর সেই পেঁয়াজের দাম নেমে আসে ১৪০০ টাকা মণে। গত ১৯ মার্চ এই হাটে পেঁয়াজের দাম ছিল ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ।
একই দিন পাবনার হাজিরহাটে ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতি মণ ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গত ১৭ মার্চ আতাইকুলা, পাবনার সদরের হাটগুলোয় প্রতি মণ পেঁয়াজ ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে ২০ মার্চে দাম উঠতে থাকে। জেলা সদরের দুবলিয়া হাটে পেঁয়াজ প্রতি মণ বিক্রি হয় ২০০০ টাকায়। আর সবচেয়ে ভালোটির দাম ছিল ২৫০০ টাকা মণ।
করমজার আড়তদার সুজন বলেন, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) থেকে এ হাটে পেঁয়াজের দাম বাড়া শুরু করেছে। তবে যারা মজুদ করে, তারা এখনও অল্প করে কিনছে। কারণ ভারতের পেঁয়াজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ৩১ মার্চ উঠলে এরপর আমদানি শুরু হবে, তখন পরিস্থিতি দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে ৩১ বছর বয়সী পেঁয়াজ চাষি আবু বক্কর বলছেন, আমদানি হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পেঁয়াজে লোকসান হয় না পাবনার চাষিদের।
গত বছর ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছিল তার, তার জন্য বৃষ্টিকে কারণ হিসাবে দেখান তিনি।
পেঁয়াজ চাষে খরচ কত
কৃষকরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয় ২,৫০০ টাকা, বীজে ৫,০০০ টাকা, সার ও কীটনাশকে ১১,০০০ টাকা এবং শ্রমিক মজুরিতে ১৩,০০০ টাকা। আর জমি ইজারা নিলে প্রতি বিঘায় বাড়তি খরচ হবে অন্তত ২০,০০০ টাকা।
অবশ্য এসব খরচ জমি ও এলাকাভেদে কিছু হেরফের হয়। কারণ কৃষি ব্যয় প্রতিনিয়ত উঠানামা করছে।
এসব বিবেচনায় প্রতি মণ হালি পেঁয়াজের দাম ২,০০০ টাকা হলে হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হয় বলে মনে করেন সাঁথিয়া উপজেলার গহের আলী।
এই পেঁয়াজ চাষি বলেন, “অন্য চাষিদের দেখে জমি থেকে পেঁয়াজ তুলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দাম কম দেখে তুলিনি। এখন দাম উঠতেছে। কিন্তু আমদানি হলে আবার কমে যেতে পারে। তবে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণ ২,০০০ টাকার উপরে থাকলে আমাদের লোকসান হবে না।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের হিসাব বলছে, পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ১৯.২৪ টাকা। একর প্রতি মোট উৎপাদন খরচ ৯১ হাজার ৯৬৮ টাকা। তাতে প্রতি একরে কৃষকের নিট লাভ থাকে ২৭ হাজার ৫৩২ টাকা।
দেশে ১৭-১৮ জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) নিজস্ব উদ্ভাবিত ৬টি জাত রয়েছে। পাবনায় সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় তাহিরপুরী জাতের পেঁয়াজ।
এছাড়া লালতীর কিং, বারি-১, ফরিদপুরী, কলসনগর, হাইব্রিড লালতীর জাতগুলোও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আবাদ হয়।
আমদানির যে প্রভাব
মূলত আমদানির খবরেই পেঁয়াজের দামের হেরফের হচ্ছে।
পাবনা সদরের দুবলিয়া এলাকার চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, “অল্প করে পেঁয়াজ আমদানি চালু থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকে। হুটহাট গুজব ওঠে না, আর এবারের মতো হঠাৎ করে দাম পড়ে যেত না। গুজব ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর।”
পাবনা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, “কৃষকদের মূল্যায়ন করতে গত বছর পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ ছিল।
“আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছিলাম, মার্চ থেকে জুন- বছরের এই চার মাস আমদানি যেন বন্ধ থাকে। এতে কৃষকরা ভালো দাম পাবে। আবার দেশে যখন পেঁয়াজের জোগান কিছুটা কমবে, তখন আমদানি করা যাবে।”
আমদানির বিষয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “এ বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখে। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।”
বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের ৭৫-৮০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। বাকিটার বেশিরভাগ আসে চীন থেকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক তথ্যে দেখা যায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২১ লাখ টন স্থানীয় উৎপাদনের বিপরীতে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল ৭ লাখ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে ৩৩ লাখ টন স্থানীয় উৎপাদনের বিপরীতে আমদানি হয় সাড়ে ৫ লাখ টন।
এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বাধিক ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। সেবার স্থানীয় উৎপাদন ছিল ২৩ লাখ টন।
পাবনায় কমেছে আবাদ
দেশে সার্বিকভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়লেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া অঞ্চলে গত তিন বছরের পরিসংখ্যান বলছে, পাবনায় পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন কিছুটা কমেছে।
পেঁয়াজ রবি ও খরিপ মৌসুমে চাষ করা যায়। খরিপ মৌসুমে চাষের জন্য জুলাই-আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) ও রবি মৌসুমে চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ (মাঘ-ফাল্গুন) মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরের রবি মৌসুমে পাবনায় ৫৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর বিপরীতে ৫৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আবাদে উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার ১৪৬ টন পেঁয়াজ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৩ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছিল ৫২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনও ৬২ হাজার ২১৫ টন কমে হয়েছিল ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৮ টন।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ দশমিক ১১ শতাংশ অর্জন হয়েছে। এবার আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৬০৮ টন। আর হালি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৪৪ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে। গত ১৯ মার্চ পর্যন্ত ৪৩ হাজার ১৭৭ টন পেঁয়াজ তোলা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে ১.৮০ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল, তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে হয় ২.৫৩ লাখ হেক্টর।
২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বাধিক উৎপাদন ছিল পাবনা জেলায় ৭.১৯ লাখ টন। তার পরের অবস্থানে ফরিদপুর জেলা ৫.৯৪ টন নিয়ে। রাজবাড়ি ও রাজশাহীর প্রতিটি জেলায় ৩ লাখ টনের বেশি উৎপাদন হয়।
পেঁয়াজ সংরক্ষণ
আলুর মতো হিমাগারে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। দেশে এখনও পেঁয়াজ সংরক্ষণে সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার হয়। পাবনার কৃষকরা প্রত্যেকে ঘরগুলোর সিলিংয়ের উপরে বাঁশ দিয়ে মাচার মতো তৈরি করে রাখেন। কৃষকদের সামর্থ্য অনুযায়ী সেখানে ১০০-৫০০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়।
পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণে ‘কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ২০২৩ সালের ২৩ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্মিত মডেল ঘর উদ্বোধন করেন তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
২০২১ সালের জুলাই থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৬ সালের জুন মাসে এর বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা- এই সাত জেলার ১২টি উপজেলায় ৩০০টি ঘর নির্মাণ করা হবে। গত বছর মোট ৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ২৫০-৩০০ মণ পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করা যাবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
পাবনার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, মডেল ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সাঁথিয়া উপজেলায় ৩৫টি, চাটমোহরে ১৫টি ও সুজানগরে ৩৫টি মডেল ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের প্রতিটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া আছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। প্রতিটি মডেল ঘর থেকে ১০ জন করে কৃষক সুবিধা পাবেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে ৩০০ মণ পর্যন্ত।