Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

অনলাইনে কেনাকেটার নেশা কি মানসিক রোগ

online-shopping-220524
[publishpress_authors_box]

ফেইসবুকে স্ক্রল করলেই এটা-সেটা বিক্রির বিজ্ঞাপন চলছেই। সঙ্গে থাকে মনোলোভা অফার! উপরন্তু জামা-শাড়ির প্রোমোটাররা লাইভ ভিডিওতে বারবার তাগাদা দেন, এখনই অর্ডার না করলে স্টক ফুরিয়ে যাবে!

এরপর কি আর নিজেকে ধরে রাখা যায়?

ঘরে বসে অর্ডার করলেই পাওয়া যায় বলে খুব বেশি না ভেবে ইনবক্সে অর্ডার করে দিচ্ছেন তো! মাঝে মাঝে ভীষণ ‘কম দামে’ মিলছে বলে কখনও জামা-শাড়ি, কখনও গহনা, কখনও ঘর সাজানোর আইটেম কেনা আর থামছেই না।

ক্যাশ অন ডেলিভারি, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডে কেনাকাটা করতে করতে মাস শেষে বুঝতে পারছেন খরচটা বেহিসেবি হয়ে গেছে; এখন নিজেকে সামলে রাখার উপায় কী?

বিশেষজ্ঞদের দেওয়া সেই পরামর্শ নিয়ে এসেছে সকাল সন্ধ্যা।       

এক সময় কেনাকাটা করতে হলে, বাড়ি থেকে দূরে কোনো শপিং মলে যেতে হতো। এজন্য ছুটির দিনের অপেক্ষা থাকতো সবার। সেই যুগ গত হয়ে অনলাইন দিয়েছে রাতদুপুরেও কেনাকাটা করার সুযোগ।

তাই তো অনলাইনে কেনাকাটা এক রকম আসক্তি হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে; এমন ক্রেতাকে ইংরেজিতে বলে ‘শপাহলিক’।

এর অন্য নাম হলো ‘কমপালসিভ বাইং ডিজওর্ডার’ বা অনিওম্যানিয়া, বললেন গুরুগ্রামের আরটেমিস হসপিটালের ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট অংকুর সিং কাপুর।

এই রোগে আক্রান্তরা পকেটের হিসাব মেলাতে পারেন না কখনও; মাস শেষে তাই ধারদেনাতে ডুবে যান। ফলে সম্পর্ক খারাপ হয় বাড়ির লোকের সঙ্গে। সবমিলিয়ে জীবনে ছন্দপতন ঘটে।

কেন অনলাইন কেনাকাটায় আসক্তি হয়

“বাড়িতে প্যাকেট আসার পর ওটার মোড়ক খোলার আনন্দে ডোপামিন নিঃসৃত হয় শরীরে; এরপর ক্রেতার মনে আরও কেনার বাসনা জাগে।”

মুম্বাই শহরের একজন মনোবিদ আলিশা লালিজি অনলাইন কেনাকেটায় আসক্তির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবেই।

এর সঙ্গে আরও বিষদে জানালেন ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রেজিওনের একজন সাইকিয়াট্রি কনসালটেন্ট সরস প্রসাদ।

মানসিক চাপ, অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে কেনাকাটায় ঝুঁকে পড়েন। এতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও তারা একাকীত্ব ও দুঃখ ভুলে থাকতে পারেন।  

প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়াতে অনলাইনে বিক্রেতাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এদের ভিডিও বা ছবি পোস্টে অনেক মন্তব্য থাকে। এসব দেখে ক্রেতারা প্রলুব্ধ হন কিছু একটা কিনে ফেলার।

অংকুর সিং কাপুর বলছেন, অনলাইন কেনাকাটায় বেহিসাবি হয়ে যাওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

এ ধরনের ক্রেতার কাছের মানুষেরা এতে ধীরে ধীরে বিরক্ত হয়ে উঠতে পারে। অনেকেই এমন ক্রেতাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেও মনে করতে পারে।

আর বেহিসাবি হয়ে ওঠার কারণে বাড়বে ঋণ, তাতে করে আপনার উপর থেকে ভরসা উঠে যাবে অনেকের।

কেনাকাটার বাতিক সারবে কীভাবে?

প্রথমেই মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিতে হবে। ফেইসবুকে ও অনলাইনে কেনাকাটার লিংকগুলো এড়িয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে ব্যায়াম, বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে।      

মাসে কেনাকেটার কতটুকু খরচ হবে তা নির্দিষ্ট বাজেট করে নিতে হবে; এসব কেনাকাটায় থাকবে শুধু দরকারি পণ্য।

ফোনে কেনাকাটার বিভিন্ন অ্যাপ থাকলে তা আজই মুছে ফেলুন। যদি প্রোমোশনাল অফারে আপনার ইমেইল ভরে যেতে থাকে, সেসবও আনসাবস্ক্রাইব করে ফেলুন।  

কখনও যদি মনে হয় নিজেকে বেঁধে রাখতে পারছেন না কেনাকাটার প্রলোভন থেকে তাহলে আর দেরি না করে একজন থেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে।  

মাসের শেষে খরচের খাতা নিয়ে বসুন। হিসাব করে দেখুন না কিনলেও হতো এমন কী কী খরচ করেছেন এবার।

সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, নিজের মনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। এতে করে আপনার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সব সময়। ফলে কিছু বুঝে ওঠার আগে অনলাইনে রাজ্যের পণ্য কেনার বাজে স্বভাব থেকে সরে আসতে বেগ পেতে হবে না আর।    

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত