Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

১০ দিনে চীন থেকে চট্টগ্রামে পণ্য আনার সুযোগ

SS-msc-SHANGHAI-CHATTOGRAM090724-1536x864
Picture of আসিফ সিদ্দিকী

আসিফ সিদ্দিকী

সাগরপথে চীন থেকে বাংলাদেশে কন্টেইনারে পণ্য পরিবহনে নতুন করে দুটি বিদেশি শিপিং কোম্পানি যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ড্যানিশ কোম্পানি মেয়ারস্ক লাইন জুলাইয়ে নতুন একটি জাহাজ যুক্ত করেছে তাদের বহরে। আরেক কোম্পানি সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইন (পিআইএল) আগস্টের শেষে তাদের নতুন একটি সার্ভিস চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এই দুটি যোগ হলে চীন-চট্টগ্রাম সমুদ্রপথে প্রতি সপ্তাহে ১০টি কন্টেইনার জাহাজ পণ্য পরিবহন করবে।

পিআইএল যে সার্ভিসটি চালু করতে যাচ্ছে, তাতে চীনের নিংবো বা সাংহাই সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ১০ দিন। এই চীন-চট্টগ্রাম রুটে অন্য যেসব কোম্পানির জাহাজসেবা আছে, তাদের সময় লাগছে সর্বনিম্ন ১২ দিন। ফলে পিআইএলের সার্ভিসটি হবে দ্রুততম। কারণ, চীন থেকে চট্টগ্রামে আসার পথে অন্য সার্ভিসগুলো হয় সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর কিংবা মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বা তানজুম পেলিপাস বন্দরে থেমে চট্টগ্রাম আসে। কিন্তু পিআইএল সার্ভিসটি মাঝপথে কোথাও থামবে না।

দেশে মোট আমদানি পণ্যের ২৫ শতাংশ আসে চীন থেকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। এই আমদানির প্রায় পুরোটাই আসে সমুদ্রপথে জাহাজে। পিআইএলের সার্ভিসটি চালু হলে আমদানিপণ্য চীন থেকে দেশে আনতে বাড়তি সুবিধা ভোগ করবেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা। কারণ, এসব পণ্য উৎপাদনের বেশিরভাগ কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আসে চীন থেকে।

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্বের চারটি বৃহৎ শিপিং কোম্পানি চীনের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন করে আসছিল। মূলত বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে পণ্য পরিবহনে নতুন নতুন কোম্পানি জাহাজসেবা চালু করছিল। এর মধ্যে হংকংভিত্তিক এসআইটিসি সপ্তাহে দুটি, কোরিয়াভিত্তিক সিনোকর-হুন্দাই সপ্তাহে একটি, ড্যানিশভিত্তিক মেয়ারস্ক লাইন দুটি এবং ফ্রেঞ্চভিত্তিক সিএনসি লাইন সপ্তাহে দুটি জাহাজসেবা চালু হয়।

জুলাইয়ে এই রুটে সপ্তাহে একটি জাহাজ দিয়ে যুক্ত হয় বিশ্বের বৃহত্তম শিপিং লাইন মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি)। বিশ্বজুড়েই পণ্য পরিবহনে এমএসসির সঙ্গে মেয়ারস্ক লাইনের লড়াই চলছে। সেই প্রতিযোগিতায় এমএসসি অনেক এগিয়েছে। এখন বাংলাদেশে চীন থেকে পণ্য আনতে এমএসসি যুক্ত হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শিপিং কোম্পানি মেয়ারস্ক লাইনও প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয়। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে নতুন একটি জাহাজ দিয়ে আরেকটি সার্ভিস চালু করে মেয়ারস্ক।

আগস্টের শেষে চীন-চট্টগ্রাম রুটে যুক্ত হওয়ার খবর দেয় পিআইএল। এই কোম্পানি ২০১১ সালে প্রথম চীন-চট্টগ্রাম রুটে পণ্য পরিবহন করে সবার নজরে আসে। মাঝখানে সেটি বন্ধ ছিল। ১৩ বছর পর আবারও কোম্পানিটি এই সার্ভিসে যুক্ত হলো।

এখন সব মিলিয়ে ছয়টি বড় শিপিং কোম্পানি শুধু চীন-চট্টগ্রাম রুটে প্রতি সপ্তাহে ১০টি জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহন করবে।

মেয়ারস্ক লাইনের বাংলাদেশ প্রধান নিখিল ডি লিমা বলেন, “আমাদের আগে থেকেই এসএইচ-১, এসএইচ-২ নামের দুটি সার্ভিস চীনের বিভিন্ন বন্দর থেকে কন্টেইনার জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহন করছিল। নতুন এসএইচ-৩ সার্ভিসটি আরও বেশি সুবিধা দিয়ে আমরা চালু করেছি।

“বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের মার্কেটে পোশাক রপ্তানির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছিল। আমাদের ক্রেতারা সেই চাহিদা পূরণে নতুন সার্ভিস চালুর জোর দাবি জানাচ্ছিলেন। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে এই সার্ভিস অনেক বেশি সহায়ক হবে।”

মেয়ারস্ক লাইনের নতুন সার্ভিসটি চীনের সাংহাই, জিয়ামেন, কাউশিয়াং, নানশা থেকে পণ্য তুলে মালয়েশিয়ার তানজুম পেলিপাস বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছবে। এতে সময় লাগবে ২০ দিন। ফলে তারা কতটা সুবিধা করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, এই রুটে অন্য সার্ভিসগুলো ১২ থেকে ১৫ দিনে চট্টগ্রাম পৌঁছাচ্ছে।

চীন-চট্টগ্রাম রুটে ২০১১ সালে পিআইএল প্রথম জাহাজ সার্ভিস চালু করেছিল। বেশ কিছুদিন চলার পর সেই সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত সার্ভিসটি শুধু একমুখী বা আমদানি নির্ভরতার কারণ সেটি স্থায়ী হয়নি। এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং আগের ভুল শুধরে পিআইএল নতুন করে সার্ভিস চালু করছে।

পিআইএল যে সার্ভিসটি চালু করছে তার নাম চিটাগাং চীন এক্সপ্রেস সার্ভিস। সেটি চীনের নিংবো, সাংহাই, সিকো বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছবে। মাঝপথে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং কিংবা তানজুম পেলিপাস বন্দরে থামবে না। ফলে এই সার্ভিসটি চীন থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম আসবে। এতে মাত্র ১০ দিনে এই সার্ভিসে চীন থেকে চট্টগ্রামে পণ্য আনার সুযোগ তৈরি হবে।

বাংলাদেশে পিআইএলে কর্মরত একাধিক জুনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাজ চালু হবে ৩১ আগস্ট। ফলে কতদিন লাগবে সেটি জানার সুযোগ হয়নি। তবে তাদের ধারণা অন্যদের যদি ১২ দিন লাগে, তবে পিআইএলের আরও কম সময় লাগবে।

এর ব্যাখ্যায় এই কর্মকর্তারা জানান, মাঝপথে অন্যকোন বন্দরে তাদের জাহাজটি থামবে না, সরাসরি চট্টগ্রাম চলে আসবে। এর ফলে অন্য যেকোনো শিপিং লাইনের চেয়ে তাদের সার্ভিসে কমপক্ষে দুদিন সাশ্রয় হবে। আর এ কারণে গ্রাহকরা তাদের সার্ভিস বেছে নিবে বলেই আশাবাদী তারা।

এদিকে, বর্তমানে চীন-চট্টগ্রাম রুটে একটি ২০ ফুট কনটেইনার পরিবহন ভাড়া ২১০০ থেকে ২৫০০ ডলার নিচ্ছে শিপিং লাইনগুলো। কিন্তু পিআইএল কত ভাড়া নিচ্ছে সেটি এখনও প্রকাশ করেনি। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, শুধু কম সময়ে পৌঁছালে হবে না, এর সঙ্গে কন্টেইনার পরিবহনের ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক না হলে ক্রেতা সাড়া পাওয়া কঠিন হবে। তবে হ্যাঁ, যারা দ্রুত পণ্য আনতে চান তারা বেশি খরচে পণ্য আনতে পারবেন।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ সালাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “চীন থেকে সবচেয়ে বেশি কাঁচামাল আমরা আনি। এখন পণ্য পরিবহনে যত বেশি কম সময় লাগবে, ততই আমরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারব।

“আমাদের পণ্য উৎপাদনে কম সময় লাগবে। কাঁচামাল আনার জন্য আমাদের বসে থাকতে হবে না। পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট টাইম সাশ্রয় হওয়ায় সেটি আমরা পণ্য উৎপাদনে যোগ করতে পারব। এটা অনেক বড় সুখবর।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত