সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা কার্যক্রমের ওপর থেকে বাধা উঠিয়ে নিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্তের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশই বহাল রাখা হয়েছে।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষার কার্যক্রম চললেও তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশ করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন মুনতাসির আহমেদ, রিটকারিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী লিটন আহমেদ ও সায়েদুল হক সুমন।
আদেশের বিষয়ে সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষার কার্যক্রম চলবে। তবে তদন্ত রিপোর্ট আসা পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশ করা যাবে না বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তদন্ত কাজও চলবে। তদন্তে সিআইডিসহ যে কাউকে সংযুক্ত করা যাবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনায় তদন্ত এবং মৌখিক পরীক্ষার কার্যক্রম স্থগিত করে গত ২৮ মে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া প্রশ্নফাঁসমুক্ত পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েও রুল জারি করা হয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এই পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীও দিয়েছেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের পরও গত ২১ এপ্রিল রাতে ফল প্রকাশ হয়। এতে ৪৬ হাজার ১৯৯ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়।
রিটকারির পক্ষের আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য সার্কুলার হয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য। এ পরীক্ষায় সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ অনেককে গ্রেপ্তারও করে। আটকৃতরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে সবই স্বীকারও করে।
“এ নিয়ে পত্র পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনও অনুসন্ধানতো দূরের কথা কিছুই করেনি। বরং তারা এত বড় ঘটনাকে ইগনোর করে সামনে এগিয়ে ভাইভা নিচ্ছে। এখন আমাদের বক্তব্য হলো প্রশ্নফাঁসের ঘটনা দিবালোকের মতো পরিস্কার, সেই ঘটনায় কেউ তদন্তও করল না। আমাদের ধারণা এই ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কেউ জড়িত থাকতে পারেন। এজন্য পরে এ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া জুয়েল রতন দাসসহ ১৫ জন রিট দায়ের করেন।”