হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার ঘটনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হবে।
শুক্রবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার আলি ফাদাভি এই ঘোষণা দিয়েছেন।
আলী ফাদাভি বলেন, “ইসরায়েলের কঠোর শাস্তি এবং শহীদ ইসমাইল হানিয়ার রক্তের প্রতিশোধের বিষয়ে সর্বোচ্চ নেতার আদেশগুলো সুস্পষ্ট। সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।”
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া গত ৩১ জুলাই গুপ্তহত্যার শিকার হন ইরানের রাজধানী তেহরানে। ইরান ও হামাস এর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
তবে গত বুধবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ওআইসির এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলন ডেকে ইরানকে ইসরায়েলে হামলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। বিনিময়ে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলকে রাজি করানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ওই সম্মেলনে ইরানও ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা পেলে ইরানও আর ইসরায়েলে হামলা করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইসরায়েল ও ইরান উভয়ের সঙ্গেই সরাসরি যোগাযোগ করেছে। তাদের বলা হয়েছে, “কারো জন্যই এই সংঘাতকে আর বাড়ানো উচিৎ হবে না।”
ব্লিনকেন জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ প্রবেশ করেছে এবং নতুন করে কোনও যুদ্ধ শুরু হলে তা ভেস্তে যেতে পারে।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি তেহরানে গিয়ে ইরানের ভাপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাঘেরি ও ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান উভয়ের সঙ্গেই সাক্ষাত করেন।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েল ও হামাসকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবার শুরু করার আহ্বান জানায়।
কিন্তু এর মধ্যেই শুক্রবার ইরানের আইআরজিসি ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করল।
এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, “ইসরায়েলকে রক্ষা করতে আমরা সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত। এই ধরনের কোনও হুমকি শুনলে আমরা সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গেই নেই।”
এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমানসহ অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর ঘোষণা দেয়।
এমনকি শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সৌদি আরবের কাছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার হতে চলেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপনযোগ্য কিছু অস্ত্র সৌদি আরবের কাছে বিক্রির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। প্রচলিত অস্ত্র হস্তান্তর নীতি অনুযায়ী ধাপে ধাপে এসব গোলাবারুদ সৌদি আরবকে দেওয়া হবে।
তবে আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের যুদ্ধ চায় না।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা