বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর এবার ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বাইরে দৃশ্যমান স্থানে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি টানানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
সোমবার এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ নির্দেশ দেয় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ।
শুনানিতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও ইসরাত জাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
আদেশের পরে অমিত দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের জানান, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত নোটিশ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিচারক বলেছেন, “অধিকাংশ সময় দেখা যায় এ নোটিশগুলো পকেটে রেখে দেওয়া হয়। এগুলো যেন দৃশ্যমান হয় , বিল্ডিংয়ে সম্মুখভাগে যেন টানানো থাকে, নোটিশ পড়ে যেন বোঝা যায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।”
আইনে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে উল্লেখিত পদক্ষেপ যথাযথভাবে না নেওয়ার নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে আলাদা দুটি রিট আবেদন করা হয়েছিল।
শুনানি শেষে আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতেও বলেছেন বিচারক। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত একটি কমিটিও করে দিয়েছেন। বলা হয়েছে সেই কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, ঢাকার দুই সিটির প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর, বুয়েটের একজন প্রতিনিধি ও রাজউকের প্রতিনিধি থাকবে।
এ কমিটিকে আগামী চার মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির কাজ হবে, বহুলত ভবনসহ স্থাপনাগুলোয় অগ্নি প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা এবং অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ভবিষ্যতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার সুপারিশ করা।
এছাড়া আরেক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ আগুনে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে।
একইসঙ্গে প্রতিটি বহুতল ভবন, কারখানা এবং স্থাপনায় অগ্নি নিরোধক কক্ষ ও সিঁড়ি স্থাপনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই ব্যবস্থা কেন আইনে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং নির্বিচারে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন অনুসারে পদক্ষেপ পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দিয়েছে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। কমিটিকে আগামী চার মাসের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত তানজিনা নওরীনের ফুফাতো ভাই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজমুস সাকিব হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও অনিক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ।
আদেশ শেষে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, রুল জারির পাশাপাশি আদালত ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে কতগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার তালিকা তৈরি এবং ওই সব ঘটনায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে তাতে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দৃশ্যমান স্থানে সাঁটানোর নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের আরেকটি বেঞ্চ।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোচি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যে ঘটনায় নারী-পুরুষ-শিশুসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণসহ অগ্নি নির্বাপনের সার্বিক অবস্থা জানতে বিভিন্ন নির্দেশনা চেয়ে একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে রবিবার রিট আবেদন করা হয়। সেসব আবেদনের শুনানি নিয়ে এসব আদেশ দেয় আদালত।