জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান চলমান থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক, তাদের সন্তান নুরিন সিদ্দিকের ২৪ দশমিক ৮০ বিঘা জমিসহ ৫টি প্লট ও ৫টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেয়।
জব্দ সম্পদের মধ্যে বারিধারার ডিওএইচএসের ৭ তলা বাড়ি, একই এলাকার ৭ তলা ভবনের ৩ টি ফ্ল্যাট, একই এলাকার ৩৬শ স্কয়ার ফিটের ৪টি কার স্পেসসহ ২ টি ফ্ল্যাট, পূর্বাঞ্চলের নতুন শহরে ২০ কাঠা জমির ৪ টি প্লট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ১ টি প্লট।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম এসব প্লট, ফ্ল্যাট জব্দের আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক, তাদের সন্তান নুরিন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে জানা যায়, তারা স্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগে সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে অনুসন্ধানে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ ৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ থাকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রীর সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম, ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহিন চাকলাদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আলাদা তিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জেষ্ঠ্য বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এই আদেশ দেয়।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করেন। স্ত্রীসহ ফরহাদ হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে দুদকের পক্ষে সংস্থার সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম।
আবেদনে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও অবৈধভাবে কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
অভিযোগটি অনুসন্ধানকালে ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম এবং তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে অবৈধ আয়ে নিজ এলাকায় কৃষি জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ক্রয় এবং তার নামে বিপুল পরিমাণ অস্থাবর রয়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা যায় যায়। তাদের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
এদিন ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন
দুদকের পক্ষে সংস্থার উপপরিচালক মোহা. নুরুল হুদা।
আবেদনে বলা হয়, আসামি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর নামে প্রতারণা করে অবৈধ অর্থ লেনদেন করে প্রচুর অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর অভিযোগে করা মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, মামলার আসামি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ হতে বাঁচার জন্য বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছে। মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আসামি যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন সে বিষয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহিন চাকলাদারের দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা এবং পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লকের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন দুদকের পক্ষে সংস্থার সহকারী পরিচালক তদন্তকারী কর্মকর্তা আল-আমিন। শুনানি শেষে এই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
আবেদনে বলা হয়, শাহিন চাকলাদারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, আসামি বর্তমানে আত্মগোপনে আছে এবং যে কোন সময় তার পরিবারসহ বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে। এ কারণে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন।