বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় এলাকায় যেসব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার ঢাকার শেরে বাংলা নগরে এনইসি সভাকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দিয়েছেন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনিই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়টি জানান।
আব্দুস সালাম বলেন, “ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সামনে যেহেতু বর্ষার মৌসুম, তাই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করতে হবে।”
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানিবাহিত রোগ যেন ছড়াতে না পারে, সেজন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নিজে রাতভর ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকারসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার জানান, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সমন্বিভাবে কাজ নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ ধরনের দুর্যোগের সময় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ল্যান্ডফোন চালু রাখার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্টেকহোল্ডারদের স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে প্রাণহানি ও সম্পদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার হিসাব করে রবিবারের মধ্যে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশের নির্দেশও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
সচিব আরও জানান, একনেক সভায় মোট ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে ৬ হাজার ৫৪১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে আসবে ৭ হাজার ৮৭৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৮৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
সভায় রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে ৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নে ৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হোস্ট অ্যান্ড ফোরসিবিলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনালস’(এফডিএমএন)/ ‘ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন ইনহ্যান্সমেন্ট অব লিভস থ্রো এ মাল্টি-সেক্টোরাল এপ্রোচ প্রজেক্ট ইনফ্রাস্টকচার রিলেটেড’ প্রকল্প এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ৪ হাজার ৪০১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরটুনিটিস ফর হোস্ট কমুনিটিজ অ্যান্ড এফডিএমএন পপুলেশন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনা সচিব বলেন, “রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য নেওয়া প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক এক বছরের জন্য অনুদান দেবে। এছাড়া কিছু ঋণও দেওয়া হবে। শুরুতে বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগিরা শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য দিতে চেয়েছিল, পরে আলাপ করে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও চাওয়া হলে তা দিতে রাজি হয়েছে। এসব টাকায় যোগাযোগ তথা রাস্তা, রেলপথ নির্মাণ করা হবে। যে বন ও পাহাড় নষ্ট হয়েছে তার উন্নয়ন করা হবে।”
এসব বাস্তবায়নে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে জানিয়ে সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে যে বনাঞ্চল নষ্ট হয়েছে তা উন্নয়নে কাজ করা হবে।
এ দুটি প্রকল্প প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী প্রজেক্ট প্লানিং সিস্টেম (পিপিএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনুমোদন করেছেন বলে জানান সিনিয়র সচিব।
একনেকে অন্য যে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো – চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধ করতে তীর সংরক্ষণ কাজ প্রকল্প, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, নওগাঁর মহদেবপুর উপজেলায় ৪৮ হাজার মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চালের আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ প্রকল্প; রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।
এছাড়া বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও আটটি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং দুটি স্লিপওয়ে নির্মাণ প্রকল্প, কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প।