সারাদুনিয়া জুড়েই চলছে ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত পণ্য ব্যবহারের ট্রেন্ড। সে তালিকায় জুটেছে খাবারও। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক যুক্ত শাকসবজি থেকে রেহাই পেতে অনেকেই ঝুঁকছে ‘অর্গানিক’ খাবারের দিকে। কিন্তু অর্গানিক খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর? আর কতটাই বা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ?
তার আগে জেনে নেওয়া দরকার অর্গানিক খাবার বলতে আসলে কী বোঝায়।
‘অর্গানিক’ মানে হলো, যে ফসল চাষ করতে কোন ধরণের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয় নাই। উৎপাদন বাড়াতে চাষাবাদে রাসায়নিক সার-কীটনাশকের ব্যবহার অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছে।
গবেষকরা বলছেন, বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটালেও এইসব সার-কীটনাশকের কারণে মাটি যেমন উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে, তেমনি উৎপাদিত শাকসবজিকেও বিষাক্ত করে তুলছে। ফলে এইসব ফসল থেকে তৈরি খাবারে মানবদেহে সৃষ্টি হচ্ছে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
দিল্লি-ভিত্তিক পুষ্টিবিদ বন্দনা ভার্মা অর্গানিক খাবারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “অর্গানিক খাবার হলো কৃত্রিম কীটনাশক ও সার মুক্ত খাবার যা উৎপাদনে পুরোপুরি প্রকৃতির ওপর নির্ভর করা হয়।”
অর্গানিক বনাম প্রচলিত খাবার
অর্গানিক খাবার উৎপাদনের বিশ্বজোড়া পরিচিতির মাঝে প্রচলিত পন্থায় চাষাবাদ আজ সমালোচনার মুখে। যদিও অর্গানিক চাষাবাদে উৎপাদিত খাবার বেশ ব্যয়বহুল।
তবে বন্দনা ভার্মা অর্গানিক খাবারের পক্ষে। এর ইতিবাচক দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে অর্গানিক বা জৈব সারে উৎপাদিত খাবারে, প্রচলিতভাবে উৎপাদিত খাবারের চাইতে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। যদিও এই পার্থক্য সব ক্ষেত্রে চোখে পড়েনি।”
তবে আরেক পুষ্টিবিদ বৈশালী ভার্মার মতে, ভিটামিন সি এর মতো পুষ্টির হেরফের অর্গানিক এবং প্রচলিত খাবারে খুব সামান্যই হয়। তবে অর্গানিক বা জৈব চাষাবাদে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পেলেও খনিজের অনুপাতে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন ঘটায় না।
অন্যদিকে, প্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপাদিত শাকসবজি পাঠানো হয় দূরদূরান্তের বাজারে। ফলে ওইসব খাবারের টাটকা ভাব বজায় থাকেনা। কিন্তু বাজারের অর্গানিক খাবারগুলো ভোক্তার কাছে পৌঁছায় স্থানীয় খামার থেকে। ফলে খাবারের টাটকা ভাব বজায় থাকে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্গানিক খাবারের দাম আকাশচুম্বী হবার কারণে সেসব সাধারণ ভোক্তার কাছে পৌঁছায় না। জনগণের বড় অংশের ধরাছোঁয়ার বাইরে এই খাবার।
পুষ্টিবিদ ড. অর্চনা বাত্রা বলেন, “মূল পার্থক্যটা হলো কীটনাশকের ব্যবহারে। জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত শাকসবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক দেওয়া হয়না, ফলে এইসব খাবারে বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা কম। তবে, জৈব প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত এইসব খাবার দ্রুত নষ্ট হয়।”
পচনশীলতা এবং মূল্য, এই দুইয়ের বিবেচনায় অর্চনার পরামর্শ হলো- কিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে তা গুরুত্ব না দিয়ে বরং মৌসুমী শাকসবজি কেনা উচিত।
অর্গানিক খাবার আসলে কতটা ভালো? নাকি এটি কেবলই আরেকটি বিজনেস আইডিয়া? এমন প্রশ্নও বেশ চালু।
ড. অর্চনা বাত্রা দিচ্ছেন এর উত্তর। তিনি বলেন, “সিন্থেটিক কীটনাশকের মাত্রা কম থাকায় অর্গানিক খাবারে পুষ্টিগুণ খানিকটা বেশি। এতে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থও থাকে না। আসলে যথাযথ প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা অর্গানিক এবং প্রচলিত, এই দুইভাবে উৎপাদিত খাবারকেই স্বাস্থ্যকর রাখে।”
অর্গানিক খাবার কিনতে হলে গুণতে হয় উচ্চমূল্য। ফলে এই ধরণের খাবার নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। তাছাড়া অর্গানিক খাবারে প্রিজারভেটিভ না দেওয়ার কারণে সেগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অতি উৎসাহী হয়ে অর্গানিক খাবার কিনতে গিয়ে দেখা গেল পঁচে যাওয়া সবজি রান্না করে খাওয়া হয়ে গেছে। এতে করে বিষক্রিয়া হবার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই অর্গানিক মানেই শতভাগ বিশুদ্ধ এমন মনে করার কোনই কারণ নেই।