সিরাজগঞ্জে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রাণ হারানো ওই শিশুর নাম জিম খাতুন (৩)। এ ঘটনায় শিশুটির মা-বোনসহ চারজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বেলগাছি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পরে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে শিশুটি মারা যায়। রাতেই মা-বোনসহ তিনজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জিম খাতুন উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কায়েম উদ্দিনের মেয়ে। অসুস্থরা হলেন, জিমের মা পারভিন খাতুন (২৭), বোন রিয়া (৮) ও মিথিলা (৪) ও মামাতো বোন নুরী (৫)।
নিহতের বাবা ও চাচা জানিয়েছেন, শবে বরাতের পরদিন নফল রোজা রেখেছিলেন জিমের মা পারভীন খাতুন। ইফতারে মেয়েদের নিয়ে স্যালাইন, জুস পান করার কিছুক্ষণ পরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পরে জিম মারা যায়।
ওরস্যালাইনে ভেজাল থাকাই এমন ঘটনার কারণ বলে ধারণা পুলিশের। এ ঘটনায় দোকানদার ও স্যালাইন সংশ্লিষ্ট ৪ জনকে আটক করেছে বেলকুচি থানা পুলিশ।
স্বজনরা জানায়, অসুস্থ হওয়ার পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। সেখান থেকে তাদের পাঠানো হয় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণ পর মারা যায় জিম খাতুন। তারপর রাতেই বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জিমের বাবা কাইয়ুম উদ্দিন বলেন, আমার স্ত্রী, মেয়েরা ২ টা স্যালাইন, ২টা টেস্টি স্যালাইন ও একটা ট্যাং শরবত করে খেয়েছিল। খাওয়ার পর ভাত খায় ওরা। তারপর থেকেই তাদের পায়খানা শুরু হয়।
কাইয়ুমের ভাই হোসেন বলেন, মেয়াদের বিষয়টি আমরা খেয়াল করিনি। স্যালাইনের প্যাকেট আমার ভাই দেখেছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, তারা কী খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। তবে তারা ফুড পয়জনিং ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এদের মধ্যে মা পারভীন ও মেয়ে রিয়ার অবস্থা এখনও আশংকাজনক। বাকি দুজন শঙ্কামুক্ত।
শিশু মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেলকুচি থানা পুলিশের ওসি আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ওই পরিবার যেসব স্যালাইন খেয়েছে তার মধ্যে ব্রান্ডের কোম্পানি আছে। আবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্যালাইনও আছে। স্থানীয়ভাবে তৈরী স্যালাইনের প্যাকেটের মেয়াদের তারিখটি অস্পষ্ট। এ জন্য বলা যাচ্ছে না যে মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে ভেজাল থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় দোকানদার আমিনুল ইসলাম, আনিছুর রহমান, স্থানীয় স্যালাইন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের হাফিজ শেখ ও সাগর হোসেনকে আটক করা হয়েছে। ওসি আরও বলেন, নিহত শিশুটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। নিহতের পরিবার এখনও মামলা করেনি। তারা না করলেও পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করবে।