ব্যালন ডি’অর একটা সময় নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ছেড়েছিলেন লিওনেল মেসি আর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। মেসি পুরস্কারটা জিতেছেন ৮ বার, রোনালদো ৫ বার। ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই দুজনের বাইরে জিতেছেন কেবল লুকা মদরিচ, করিম বেনজিমা ও রোদ্রি।
২০২৫ সালেও মুকুটটা পেতে যাচ্ছেন নতুন কেউ। সেই লড়াইয়ে ব্রাজিল ও বার্সেলোনার উইঙ্গার রাফিনিয়া এগিয়ে অনেকটা। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে উসমান দেম্বেলে, লামিন ইয়ামাল, রবার্ট লেভানদোস্কি, ডেকলাইন রাইস, লাউতারো মার্তিনেসের। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাই বলে সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি ফ্রান্সের অধিনায়কেরও। আলোচনাটা রাফিনিয়া দিয়ে শুরু করা যাক।
রাফিনিয়া এগিয়ে যে কারণে
ব্যালন ডি’অর জয়ের প্রধান দুই শর্ত হচ্ছে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ও দলীয় সাফল্য। রাফিনিয়া ২০২৪-২৫ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ৪৮ ম্যাচে গোল করেছেন ৩০টি, অ্যাসিস্ট করেছেন ২৩টি। সবমিলিয়ে গোলে অবদান ৫৩টি। রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে জিতেছেন স্প্যানিশ সুপার কাপ। তবে এই এক শিরোপায় ব্যালন ডি’অর জেতা কঠিন।
লা লিগায় বার্সেলোনা ৪ পয়েন্টে এগিয়ে রিয়ালের চেয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগে তারা সেমিফাইনালে। আর রিয়ালের সঙ্গে ফাইনাল খেলবে কোপা দেল রে’র। এই তিনটি শিরোপা বার্সেলোনা জিতলে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে অনেকখানিই এগিয়ে যাবেন রাফিনিয়া। কারণ শুধু পরিসংখ্যান নয় প্রভাবেও এগিয়ে তিনি।
নিজের গোল আর অ্যাসিস্টগুলো করেছেন ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। এই যেমন লা লিগায় সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে ৯৮তম মিনিটে গোল করে ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে দলকে জিতিয়েছেন ৪-৩ ব্যবধানে। একইভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলতে বেনফিকার বিপক্ষে দুই লেগেই করেছিলেন গোল। ৪-১ ব্যবধানে জেতা ম্যাচের ৩ গোলই ছিল রাফিনিয়ার। দুটি বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি কাফুও তাই ব্যালন ডি ‘অরের জন্য এগিয়ে রেখেছেন রাফিনিয়াকেই।
এই শিরোপাগুলো জিতলে রাফিনিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে থাকবেন বার্সার লামিন ইয়ামাল আর রবার্ট লেভানদোস্কিও। লরিয়াস স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডে সেরা উদীয়মান হওয়া ইয়ামাল এই মৌসুমে বার্সার হয়ে করেছেন ১৪ গোল আর অ্যাসিস্ট করেছেন ২২টি। লেভানদোস্কির গোল ৪০টি, অ্যাসিস্ট ৩টি।
ফেভারিট দেম্বেলেও
বার্সার তিন খেলোয়াড়দের বাইরে অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্স ও পিএসজির তারকা উসমান দেম্বেলে। বার্সা থেকে পিএসজিতে যোগ দিয়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন দেম্বেলে। ৪২ ম্যাচে তার গোল ৩২ আর অ্যাসিস্ট ১১টি। জিতেছেন ফ্রেঞ্চ লিগ ও কাপের দুটি শিরোপা। পিএসজিকে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে পারলে সুযোগ বাড়বে দেম্বেলেরও। সে সঙ্গে উয়েফা নেশনস লিগে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হলে সুযোগ আরও বাড়বে দেম্বেলের।
একইভাবে ইন্টার মিলানের লাউতারো মার্তিনেস ইতালিয়ান সিরি ‘এ’ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে এগিয়ে যাবেন ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে। এই মৌসুমে ইন্টারের হয়ে তার গোল ২১টি আর অ্যাসিস্ট ৬টি।
ব্যালন ডি’অরের দৌড় শুরুতে ভালোভাবে ছিলেন মোহাম্মদ সালাহ। এবারের মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে তার গোল ২৭ আর অ্যাসিস্ট ১৮টি। প্রিমিয়ার লিগ জয়ের দুয়ারেও আছে লিভারপুল। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলো থেকে ছিটকে যাওয়া আর লিগ কাপের ফাইনালে নিউক্যাসলের কাছে হারায় সম্ভাবনা একপ্রকার শেষ হয়ে গেছে সালাহর।
এমবাপ্পের সুযোগ যেখানে
কিলিয়ান এমবাপ্পে চ্যাম্পিয়নস লিগ আর ব্যালন ডি’অর জিততেই এসেছেন রিয়াল মাদ্রিদে। কিন্তু রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়ায় সম্ভাবনা কমে গেছে তার। তাই বলে শেষ হয়ে যায়নি একেবারে। এরই মধ্যে এমবাপ্পে জিতেছেন দুটি শিরোপা। একটি উয়েফা সুপার কাপ আরেকটা ফিফা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ। রিয়ালের হয়ে তার গোল ৩৩টি। এর ২২টি লা লিগায়, সেখানে অ্যাসিস্ট আছে ৩টি।
লা লিগায় রিয়াল এখন ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে বার্সার চেয়ে। এল ক্লাসিকোয় নিজের সেরা ছন্দে খেলে এমবাপ্পের সামর্থ্য আছে এই ব্যবধান কমিয়ে রিয়ালকে জেতানোর। সুযোগ আছে কোপা দেল রে ফাইনালেও বার্সাকে হারানোর। এরপর এমবাপ্পের সামনে নতুন মিশন আরও দুটি- একটি ক্লাব বিশ্বকাপ, আরেকটি উয়েফা নেশনস লিগ।
নতুন ফরম্যাটের ক্লাব বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট রিয়াল। এই টুর্নামেন্টে নেই বার্সেলোনা। উয়েফা নেশনস লিগে ফ্রান্স সেমিফাইনাল খেলবে স্পেনের সঙ্গে। সেমিফাইনাল আর ফাইনাল জিততে পারলে ব্যালন ডি’অরের জন্য এমবাপ্পের সুযোগ বাড়বে আরও। কারণ নেশনস লিগ এখন কেবল নিছক প্রীতি ম্যাচের টুর্নামেন্ট নয়। নেশনস লিগ থেকে ৪টি দল খেলবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফে। ব্যালন ডি’অরের জমজমাট লড়াই তাই শেষ হয়ে যায়নি।