Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

৮০ হাজারের বেশি আফগান শরণার্থীকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান

afghan
[publishpress_authors_box]

পাকিস্তান সরকার এ মাসে ১৯ হাজার ৫০০-র বেশি আফগান নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মোট ৮০ হাজারের বেশি আফগান পাকিস্তান ছেড়ে গেছে। তারা ৩০ এপ্রিলের সময়সীমার আগেই পাকিস্তান ছেড়েছে।

পাকিস্তান এখন জোরেশোরে তাদের দেশে অবৈধভাবে থাকা আফগানদের বহিষ্কারের কাজ শুরু করেছে। এমনকি যাদের সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি ছিল, তাদেরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পাকিস্তান বলছে, তারা আর এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না।

তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০টি আফগান পরিবারকে পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে প্রায় ২০ লাখ আফগানকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

শনিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার তালেবান নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য কাবুল গেছেন। তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি পাকিস্তানের এই বহিষ্কারের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বহিষ্কৃত কিছু আফগান সীমান্তে দাঁড়িয়ে বলেছেন, তারা পাকিস্তানেই জন্মেছেন। তাদের পরিবার অনেক আগেই যুদ্ধের সময় আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে পাকিস্তানে ৩৫ লাখের বেশি আফগান বসবাস করছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ৭ লাখ আফগান পাকিস্তানে এসেছে। জাতিসংঘের ধারণা, এদের অর্ধেকেরই বৈধ কাগজপত্র নেই।

দীর্ঘ সময় ধরে পাকিস্তান যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানদের আশ্রয় দিয়ে এসেছে। তবে এখন দেশটির সরকার বলছে, এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে এবং সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।

সম্প্রতি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বেড়েছে। পাকিস্তান বলছে, এই সংঘর্ষের জন্য আফগানিস্তানে অবস্থানরত জঙ্গিরা দায়ী। তবে তালেবান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

শনিবার কাবুলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই পক্ষ “পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়” নিয়ে আলোচনা করেছে।

পাকিস্তান তাদের দেশে অবৈধভাবে থাকা আফগানদের জন্য দেশ ছাড়ার সময়সীমা এক মাস বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল করেছে।

তোরখাম সীমান্তে কিছু বহিষ্কৃত আফগান বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা বহু বছর আগে আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানে এসেছেন। কেউ কেউ বলেন, তারা কখনো আফগানিস্তানে থাকেনইনি।

দ্বিতীয় প্রজন্মের শরণার্থী সায়েদ রহমান বলেন, “আমি সারা জীবন পাকিস্তানে ছিলাম। সেখানেই আমার জন্ম ও বড় হওয়া। সেখানেই আমার বিয়ে হয়েছে। এখন আমি কী করব?”

তিন কন্যার জনক সালেহ উদ্বিগ্ন যে, তালেবান শাসনে তার মেয়েদের জীবন কেমন হবে। তার মেয়েরা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে স্কুলে যেত। কিন্তু আফগানিস্তানে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ।

তিনি বলেন, “আমি চাই আমার সন্তানেরা পড়াশোনা করুক। আমি চাই না তাদের স্কুলের বছরগুলো নষ্ট হোক। প্রত্যেকেরই শিক্ষার অধিকার আছে।”

আরেকজন শরণার্থী বিবিসিকে বলেন, “আমাদের সন্তানরা কোনোদিন আফগানিস্তান দেখেনি। এমনকি আমিও এখন আর সেদেশকে চিনতে পারব কিনা জানি না। আমাদের হয়তো এক বছর বা তার বেশি সময় লাগবে নতুন করে মানিয়ে নিতে এবং কাজ খুঁজে পেতে। আমরা খুবই অসহায় বোধ করছি।”

সীমান্তে নারী ও পুরুষদের আলাদা গেট দিয়ে পার হতে হয়। সেখানে সশস্ত্র পাকিস্তানি ও আফগান রক্ষীরা পাহারা দেয়। ফিরে আসা শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই বয়স্ক। একজনকে স্ট্রেচারে করে আনা হয়েছে, আরেকজন এসেছেন একটি বিছানায় শুয়ে।

সামরিক ট্রাকগুলো সীমান্ত থেকে পরিবারগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। যারা দূরের প্রদেশ থেকে এসেছেন, তারা সেসব আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকদিন থাকেন। এরপর তারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করেন।

তীব্র গরম – প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস – থেকে বাঁচতে পরিবারগুলো ত্রিপলের নিচে জড়ো হয়ে থাকেন। বাতাসে ধুলোর ঘূর্ণি চোখ-মুখে ঢুকে যায়। আশ্রয় সংকট থাকায় অনেক সময় তীব্র বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া লেগে যায়।

শিবিরে তালেবান নিয়োজিত আর্থিক কমিটির সদস্য হেদায়েতুল্লাহ ইয়াদ শিনওয়ারি জানান, প্রত্যাবর্তনকারীরা কাবুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৪ থেকে ১০ হাজার আফগানি পর্যন্ত অর্থ সহায়তা পান।

এই ব্যাপক বহিষ্কারের ফলে আফগানিস্তানের দুর্বল অবকাঠামোর ওপর বড় ধরনের চাপ পড়েছে। দেশের অর্থনীতি সংকটে আছে এবং জনসংখ্যা ৪ কোটি ৫০ লাখের কাছাকাছি।

তালেবানের শরণার্থীবিষয়ক প্রধান বখত জামাল গোহর বলেন, “আমরা বেশিরভাগ সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক মানুষের আগমন স্বাভাবিকভাবেই কিছু সমস্যা সৃষ্টি করছে। তারা বহু বছর আগে দেশ ছেড়েছিল এবং সব কিছু ফেলে চলে গিয়েছিল। যুদ্ধের ২০ বছরে তাদের অনেকের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।”

প্রায় প্রতিটি পরিবার বিবিসিকে জানিয়েছে, পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীরা তাদের কী কী জিনিস নিয়ে আসতে পারবে তা সীমিত করে দিয়েছিল। এই অভিযোগ কিছু মানবাধিকার সংস্থাও তুলেছে।

এই অভিযোগের জবাবে পাকিস্তানি কর্মকর্তা চৌধুরী বলেন, পাকিস্তানের কোনো নীতিই নেই যা আফগান শরণার্থীদের তাদের বাসার জিনিসপত্র সঙ্গে আনতে বাধা দেয়।

রাস্তায় রোদে পুড়ে এক ব্যক্তি বসে ছিলেন। তিনি বলেন, তার সন্তানরা পাকিস্তানে থাকতে চেয়েছিল। কারণ, ওখানেই তাদের জন্ম। তাদের সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি ছিল। কিন্তু তা মার্চ মাসে শেষ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, “এখন আর কখনও পাকিস্তানে ফিরে যাব না। আমরা যে আচরণ পেয়েছি, তার পর আর নয়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত