দ্বিতীয় বারের মতো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হলেন আসিফ আলী জারদারি। তবে ফার্স্টলেডি কে হবেন, তা এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গুঞ্জন চলছে, ছোট মেয়ে আসিফা ভুট্টো জারদারিকে ফার্স্টলেডির মর্যাদা দিতে যাচ্ছেন জারদারি। পাকিস্তান পিপলস পার্টি এরই মধ্যে তাকে এই নামে ডাকতে শুরু করেছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভু্ট্টো ও আসিফ আলী জারদারির ঘরে তিন সন্তান। তাদের সবার নামেই বাবা ও মার পদবী যুক্ত।
সবার বড় বিলাওয়াল এখন নানা-মার দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান। মেজ সন্তান বখতেয়ার রাজনীতিতে নেই। তিনি জুলফিকার আলী ভুট্টো ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চেয়ারপারসন হিসাবে শিক্ষা বিস্তারে মনোযোগী।
যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করে আসা ছোট মেয়ে আসিফার রাজনীতিতে আসার ইঙ্গিত রয়েছে। ২০২০ সালে তাকে পিপিপির সমাবেশে দেখা গিয়েছিল।
এখন ৩১ বছর বয়সী আসিফা আরও বড় দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
১৯৮৭ সালে বেনজিরকে বিয়ে করে রাজনীতির মঞ্চে বড় জায়গা নেওয়ার সুযোগ করে নেন জারদারি। ২০০৭ সালে বেনজির হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে রাজনীতিতে তার পরিসর বাড়ে। ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গত রবিবার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন তিনি।
এরপরই আসে ফার্স্টলেডির গুঞ্জন, যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা আসেনি।
ফার্স্টলেডি কে হন, কাজ কী
পশ্চিমা দুনিয়ার চর্চা অনুযায়ী, ফার্স্টলেডি হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের স্ত্রী বা নারী সঙ্গী।
এই ফার্স্টলেডির ওপর কিছু রাষ্ট্রীয় দায়িত্বও বর্তায়। রাষ্ট্রীয় কিছু ভোজ আয়োজন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান-সম্মেলনে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাজে সহযোগিতা করে থাকেন তিনি।
পাকিস্তানের আগেকার ফার্স্টলেডিরা মূলত সামাজিক নানা কাজে অংশ নিয়ে থাকতেন। তাদের মধ্যে বেনজিরের মা নুসরাত ভুট্টো এবং সেনাশাসক জিয়াউল হকের স্ত্রী শফিক জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত ছিলেন।
স্ত্রী না থাকলে কী হয়
জারদারি যখন প্রথম বার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখন কেউ ফার্স্টলেডি ছিলেন না। কারণ তার আগেই তার স্ত্রী বেনজির মারা যান। ইয়াহিয়া খান যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখনও একই কারণে ফার্স্টলেডির পদটি ফাঁকাই ছিল।
তবে স্ত্রীর পরিবর্তে মেয়েকে ফার্স্টলেডি করার নজির পশ্চিমা বিশ্বে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের সময়ে তার মেয়ে মার্থা জেফারসন ভারপ্রাপ্ত ফার্স্টলেডি হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রেরই আরেক প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সময়ও তার পুত্রবধূ ভারপ্রাপ্ত ফার্স্টলেডির দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
পাকিস্তানে আইয়ুব খানের সময় তার মেয়ে রাষ্ট্রীয় নানা কাজে বাবাকে সঙ্গ দিতেন, তবে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফার্স্টলেডি ঘোষণা করা হয়নি।
আসিফাই হবেন প্রথম
গুঞ্জন যদি সত্যি হয়, তবে আসিফাই হবেন পাকিস্তানের প্রথম ফার্স্টলেডি, যিনি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী নন।
আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা এখনও না এলেও তাকে ফার্স্টলেডি করার গুঞ্জনে সোশাল মিডিয়ায় ইতিবাচক সাড়াই দেখা যাচ্ছে।
The youngest First Lady, Aseefa Bhutto has been a part of the politics of Pakistan since she was an infant. Educated from Oxford University, first Pakistani girl to receive polio drops in Pakistan, Rotary Ambassador and former UN Ambassador for Polio Eradication. 🧵 pic.twitter.com/mx6JD2y9TY
— Meena Gabeena (@gabeeno) March 11, 2024
আসিফার জন্ম ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন তার মা বেনজির পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় নেতা।
আসিফা পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি লন্ডন কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরায়।
বেনজিরের এই মেয়ে পাকিস্তানে পোলিও নির্মূল কর্মসূচির দূত হিসাবে কাজ করছেন। ২০২০ সালের আগে তাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেমন দেখা যায়নি।
এবার নির্বাচনে ভাই বিলাওয়ালের হয়ে প্রচারে সক্রিয় ছিলেন আসিফা।
রবিবার যখন বাবা জারদারি প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন, সেই অনুষ্ঠানে বাবাকে সঙ্গ দিতে দেখা গেছে আসিফাকে।