Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

ইমরান খানের সামনে কী

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ফাইল ছবি
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

খেলার মাঠের দাপট রাজনীতিতেও দেখিয়ে আসছিলেন ইমরান খান। ২০১৮ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে বসেছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপসহ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিই ছিল তার সমর্থনের ভিত্তি। কিন্তু কঠিন হলেও সত্যি, ক্ষমতায় থাকতে তাকে যেসব বিষয়ের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে, এখন তাকে সেসব নিয়েই নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। ক্ষমতা তো হারিয়েছেনই, এখন দিন কাটাতে হচ্ছে কারা প্রকোষ্ঠে।

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরানই একমাত্র রাজনীতিক, যার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে সারাদেশ থেকে। প্রথমে তোশাখানা মামলায় ৩ বছর, এরপর মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গের মামলায় ১০ বছরের সাজা হয় তার। এখানেই শেষ নয়, বুধবার ফের তোশাখানা মামলায় তাকে ১৪ বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি ইমরান ও তার দলের ভাগ্যে আগামীতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তাই এখন দেখার বিষয়।

আসন্ন নির্বাচন ও পিটিআই

আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় দেশটির নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ইমরানকে পাঁচ বছরের জন্য সরকারি পদে অযোগ্য ঘোষণা করে। এছাড়া বুধবার তোশাখানা দুর্নীতি মামলার রায়ে তাকে ১০ বছরের জন্য সরকারি পদে নিষিদ্ধ করা হয়। এর অর্থ– এই সময়ের মধ্যে তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের ষোড়শ সাধারণ নির্বাচন। ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। ইমরান খানসহ দলটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় তারা ভোটে নেই। পিটিআই নেতাদের লড়তে হচ্ছে দলীয় প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ ছাড়াই। এমন পরিস্থিতিতে ৭১ বছর বয়সী ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

ইমরান খান কেন জনপ্রিয়

পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরানের জনপ্রিয়তা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় গত বছরের ৯ মে, আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইসলামাবাদ হাই কোর্ট চত্বর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করার পর। তখন দেশজুড়ে তার কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে ইমরান খান মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই বিক্ষোভ চলে।

গত বছরের ৯ মে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তার সমর্থকরা

রাজনীতিতে আসার আগে ক্রিকেটই ছিল ইমরান খানের ধ্যান-জ্ঞান। ক্রিকেটার হিসেবেও দেশ-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন তিনি, পেয়েছিলেন চূড়ান্ত সাফল্যও। অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতান তিনি। এতে দেশে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়।

ক্রিকেটে সফল ক্যারিয়ার শেষ করার পর নিজের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ১৯৯৬ সালে নতুন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) গঠন করেন ইমরান খান। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে শুরু হয় তার পথচলা। ক্রিকেটের মতো রাজনীতিতেও সাফল্য ধরা দেয় তার হাতে। ধীরে ধীরে ইমরান নিজেকে পরিণত করেন একজন ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক নেতায়। একপর্যায়ে পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেন প্রতিষ্ঠিত দুই রাজনৈতিক পরিবারকে, যারা কয়েক দশক ধরে দেশটির ভাগ্য নির্ধারণ করছিল।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান খান রাজনীতিতে প্রবেশের পর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাঝে তাকে দেখা হয় নতুন মুখ হিসেবে। রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দেন, তা প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হতাশ হয়ে পড়া তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করে।

তারকা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান নিজের জনপ্রিয়তা ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের পাশাপাশি ‘সেনাবাহিনীর সমর্থনে’ ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। তবে সেই নির্বাচনে অবশ্য এককভাবে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি পিটিআই। কয়েকটি দলের সঙ্গে মিলে করতে হয় জোট সরকার।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার রক্ষণশীল ইসলামী ভাবধারার পাশাপাশি পশ্চিমাবিরোধী, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান প্রভাবশালী ধর্মীয় রক্ষণশীলদের আকৃষ্ট করে।

সে সময় ইমরান খানের দাতব্য কাজও তাকে প্রচুর প্রশংসা এনে দেয়। তিনি লাহোর ও পেশোয়ারে শাওকাত খানম মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা পায়।

ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সারাবিশ্বের মতো পাকিস্তানেও করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তানেই এই ভাইরাসের সংক্রমণের হার ছিল সবচেয়ে কম। একে ইমরান খানের সরকারের সাফল্য হিসেবেই দেখা হয়। এর পাশাপাশি মহামারির কারণে অর্থনীতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছিল তা মোকাবেলায় তার সরকারের গৃহীত দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচিও প্রশংসা কুড়ায়।

২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান ইমরান খান। অনাস্থা ভোটে সরকারে থাকা তার জোটসঙ্গীদের পাশাপাশি নিজ দলের কয়েকজন এমপিও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ক্ষমতা হারালেও তিনি বরাবরই বলে আসছেন, তার সরকারকে উৎখাতের পেছনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে উভয় পক্ষই।

অনাস্থা ভোটের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে- এমন অভিযোগ তোলার পর থেকেই ইমরানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে থাকে। তিনি রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এই সময়ে ইমরান খানের জ্বালাময়ী ও সাবলীল বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তার সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

২০২২ সালের নভেম্বরে একটি সমাবেশে পায়ে গুলি লাগার পর তার প্রতি মানুষের সমর্থন আরও দৃঢ় হয়। এ সময়ে ইমরান খান তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে সেনাবাহিনী প্রধান জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন। যদিও তিনি তার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে যত মামলা

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস, আদালত অবমাননা ও হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক মামলা হয়েছে। পাকিস্তানে বিরোধী রাজনীতিকদের প্রায়ই এ ধরনের মামলার মুখে পড়তে হয়।

গত বছরের ৯ মে হাই কোর্ট চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে

দ্য হিন্দু বলছে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আলোচিত কয়েকটি মামলা হচ্ছে— আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা, তোশাখানা দুর্নীতির মামলা ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁসের অভিযোগে করা মামলা।

আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০২৩ সালের মে মাসে তিনি গ্রেপ্তার হন। ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) করা মামলায় ইমরান খান ও তা স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়, তারা আল কাদির ট্রাস্ট্রের জন্য পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি কোটি রুপি মূল্যের জমি পেয়েছেন। ইমরান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ওই আবাসন ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি চুক্তি হয়, যার ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার ক্ষতি হয়। পরে সুপ্রিম কোর্ট তার গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করলে মুক্তি পান তিনি।

এরপর আগস্টে তোশাখানা মামলা বা রাষ্ট্রীয় উপহার অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগে করা দুর্নীতির মামলায় তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।  ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিদেশ সফরে পাওয়া ১৪ কোটি পাকিস্তানি রুপির (৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার) বেশি মূল্যের উপহার বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা এই মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয় আদালত। পাকিস্তানের নির্বাচন ট্রাইব্যুনালও গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রীয় উপহার অবৈধভাবে বিক্রির জন্য ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে।

এই মামলায় আদালত সাজা ঘোষণা করার পর রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন ইমরান খান। আপিলের শুনানি নিয়ে ইসলামাবাদ হাই কোর্ট ইমরান খানের সাজা স্থগিত করে। পাশাপাশি তার জামিন আবেদনও মঞ্জুর করে আদালত। সাজা হওয়ার তিন সপ্তাহ পর জামিন মঞ্জুর হলেও অন্যান্য মামলার কারণে কারাগার থেকে মুক্তি পাননি তিনি। পরে ইমরান খান এই মামলায় সাজার রায় বাতিল চেয়ে আবেদন করলেও হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ তা খারিজ করে দেয়।

তোশাখানা দুর্নীতির আরেক মামলায় বুধবার পাকিস্তানের একটি আদালত ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে আরেকটি আলোচিত মামলা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁসের অভিযোগে করা মামলা, যা ‘সাইফার’ মামলা নামে পরিচিত। এই মামলায় দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে একটি কূটনৈতিক তারবার্তা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। পিটিআইয়ের দাবি, ওই তারবার্তায় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করেছিল, এর প্রমাণ আছে।

এই মামলায় রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশেষ আদালতে ইমরান খানের বিচার হয়। মঙ্গলবার আদালত ইমরান খানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

পিটিআইয়ের ভবিষ্যৎ কী

ডিসেম্বরের শুরুতে পিটিআই নেতা ব্যারিস্টার গহর আলী খানকে দলটির নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। ইমরান খানই তাকে মনোনীত করেন বলে পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তবে নির্বাচন সামনে রেখে দলে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা কতটুকু ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে তা নিশ্চিত নয়। ইতোমধ্যে পিটিআই দাবি করেছে, নির্বাচনে অংশ নিতে দল মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশের মনোনয়নপত্রই বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।

এছাড়া পাকিস্তানের রাজনীতিতে পিটিআইয়ের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে বলে বিবিসির এক বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে এতে বলা হয়, আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় গত বছরের ৯ মে যখন ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়, সে সময় পিটিআই কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট তার গ্রেপ্তারকে বেআইনি ঘোষণার আগ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ব্যাপক বিক্ষোভ চালাতে থাকেন।

তবে তোশাখানা মামলায় সাজা হওয়ার পর ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলটির কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষণে বলা হয়, ইমরান খানের গ্রেপ্তারে জনগণ ক্ষুব্ধ হলেও প্রতিবাদ রাজপথে নামছে না। পিটিআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামোর ভাঙন এর বড় কারণ বলে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।

পিটিআইয়ের নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর গহর আলী খান দলের ভেঙে পড়া সাংগঠনিক কাঠামো কতটুকু মেরামত করতে পারেন, তার ওপর দলটির ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করছে।

পিটিআইয়ে ভাঙন

পাকিস্তানের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তার হিসাবে এগিয়ে পিটিআই। দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীনদের জন্য এই বিপুল জনসমর্থন চিন্তার বিষয়। তাইতো গত নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, তা হতে দেয়নি তারা।

পারভেজ খট্টকের সঙ্গে ইমরান খান

নতুন নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণে সময় লাগবে, এমন অজুহাতে নির্বাচন পেছানো হয়। তবে উদ্দেশ্য ছিল, নির্বাচন পিছিয়ে পিটিআই ও ইমরানকে শায়েস্তা করা, এমনটাই মনে করেন পাকিস্তানের সাংবাদিক ও গবেষক তালাত হুসেইন।

তার মতে, “মে মাসের ৯ তারিখ পিটিআইয়ের ওপর দুর্যোগ নেমে আসে। এতে দলটির নেতাদের সামনে তিনটি রাস্তা খোলা ছিল। হয় পিটিআই ছাড়া, রাজনীতি থেকে বের হয়ে যাওয়া নতুবা তাদের (ক্ষমতাসীন) নির্দেশিত পার্টিতে যোগ দেওয়া।”

ইতোমধ্যে পিটিআইয়ের অনেক নেতা কারাগারে, নয়তো অজ্ঞাতবাসে আছেন। রাজনীতির ময়দানে যারা আছেন তাদের কৌশল নিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় যে ঘটনাটি ঘটছে, তা হল-পিটিআই ভেঙে যাচ্ছে।

পারভেজ খট্টক ছিলেন ইমরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। নিঃসন্দেহে শক্তিশালী এই রাজনীতিককে নিয়ে ইমরানের উচ্চাশার কমতি ছিল না। কিন্তু পিটিআইয়ের বুকে প্রথম পেরেকটি তিনিই ঠোকেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্লামেন্টারিয়ানস (পিটিআই-পি) নামে একটি দল খুলেছেন তিনি। খাইবার পাখতুনখাওয়ায় নিজের আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে দলটি খোলেন তিনি।

ডনের প্রতিবেদন বলছে, খট্টকের পেছনে আছে সেনাবাহিনী। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পিটিআই-পি হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে খট্টক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন না। কারণ দেশটির জনগণ তাকে ইমরান খানের সহযোদ্ধা হিসেবেই চেনে। ইমরানহীন খট্টকের গুরুত্ব তাদের কাছে খুব কম।

কফিনে দ্বিতীয় পেরেকটি ঠোকেন জাহাঙ্গীর খান তারিন। ইমরানের এই আস্থাভাজন নেতা ও চিনি ব্যবসায়ী খুলেছেন ইস্তেকাম-ই-পাকিস্তান (আইপপি) পার্টি। পাঞ্জাবে পিটিআইয়ের দলত্যাগী নেতাদের নিয়ে তিনি দলটি গড়ে তুলেছেন। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সঙ্গে আইপিপি’র প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে, এমন অভিযোগ রয়েছে।

ইমরান খানের সামনে কী কোনও পথ নেই

পাকিস্তানের মত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দেশে কারও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। দেশটিতে রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করে সেনাবাহিনীর উপর।

ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানে এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে কারাবন্দি নেতারা কারামুক্তির পর আরও জনপ্রিয় হয়েছেন, এমনকি ক্ষমতার কেন্দ্রেও এসেছেন। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায় শরিফ পরিবারের। এই পরিবারের সন্তান দুই ভাই নওয়াজ শরিফ ও শাহবাজ শরিফ। তারা দুজনেই এক সময়ে দুর্নীতি দায়ে কারাবাস করেছেন। আবার কারামুক্ত হয়ে ক্ষমতায়ও ফিরেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিও একইভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।

কারাবন্দি ইমরান খানের ভাগ্যে কী ঘটবে তা এখনই হয়ত বলা যাচ্ছে না। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক দল ও সেনা সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ইমরান ও পিটিআই। নিগৃহীতের প্রতি গণমানুষের সমবেদনার সূত্র ধরে অঘটন ঘটিয়ে ইমরান রাজনীতিতে ফিরতেও পারেন, এমন আশা অনেকের।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, এপি, আল জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত