Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

পহেলগাম হামলার ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তে পাকিস্তান প্রস্তুত : শেহবাজ শরিফ

Pakistan-PM-Shehbaz-Sharifs
[publishpress_authors_box]

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, কাশ্মীরের পহেলগামের ঘটনায় তার দেশ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ কোনও তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন মানুষ নিহত হন। নিহতদের অধিকাংশই পর্যটক। ২০০০ সালের পর থেকে এটি কাশ্মীর অঞ্চলে হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ সশস্ত্র হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন।

এই ঘটনার পর পরাশক্তিধর দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত একতরফাভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু নদ চুক্তি (আইডব্লিউটি) বাতিল করেছে। জবাবে পাকিস্তান ‘সিমলা চুক্তি’ স্থগিত করেছে এবং ভারতের বিমানগুলোর জন্য নিজের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারত এই হামলাকারীদের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে আসার যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তানের কাকুলে অবস্থিত সামরিক একাডেমিতে একটি পাসিং-আউট প্যারেডে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, “পহেলগামের সাম্প্রতিক মর্মান্তিক ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, এই দায়-দেওয়ার খেলা থামাতে হবে। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত।”

তিনি বলেন, “ভারত বরাবরের মতো আবারও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে, এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বা তদন্ত ছাড়াই মিথ্যা দাবি করছে। এটি একটি ধারাবাহিক নির্যাতনের ধারা।”

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি কাশ্মীর ইস্যুর গুরুত্ব আবারও তুলে ধরতে চাই। আমাদের জাতির প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যথার্থই বলেছিলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন।’ অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জাতিসংঘের বহু প্রস্তাব সত্ত্বেও এই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিরোধ আজও নিষ্পত্তি হয়নি। কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান তাদের ন্যায্য অধিকার ও সংগ্রামের পক্ষে অটলভাবে পাশে থাকবে।”

তিনি বলেন, “পাকিস্তান সবসময়ই সন্ত্রাসবাদের সব রূপ ও প্রকাশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আমাদের শহীদ হয়েছে ৯০ হাজার মানুষ এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কল্পনারও বাইরে—যা ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।”

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের এই বক্তব্যের একদিন আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাকিস্তান “আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের” পরিচালিত “যেকোনো তদন্তে” সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

খাজা আসিফ বলেন, পহেলগামে সশস্ত্র হামলার পরবর্তী পরিস্থিতিকে ভারত সিন্ধু নদ চুক্তি স্থগিত করার এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত কোনও প্রমাণ বা তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমরা চাই না এই যুদ্ধ বিস্তৃত হোক। কারণ যুদ্ধ বিস্তৃত হলে এই অঞ্চলের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এখন অকার্যকর এবং পাকিস্তান থেকে হামলার পরিকল্পনা বা পরিচালনার কোনও সক্ষমতা তাদের নেই। তাদের পাকিস্তানে কোনও সাংগঠনিক কাঠামো নেই।”

খাজা আসিফ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে আরও বলেন, “যারা এখনও কোনোভাবে টিকে আছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কাউকে কাউকে গৃহবন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে। আবার কেউ কেউ কারাগারে রয়েছে। তারা মোটেও সক্রিয় নয়।”

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খাজা আসিফ সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, হামলাটি হতে পারে “একটি ভুয়া পতাকা অভিযান”, যা ভারত সরকার নিজেই সংঘটিত করে সঙ্কট সৃষ্টি করতে চেয়েছে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, গত এক দশক ধরে ভারত এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে আসছে। তিনি বলেন, “তারা নানা অজুহাত তৈরি করছিল। এমন সব সমস্যা সৃষ্টি করছিল, যা আসলে ছিল না। এখন তারা এই ঘটনার মাধ্যমে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার অজুহাত পেয়েছে।”

আলাদাভাবে স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ সতর্ক করে বলেন, ভারত পাকিস্তানের ওপর কোনও হামলা চালালে “সম্পূর্ণ যুদ্ধ” শুরু হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, “পুরোপুরি আক্রমণ হয় বা কিছু এরকম ঘটলে অবশ্যই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হবে। বিশ্বের উচিত এই অঞ্চলে পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হওয়া।”

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুদিন ধরে গোলাগুলি

শনিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। পহেলগাম হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও অবনতি হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার আজাদ কাশ্মীরের এক সরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি এএফপিকে জানিয়েছিলেন, দুই দেশের সেনারা সীমান্ত বরাবর গোলাগুলি করেছে। বেসামরিক জনগণের ওপর কোনও হামলা হয়নি।

এ বিষয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে ভারতের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, সীমিত পরিসরে ছোট অস্ত্রের গোলাগুলি হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, পাকিস্তানের একাধিক সেনা চৌকি থেকে শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে তাদের ওপর “উস্কানিমূলক” ছোট অস্ত্রের গুলি ছোড়া হয়। এর জবাবে ভারতীয় সেনারা পাল্টা গুলি চালায়।

ভারত জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

২৩ এপ্রিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের নেওয়া আক্রমণাত্মক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি ছিল একতরফাভাবে ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদ চুক্তি স্থগিত করা। এই চুক্তিটি বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় হয়েছিল এবং দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ ও বৈরিতার মধ্যেও টিকে ছিল।

ভারত তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্কও নেমে এসেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দেশটির সরকার ও গণমাধ্যম কোনও প্রমাণ উপস্থাপন না করেই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসে সহায়তার অভিযোগ তুলেছে।

এর পরদিন ইসলামাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) পাকিস্তানের জবাব ঘোষণা করে। তারা জানায়, পাকিস্তান তার পূর্ববর্তী প্রতিবেশীর সঙ্গে সব বাণিজ্য, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও বিমান চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। কমিটি ভারতকে আহ্বান জানায়, যেন তারা “দোষারোপের পুরনো অভ্যাস ও পহেলগামের মতো ঘটনাকে কৃত্রিমভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে।”

জাতিসংঘ পরাশক্তিধর দুই দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরব ও ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে পারবে।

তিনি বলেন, “সীমান্তে ১,৫০০ বছর ধরে উত্তেজনা চলছে। তাই এটি নতুন কিছু নয়, আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে।”

পহেলগাম হামলার পর থেকে ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কর্মকর্তারা ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে “সম্পূর্ণ সমর্থন” দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত