পহেলগাম হত্যাকাণ্ডে ইসলামাবাদকে জড়িয়ে ভারতের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে।
সেই সঙ্গে ভারতের যে কোনও উসকানিমূলক পদক্ষেপের জবাব দিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তৈরি থাকার কথা বলেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
গত মঙ্গলবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে পাল্টপাল্টি চলছে।
হামলায় পেছনে পাকিস্তান জড়িত বলে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার দাবি করছে নয়া দিল্লি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এই হামলা যারা চালিয়েছে, যারা পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে, সবাইকে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে।
তার এক দিন পর শুক্রবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সেনেটে ভারতের অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব তোলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার।
তাতে নিরাপরাধ মানুষকে লক্ষ্য করে চালানো সব ধরনের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানো হয়। সেই সঙ্গে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের’ নিন্দাও জানানো হয় প্রস্তাবে।
এই হামলার পর সিন্ধুর নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতের যে ঘোষণা ভারত সরকার দিয়েছে, তার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, এটা এক ধরনের যুদ্ধের শামিল।
প্রস্তাবে ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলা হয়, সার্বভৌমত্ব এবং যে কোনও ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ ঠেকাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পুরোপুরি সক্ষম।
প্রস্তাবটি সেনেটে সর্বসম্মতভাবে পাস হয় বলে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
প্রস্তাবটির ওপর আলোচনায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা শেরি রহমান বলেন, “আমি আগেও বলেছি, মোদী তার প্রথম মেয়াদকালেও পানিতে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
“যে চুক্তি প্রতিটি যুদ্ধে টিকে ছিল এবং প্রতিটি যুদ্ধজুড়ে অক্ষত ছিল; এখন তারা এটাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। আমরা তা হতে দেব না।”
বিপুল করতালির মধ্যে শেরি বলেন, “আমরা এখনও তাদের শান্তির বাণী শোনাতে চাইব না, কেননা আমরা অতীতে তা যথেষ্ট বার করেছি।”
সেনেটে বিরোধীদলীয় নেতা শিবলি ফারাজ বলেন, “এই প্রস্তাব প্রতিপক্ষের কাছে আমাদের একতার বার্তা দেবে।”
কাশ্মীরে হামলা ঠেকাতে ভারতের ব্যর্থতার দিকটি দেখিয়ে তিনি বলেন, সাড়ে ৭ লাখ সেনার নজরদারির মধ্যে এমন হামলা কী করে ঘটে?
পহেলগাম হামলার জেরে ভারত বুধবার সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পাশাপাশি পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। সব পাকিস্তানিকে ভারত ছাড়তে বলা হয়।
তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি বৃহস্পতিবার বৈঠক করে দ্বিপক্ষীয় সব চুক্তি স্থগিতের পাশাপাশি ভারতের বিমানের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি সার্ক ভিসায় পাকিস্তানে থাকা সব ভারতীয়কে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
দুই পক্ষের মধ্যে এই উত্তেজনার রেশ গড়িয়েছে সীমান্তেও। শুক্রবার ভোরে কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস পারমাণবিক শক্তিধর এই দুটি দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার সেনেটে বলেন, “যদি কেউ পাকিস্তানকে নিয়ে দুঃসাহসিক কিছু ভাবে, তাহলে জানতে হবে যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছে।
“যদি কেউ আমাদের জিম্মি করার চেষ্টা করে, তবে আমরা অতীতে যেমন করেছি তেমনই তাদের জবাব দেব।”
ভারতের এই ‘ভুল’ করা উচিৎ হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যসূত্র : ডন, জিও নিউজ, দ্য নিউজ
