ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগাম শহরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারতের নেওয়া বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান।
এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা স্থগিত, ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ এবং ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণাসহ আর কিছু সিদ্ধান্ত জানিয়েছে পাকিস্তান।
এর আগে ওই হামলার পর সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। তার মধ্যে ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করা, পাকিস্তানের সঙ্গে মূল সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়াও ছিল।
এরপরই বৃহস্পতিবার নিজেদের সিদ্ধান্ত জানায় পাকিস্তান।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি বৃহস্পতিবার ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা স্থগিত, ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ এবং ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণাসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, তারা ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে। পানি বন্ধ বা অন্য দিকে প্রবাহিত করার যেকোনও প্রচেষ্টাকে ‘যুদ্ধের উসকানি’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
‘জাতীয় ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
সেই সঙ্গে ভারতের সাথে সিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্পের’ আওতায় দেওয়া সব ভিসাও স্থগিত করা হয়েছে।
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কূটনীতিকদের সংখ্যা ৩০ জনে কমিয়ে আনতে এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ৩০ এপ্রিলের আগে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।
ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত বিমান সংস্থাগুলোর জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যও স্থগিত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের ভারত সফরের মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে একদল বন্দুকধারী।
এতে দুই বিদেশিসহ ২৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ২০ জনের বেশি মানুষ।
এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার শাখা দ্য রেজিট্যান্স ফ্রন্ট (আরটিএফ)।
ঘটনার পরদিন বুধবার সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন।
সেদিন রাতে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির সভায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়।
সেগুলো হলো- সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা; দু’দেশের একমাত্র বাণিজ্য পথ আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া; দিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনে নিযুক্ত কূটনীতিকদের বহিষ্কার ও ইসলামাবাদে ভারতের হাই কমিশনে নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তাদের ফেরত; দু’দেশের হাইকমিশনগুলোতে কর্মরতদের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা এবং পাকিস্তানিদের সার্ক ভিসা বাতিল করা।
