শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমাতে দুই দিনের জন্য পাঞ্জাবের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, একটি কলেজের ক্যাম্পাসে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ। তা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই কর্তৃপক্ষ দুই দিনের জন্য সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কারণে পাঞ্জাবের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশটির প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে একটি কলেজের ক্যাম্পাসে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর তা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের চারটি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এর মধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরাটে বুধবার প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পাকিস্তানে প্রায়ই নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা হলেও রক্ষণশীল দেশটিতে এসব ঘটনা সাধারণত চেপে যাওয়া হয়। সেক্ষেত্রে এমন একটি বিষয়কে ঘিরে দেশটিতে দানা বাঁধা এই বিক্ষোভকে বিরল ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
পাঞ্জাবের সরকার ও পুলিশের দাবি, প্রাদেশিক রাজধানী লাহোরের প্রাইভেট পাঞ্জাব গ্রুপ অব কলেজের ক্যাম্পাসে ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়, সেখানে ধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
তারা বলছে, বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যা বিক্ষোভ উসকে দিয়েছে। আর এতে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজন সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে তারা।
রাওয়ালপিন্ডি শহরে শত শত শিক্ষার্থী একটি কলেজ ভবনে ব্যাপক ভাংচুর করার পরদিন পাঞ্জাব প্রদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। রাওয়ালপিন্ডির বিক্ষোভ দমনে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত আড়াইশ’ জনকে।
এপি জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, কারণ পাকিস্তানে ১৯৮৪ সাল থেকে ছাত্র ইউনিয়নগুলো নিষিদ্ধ রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর যুব শাখা থাকলেও পাকিস্তানে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কোনও সংগঠন নেই।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই করাচিতে সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কারাবন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দলের শত শত সমর্থক শুক্রবার বিক্ষোভ করেছে। উত্তর-পশ্চিম শহর পেশোয়ারে ইমরানের সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে। তবে তারা বিক্ষোভ করেছে মূলত সংবিধানে যেকোনো ধরনের সংশোধন আনার বিরোধিতা করে।
বিচ্ছিন্নভাবে, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দলের শত শত সমর্থক সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শুক্রবার করাচি এবং উত্তর-পশ্চিম শহর পেশোয়ারে প্রতিবাদ করেছেন দেশের সংবিধানে কোনও সংশোধন করার বিরোধিতা করার জন্য।
করাচিতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এছাড়া ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকায় ইমরান খানের সমর্থকরা অন্য কোথাও বিক্ষোভ জমাতে পারেনি।
ইমরান খানের সমর্থকরা বলছেন, ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সরিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ দিতে এবং সুপ্রিম কোর্টের সমান্তরালে একটি নতুন সাংবিধানিক আদালত স্থাপন করতে চান। তবে পাকিস্তানের সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।