আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চার মেয়াদে ছিলেন সংসদ সদস্য। তিনবার সামলেছেন দুটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৬ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইয়াং গ্লোবাল লিডারের তালিকায় ছিল তার নাম।
দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর খুনের মামলার আসামি হয়ে এখন ফাঁসির আসামিদের সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে এক সময়ের সেই প্রভাবশালী জুনাইদ আহমেদ পলককে।
আর একথা আদালতকে নিজেই জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার পলককে হাজির করা হয় ঢাকার মহানগর হাকিম ইমরান আহম্মেদের আদালতে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার শাহবাগ এলাকায় রিয়াজুল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন করেছিল পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক একরামুল হক আদালতে হাজির করেছিলেন পলককে।
শুনানি শুরু হলে কিছু কথা বলার অনুমতি চেয়ে নিয়ে পলক বলেন, “দুই হাজার আসামির সঙ্গে আমাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫০০ জনই ফাঁসির আসামি।”
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে তাকে ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে পলক বলেন, “পাঁচ হাত লম্বা চার হাত চওড়া সেলে আমাকে রাখা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতসহ ফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না।”
ওই কারাগারে বেশিরভাগ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন জানিয়ে পলক বলেন, সেই ফাঁসির আসামিদের সঙ্গেই তাকে রাখা হয়েছে।
বিচারক পলককে বিষয়টি লিখিত আকারে জানিয়ে আবেদন দাখিল করতে বলেন।
পরে পুলিশের করা নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। শুনানি শেষে পলককে ফের নেওয়া হয় কারাগারে।
পলকের আইনজীবী ফারজানা ইসলাম রাখি সাংবাদিকদের বলেন, “গত ২৭ অক্টোবর ডিভিশন পান জুনাইদ আহমেদ পলক। ডিসির কাছ থেকেও অনুমোদন পান। তিনি ডিভিশনেও ছিলেন। পরবর্তীতে কাশিমপুর নিয়ে যাওয়ার পর হাইসিকিউরিটির ৪ নম্বর সেলে তাকে রাখা হয়েছে। যেখানে কোনও ধরনের ডিভিশন নেই।”
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ জানিয়ে আইনজীবী বলেন, “ডিভিশনাল সেলে সুযোগ-সুবিধা না থাকার ফলে তিনি শারীরিক, মানসিকভাবে ও অনিরাপত্তার মাঝে জীবন-যাপন করছেন। বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দিতে বলেছেন। সবকিছু পর্যালোচনা করে ডিসিশন দেবেন আদালত।”
এক প্রশ্নের জবাবে ফারজানা ইসলাম রাখি বলেন, “ওখানে সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি যেহেতু রয়েছে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড অনেক ভয়ংকর থাকে। অনেকে আছে এর মধ্যে জঙ্গি। এ ধরনের জঙ্গিদের সঙ্গে তাকে এক জায়গায় রাখা হয়েছে। তিনি অনিরাপত্তায় ভুগছেন।
“আর একটা বিষয় সপ্তাহে প্রত্যেক আসামির তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকে। এখানে তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাকে তার পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি আদালতকে জানিয়েছি মৌখিকভাবে। যদি রেজাল্ট না আসে আমরা অবশ্যই লিখিতভাবে জানাব।”
যে মামলায় সোমবার পলককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তোপখানা রোডে রিয়াজুলকে গুলি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যায় কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ২৬ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন রিয়াজুলের পূর্বপরিচিত বিল্লাল হোসেন। মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে জুনাইদ আহমেদ পলকের নামও।