Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
বিশ্বকাপ বাছাই

এক সুরে বাঁধা বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের আবেগ

ফিলিস্তিনের যুদ্ধ বিধ্বস্ত জনগণের জন্য সহমর্মিতা জানালেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ছবি : সংগৃহীত।
ফিলিস্তিনের যুদ্ধ বিধ্বস্ত জনগণের জন্য সহমর্মিতা জানালেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ছবি : সংগৃহীত।
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের জন্য আওয়াজ তোলা, ব্যাপারটা ব্যতিক্রমই বটে! কিন্তু সেই বিরল দৃশ্য এবার দেখা যেতে পারে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন ম্যাচে। আগামী ২১ মার্চ কুয়েতে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে প্রথম খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ২৬ মার্চ ঢাকায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় হোম ম্যাচে ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হবেন জামাল ভূঁইয়ারা।  

মাঠে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে লড়বেন তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, রাকিব হোসেনরা। কিন্তু মাঠের বাইরে সেই ফিলিস্তিনের জন্যই সমর্থন থাকবে বাংলাদেশি দর্শকদের। শুধু দর্শক নয়, বাংলাদেশের যে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ম্যাচ দুটি সরাসরি সম্প্রচার করবে সেই টি-স্পোর্টসও এগিয়ে এসেছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনকে সহযোগিতা করতে।      

এরই মধ্যে টি-স্পোর্টস ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ২টি ম্যাচে টি-স্পোর্টস অ্যাপ থেকে উপার্জিত সব অর্থ যাবে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের কাছে।

এরপর নিজেদের ফেসবুক পেজে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ লিখেছে , “ভোর হোক তোমার জানালায়। ভোর হোক ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া শহরে…।”

গাজায় যুদ্ধাহত মানুষের জন্য গত কয়েক মাস ধরেই অর্থ সংগ্রহ করে চলেছেন ফিলিস্তিন জাতীয় দলের ফুটবলার মোহাম্মদ রশিদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের চ্যানেলের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ বিলিয়ে দেন যুদ্ধাহত মানুষের সাহায্যার্থে।

রশিদ খেলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড পজিশনে। রশিদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রামাল্লায়। পেশাদার ফুটবলার হবেন, এমন ইচ্ছা কখনো ছিল না রশিদের। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এক কলেজে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ফুটবলের ওপর বৃত্তি নিয়ে। এরপর সেখানেই স্নাতক শেষ করে শিকাগোর এক ওয়ারহাউজে কাজ করতেন। সেখানে কাজ করতে গিয়ে প্রথম শোনেন ফিলিস্তিনের প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব হিলাল আল-কুদস দলের নাম। ওই দলে খেলার সুযোগ পেয়ে ফিরে যান ফিলিস্তিনে। এর এক বছরের মাথায় ২০১৮ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয় রশিদের।   

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাংলাদেশের দর্শক। ছবি: সংগৃহীত।

শিকাগোতে ট্রাক ড্রাইভারের কাজও করেছেন রশিদ। কিন্তু জেরুজালেমে গিয়ে উপলব্ধি পুরোই বদলে যায় তার। সম্প্রতি আরব নিউজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ছিল অবাধ স্বাধীনতা। এখানে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করবে না আপনাকে, আপনার ইচ্ছামতো সব জায়গায় যেতে পারবেন। কিন্তু ফিলিস্তিনে সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ব্যাপারটাই নেই আমাদের ফিলিস্তিনে।”

ফিলিস্তিনি ফুটবলারদের পক্ষে এখন শুধু খেলায় মন দেওয়া একটু অসম্ভব। ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে গাজায় ফুটবল খেলাও কঠিন।

মোহাম্মদ রশিদ এবং তার সতীর্থ ফুটবলাররা যোদ্ধা নন। তবে অনেক দিন ধরেই তারা ফিলিস্তিনের লড়াই সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে আসছেন। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা যেন আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে তাদের জন্য। রশিদ বলেন, “যখন আমরা ফিলিস্তিন জাতীয় দলের জন্য খেলি, আমরা নিজের দেশের নাম, দেশে যা ঘটছে এর সব তুলে ধরি সবার সামনে।” যদিও বেশির ভাগ খেলোয়াড় এতদিন রাজনীতি এড়িয়ে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু গাজার বর্তমান পরিস্থিতে কেউ আর চুপ থাকতে পারছেন না। ইসরায়েলি সেনাদের বোমায় অনেকে হারিয়েছেন তাদের প্রিয়জন। অনেকে হারিয়েছে বন্ধু-স্বজনদের। তাদের জন্যই এখন ফুটবল মাঠে জোর গলায় কথা বলছেন তারা।

যুদ্ধ বা রাজনীতি নিয়ে কথা বলার মতো অতীত অভিজ্ঞতা যদিও মোটেও সুখকর ছিল না ফুটবলারদের। এ প্রসঙ্গে রশিদ বলেন, “খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের সব সময় রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে সতর্ক থাকতে হতো। কারণ আপনি যদি এসব নিয়ে বেশি কথা বলেন তাহলে তারা আপনার খেলাধুলা বন্ধ করে দেবে।”

গাজায় যুদ্ধাহত মানুষের জন্য গত কয়েক মাস ধরেই অর্থ সংগ্রহ করে চলেছেন ফিলিস্তিন জাতীয় দলের ফুটবলার মোহাম্মদ রশিদ। ছবি: সংগৃহীত।

 এরপর তিনি যোগ করেন, “এমনটা আগে আমার সতীর্থদের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। জাবাল আল মুকাবারের হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার দিন আমার বন্ধু আহমেদ আবু খাদিজাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।”

সুযোগটা কি এবার কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ? যদিও কাজটা কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্যই।

অতীতের পরিসংখ্যান তো এমনটাই বলছে। ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম দেখা ২০০৬ সালে। এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বের সেই ম্যাচ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ১-১ গোলে ড্র হওয়া সেই ম্যাচের পর ফিলিস্তিনের সঙ্গে আরও পাঁচবার খেলেছে বাংলাদেশ। হেরেছে প্রতিবারই।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের কাছ থেকে তারপরও এবার অন্তত ১ পয়েন্ট পাওয়ার আশায় আছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত