ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দুই দলের পার্থক্য ৮৬ ধাপের। যেখানে ফিলিস্তিনের র্যাঙ্কিং ৯৭। বাংলাদেশের ১৮৩। ফিটনেস, উচ্চতা, শারীরিক গড়নেও ফিলিস্তিনের তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ। সেই ফিলিস্তিনের সঙ্গে ড্রয়ের আশা করাটাও নিছক বাড়াবাড়ি।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে অনুমিতভাবেই ফিলিস্তিনের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। কুয়েতের জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি।
আরও স্পষ্ট করে বললে বাংলাদেশকে একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছেন ফিলিস্তিনের ফরোয়ার্ড ওদে দাব্বাঘ।
জানুয়ারিতে এশিয়ান কাপে ফিলিস্তিনকে নক আউট পর্বে তোলায় যার ছিল বড় অবদান। সেই দাব্বাঘ বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছেন হ্যাটট্রিক। জোড়া গোল করেছেন শিহাব কুমবর।
এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আরেকটি লজ্জার হার রয়েছে বাংলাদেশের। গত বছর ১৬ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ৭-০ ব্যবধানে।
আগামী ২৬ মার্চ ঢাকায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় হোম ম্যাচে বাংলাদেশ আবারও মুখোমুখি হবে ফিলিস্তিনের।
ফিলিস্তিনের সঙ্গে আগের ৬ ম্যাচের মুখোমুখিতে ৫ বারই হেরেছিল বাংলাদেশ। ১টি ম্যাচ হয়েছিল ড্র। এবার পরাজয়ের ব্যবধানটা ছাড়িয়ে গেল আগের ম্যাচগুলোকেও। আগে ফিলিস্তিনের কাছে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান ছিল সর্বোচ্চ ২-০ গোলের।
কুয়েতে রয়েছে প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশী। ম্যাচটি দেখতে মাঠে এসেছিলেন এই দর্শকেরা। যাদের এক হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। অন্য হাতে ফিলিস্তিনের। যদিও দর্শকেরা হতাশই হয়েছেন ম্যাচটি দেখে।
চোটের কারণে কুয়েতে যেতে পারেননি ডিফেন্ডার তারিক কাজী ও ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন। এ দুজনের অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
যদিও এদের ছাড়াই খেলতে নেমে ৪২ মিনিটি পর্যন্ত ফিলিস্তিনের সঙ্গে এক রকম চোখ চোখ রেখে লড়াই করেছে বাংলাদেশ। এমনকি ২৭ মিনিটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের ক্রস থেকে পাওয়া বলে সোহেল রানা নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট না করলে এই ম্যাচের গল্পটা অন্যভাবেও লেখা হতে পারতো!
অথচ সেই বাংলাদেশই বিরতিতে যাওয়ার আগের ৩ মিনিটে খেয়েছে পরপর দুটি গোল। বিরতি থেকে ফিরেও বাকি ৭ মিনিটে বাংলাদেশের জালে ঢুকেছে আরও ২ গোল। ১০ মিনিটের ব্যবধানে এক হালি গোল খেয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ফেরা হয়নি বাংলাদেশের। কোমায় চলে যাওয়া ম্যাচ থেকে আত্মবিশ্বাসও আর ফেরাতে পারেননি জামাল ভূঁইয়ারা।
এই ফিলিস্তিন জানুয়ারি মাসে এশিয়ান কাপে উপহার দেন দুর্দান্ত ফুটবল। সবাইকে চমকে দিয়ে ওঠে শেষ ষোলোয়। যদিও চ্যাম্পিয়ন কাতারের কাছে হেরে বিদায় নেয়। কিন্তু সেই ফিলিস্তিনকে আটকানোটা স্বাভাবিকভাবেই কঠিন ছিল বাংলাদেশের ফুটবলারদের জন্য।
তারপরও শুরুটা বেশ আশা জাগানিয়া মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য। বেশ কয়েকবার বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন রাকিব হোসেন, ফয়সাল আহমেদ ফাহিমেরা। কিন্তু ৪৩ মিনিটে প্রথম গোল খাওয়ার পর থেকে পুরো এলোমেলো হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাঝ মাঠে ছিল না কোনও পরিকল্পনার ছাপ। ডিফেন্ডাররাও একের পর এক ভুল করতে থাকেন।
ফিলিস্তিন প্রথম এগিয়ে যায় দাব্বাঘের গোলে। ৪৩ মিনিটে মাহমুদ আবুওয়ারদার শট মিতুল মারমা ফেরালেও ফিরতি বলে দাব্বাঘ করেন ১-০। বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে কর্ণার থেকে শিহাব কুমবরের গোলে স্কোর হয় ২-০। এরপর ৪৮ মিনিটে কর্ণার থেকে কুমবার আবারও করেন গোল (৩-০)। এরপর ৫২ মিনিটে মাহমুদ ধাধার ক্রসে দারুণ ভলিতে দাব্বাঘ করেছেন ৪-০। ৭৬ মিনিটে দাব্বাঘ হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন।
৭০ মিনিটে ৩টি বদল করেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তবে চন্দন রায়, সুমন রেজা ও রবিউল ইসলামকে নামিয়েও স্কোর লাইনে কোনও বদল আনতে পারেনি বাংলাদেশ।
৩ ম্যাচে ২ হার ও ১ ড্রয়ে ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতেই রইলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : মিতুল মারমা, ইসা ফয়সাল, তপু বর্মন, বিশ্বনাথ ঘোষ (শাকিল হোসেন), সাদ উদ্দিন, মজিবর রহমান জনি (চন্দন রায়), মোহাম্মদ হৃদয় (জাভেদ আহমেদ), সোহেল রানা (রবিউল ইসলাম), জামাল ভূঁইয়া, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম (সুমন রেজা), রাকিব হোসেন।