Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির প্রস্তাব আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র

বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনকে সদস্য পদ দেওয়ার জন্য বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনকে সদস্য পদ দেওয়ার জন্য বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
[publishpress_authors_box]

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তোলা একটি প্রস্তাব ভেটো দিয়ে আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবটি পাস হলে ফিলিস্তিন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেত।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৫টি দেশের মধ্যে ১২টি দেশের ভোট পায়। যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড ভোট দেয়নি।

প্রস্তাবটি পাস হতে প্রয়োজন ছিল ৯টি দেশের ভোট। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস‍্য যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় প্রস্তাবটি পাস হয়নি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কোনও প্রস্তাবে এর পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি ভেটো দিলে ওই প্রস্তাব আর পাস হয় না। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি চার স্থায়ী সদস‍্য দেশ হলো- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর তীব্র সমালোচনা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এটি অন্যায়, অনৈতিক ও অন্যায্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইচ্ছাকে অস্বীকার করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ লাভে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।

প্রস্তাবটিতে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দিতে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছিল। ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে রয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হলে ফিলিস্তিন জাতিসংঘের ১৯৪তম সদস্য হতো।

২০১১ সালে ফিলিস্তিন প্রথম জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে, কিন্তু তা গৃহীত হয়নি। তবে এরপর ২০১২ সালে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সদস্যের মর্যাদা দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়েই কার্যত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়ে যায় ফিলিস্তিন। বাকি আছে শুধু পূর্ণ সদস্য পদ।

তবে পূর্ণ সদস্যপদ পেতে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। অবশ্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য তথা ১৪০টি দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে।

পূর্ণ সদস্য পদ লাভের জন্য এটি ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। গাজায় গত সাত মাস ধরে চলমান যুদ্ধ ৭৫ বছরেরও বেশি পুরনো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে ফের বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসার পর ফিলিস্তিন এই প্রচেষ্টা চালালো।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতোই বলে আসছে, শুধু জাতিসংঘের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলে চলবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ এই লক্ষ্যে কাজ করা অন্যান্যদের সহায়তায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিৎ।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপ রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, “এই ভেটো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতার বিরোধিতার জন্য নয় বরং এটা বলার জন্য যে, তা শুধুমাত্র পক্ষগুলোর মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই আসবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র খুব স্পষ্ট এবং ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে যে, নিউ ইয়র্কে বসে কোনও অকালপক্ক পদক্ষেপ- এমনকি সর্বোত্তম অভিপ্রায়সহও- ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অর্জন করতে পারবে না।”

যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উড বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মানদণ্ড পূরণ করে কি না সে সম্পর্কে ‘অমীমাংসিত প্রশ্ন’ রয়েছে। হামাসের মতো একটি সশস্ত্র সংগঠনের গাজায় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকেও তিনি একটি সমস্যা হিসেবে দেখান, কারণ গাজাও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি অংশ।

উড জোর দিয়ে বলেন, দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এখনও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছে, যেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করবে। তিনি বলেন, এই সমাধানই উভয় পক্ষের নিরাপত্তা এবং সৌদি আরব সহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীদের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র পথ।

তথ্যসূত্র : সিএনএন, এপি, রয়টার্স

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত