ফিলিস্তিনে চলা গণহত্যার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ রামাদান। তার মতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো শক্তি ইসরায়েলের পাশে আছে বলেই অস্ত্রের জোরে বছরের পর বছর ধরে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের চালানো গণহত্যার সময় পশ্চিমা বিশ্ব মানবতা, গণতন্ত্র এবং সাম্যের কথা ভুলে যায় বলেও অভিযোগ করেন ইউসেফ রামাদান।
রক্তাক্ত গাজা উপত্যকার পেছনে ‘ব্রিটিশ নীতি’কে দায়ী করেন এই কূটনীতিক। তিনি বলেন, আজকের ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে, সেই ভয়াবহতা শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। তখন ফেসবুক, টুইটার না থাকায় বিশ্বের মানুষ জানতে পারেনি। এই ভয়াবহতার কারণ ব্রিটিশ নীতি।”
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানান, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাজ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফিলিস্তিনের দূত বলেন, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সবার আগে ব্রিটেনেরই স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল। কারণ ফিলিস্তিনের সব সমস্যা ব্রিটিশ নীতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও তারা যেটি বলেছে, তা শুভ উদ্যোগ। তবে ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সহানুভূতি থেকে তারা এই স্বীকৃতি দিচ্ছে না। বরং তারা বৈশ্বিক সমর্থন হারাচ্ছে বলে এখন স্বীকৃতি দিতে চাইছে। ভুলে গেলে চলবে না, ব্রিটিশদের কারণেই আমাদের এ করুণ পরিণতি।”
পশ্চিমারা যে সাম্য, গণতন্ত্রের কথা বলে, সেটা ইসরাইলের ক্ষেত্রে কেন বলেন না; সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। পাশাপাশি প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নিষ্ক্রিয়তাও সংকট বাড়িয়েছে বলে মনে করেন রামাদান।
যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগ নিলে দুই-তিন বছরের মধ্যেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব উল্লেখ করে ইউসেফ রামাদান বলেন, “জো বাইডেন ভোটের আগে ফিলিস্তিন ইস্যুতে যে ওয়াদা করেছিলেন, সে অনুযায়ী কাজ করলে ৭ অক্টোবর তৈরিই হতো না। তবে অনেক দেরি হলেও তিনি এখন এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সঠিক উদ্যোগ নিলে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনগণের জন্য বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসার কথা তুলে ধরে কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রদূত। সেইসঙ্গে এটাও জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আরব দেশের বাইরের একমাত্র নেতা, যার নামে ফিলিস্তিনে সড়ক রয়েছে।
ইউসেফ রামাদানের জন্ম লেবাননে ১৯৬০ সালে। তার বাবা-মা নিজেদের জন্মভূমি ফিলিস্তিন ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। ইসরায়েলিদের বাধায় নিজ দেশে ফিরতে না পারার গল্পও তুলে ধরেন তিনি।
বললেন, নিজের রাষ্ট্র না থাকার বেদনার কথা, নিজের ভূখণ্ডে যেতে না পারার বেদনার কথাও। স্বাধীন ফিলিস্তিনে ফিরতে না পারলে বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করলেন।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের দেওয়া সাম্প্রতিক রায়কে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “৭৫ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর ফিলিস্তিনের জনগণ এ রায়ে আশাবাদী।”
ফিলিস্তিনের মানুষ শান্তিতে থাকতে চায় জানিয়ে ইউসেফ রামাদান বলেন, “ইব্রাহিম (আ.) এর আমল থকে আমরা ওই জমির ভূমিপূত্র। এখানে কারও দায়িত্বগ্রহণ অযৌক্তিক। আমাদের দায়িত্ব অন্যরা নেবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ইসরায়েলিদের থাকতে দিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে বসবাস করতে পারে, আমরা না।”