ঘুমের মধ্যে নীরবে মারা গেলেন ভারতে জনপ্রিয় গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস। ৭২ বছর বয়সী পঙ্কজ উদাস দীর্ঘদিন লড়াই করছিলেন ক্যান্সারের সঙ্গে।
পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত এ গায়কের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার মেয়ে নায়াব উদাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে সোমবার সকাল ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তার আগে বেশ কয়েকদিন এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
পঙ্কজ উদাসের জন্ম ১৯৫১ সালের ১৭ মে গুজরাটে। গজলশিল্পী হিসেবে গত শতকের ৮০ ও ৯০ দশকে তিনি নিজ দেশ ভারত ও তার বাইরে অন্যান্য দেশে বিপুল জনপ্রিয়তা পান।
১৯৮৯ সালে পঙ্কজ উদাসের গানের অ্যালবাম ‘নাবিল’ মুক্তি পেয়েছিল। বেস্ট সেলিং অ্যালবামের তালিকায় থাকা ‘নাবিল’ এর প্রথম কপিটি নিলামে এক লাখ রুপিতে বিক্রি হয় তখন। যেটি পঙ্কজ উদাস মূলত ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য অনুদান দিয়েছিলেন।
গজল শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তার বাইরে পঙ্কজ উদাসের আরেকটি পরিচিতি হচ্ছে তিনি প্রচুর দাতব্য করেছেন। আর এসব কাজে সহযোগিতার মাধ্যম হিসেবে এই সংগীত মায়েস্ত্রো বেছে নিয়েছেন নিজের গানকেই। প্যারেন্টস থ্যালাসেমিয়া ইউনিটের সঙ্গে পঙ্কজ ছিলেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
চার দশকেরও বেশি সময় ভারতের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি মাতিয়েছেন পঙ্কজ। ‘চান্দি জ্যায়সা রং হ্যায় তেরা’, ‘জিয়ে তো জিয়ে ক্যায়সা’ ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিল কর রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি প্যার করো’, ‘নিকলো না বেনাকাব’ ইত্যাদি তার গাওয়া অসংখ্য গান শ্রোতাদের মুখে মুখে এখনো ফেরে।
১৯৮০ সালে ‘আহাত’ গজল অ্যালবামটি পঙ্কজ উদাসের প্রথম অ্যালবাম ছিল। তবে ১৯৮৬ সালে মহেশ ভাট পরিচালিত ‘নাম’ সিনেমায় ‘চিঠি আয়ি হ্যায়’ গানটি গেয়ে মানুষের মনে স্থান করে নেন। অবশ্য এই গানের শিরোনামেই তার অ্যালবামটি বের হয় ১৯৯৩ সালে। এ পর্যন্ত ৬০টি অ্যালবাম বের হয়েছে পঙ্কজ উদাসের।
পঙ্কজ উদাস নিয়ে অজানা কিছু তথ্য
পঙ্কজ উদাসের জন্ম অবস্থাপন্ন কৃষক পরিবারে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট। তার বড় ভাই মনোহর উদাস এবং মেজ ভাই নির্মল উদাসও গজল শিল্পী। ভাইদের মধ্যে নির্মল উদাস সবার আগে গান শুরু করলেও সবচেয়ে সফল পঙ্কজ উদাস। বড় ভাই মনোহর উদাস বলিউডেও গান গেয়েছেন। তাদের তিন ভাইয়ের রয়েছে ‘তিন মওসাম’ নামের একটি অ্যালবামও। ১৯৯১ সালে অ্যালবামটি মুক্তি পায়।
পঙ্কজ উদাস ছিলেন একজন বিজ্ঞান অনুরাগী। তিনি চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন। সংগীতের প্রতি ভালোবাসার জন্য সেই স্বপ্ন ত্যাগ করেছিলেন। তবে মুম্বাইয়ের উইলসন কলেজ থেকে পড়াশোনা করে বিজ্ঞানে ডিগ্রিও অর্জন করেছেন তিনি।
জীবনে প্রথম সম্মানী হিসেবে পঙ্কজ উদাস নিয়েছিলেন মাত্র ৫১ রুপি। ‘অ্যায় মেরে বতন লোগো’ (হে আমার দেশের লোক) শিরোনামে একটি স্টেজ শোতে পারফর্মেন্স করে ওই অর্থ আয় করেছিলেন তিনি।
গজলের পাশাপাশি দারুণ তবলাও বাজাতে পারতেন পঙ্কজ উদাস। গাড়িপ্রেমী ছিলেন পঙ্কজ উদাস। প্রথম বড় অংকের সম্মানী পেয়েই কিনেছিলেন ফিয়াট ৫১ মডেলের একটি গাড়ি।