পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নিরাপত্তা যাচাই-বাছাইয়ের স্বার্থে প্যারাসেইলিং সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সেইসঙ্গে এ সংক্রান্ত ১১টি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত।
মঙ্গলবার কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ এসব প্রশ্নের উত্তর তদন্ত করে ৪ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন।
আদালতের পেশকার শাহজাহান নূরি সকাল সন্ধ্যাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদেশের কপিতে দেখা গেছে, বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ৪ জুলাই ১১টি প্রশ্নের উত্তর আদালতে দাখিলের জন্য কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-সহকারি পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। একই সঙ্গে সম্প্রতি প্যারাসেইলিং করতে গিয়ে নারী পর্যটক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া প্রতিষ্ঠানটির প্যারাসেইলিং সরঞ্জাম বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে আদেশ দিয়ে আদালতকে জানিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় সব ধরনের প্যারাসেইলিং রাইড পরিচালনা বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্যারাসেইলিং বিষয়ে আদালত যে ১১টি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছে সেগুলো হলো, অভিযোগকারীর বর্ণিত দুর্ঘটনার কারণ, ঘটনার দিন অভিযোগকারীকে কোন কোন ব্যাক্তি প্যারাসেইলিং রাইড শেয়ার করেছেন, তাদের নাম, পিতার নাম, ঠিকানাসহ বিস্তারিত বিবরণ।
এছাড়া আন্তর্জাতিক প্যারাসেইলিং পরিচালনার ক্ষেত্রে কি কি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, দুর্ঘটনাকৃত প্যারাসেইলিং রাইড পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছিল কিনা, কক্সবাজারে প্যারাসেইলিং পরিচালনার ক্ষেত্রে কি কি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্যারাসেইলিং রাইডের ক্ষেত্রে কোন বিষয় বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং কক্সবাজারে প্যারাসেইলিং পরিচালনার ক্ষেত্রে মূল্য কেমন হওয়া উচিত তাও তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে।
প্যারাসেইলিং রাইডের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোন নিয়ম নীতি কিংবা কোন টিপস অনুসরণ করা হয় কি না, কক্সবাজারের ট্যুারিস্ট স্পটগুলোতে প্যারাসেইলিং প্রতিষ্ঠানগুলো রাইড পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় তাও জানতে চেয়েছে আদালত।
প্যারাসেইলিং রাইড পরিচালনার জন্য কোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়, রাইড পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম কতজন ব্যক্তি/কর্মীর উপস্থিত থাকতে হয় এবং রাইড পরিচালনা করা ব্যক্তিদের যোগ্যতা কিংবা দক্ষতার মাপকাঠি সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, ঢাকার থেকে কক্সবাজার আসা নারী পর্যটক আফসান জ্যাবিন অদিতি গত ২৪ মে শুক্রবার বিকালে দরিয়ানগর পয়েন্টে গিয়ে ‘ফ্লাই এয়ার সী স্পোর্টস প্যারাসেইলিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্যারাসেইলিং করতে গিয়ে এই নারী দুর্ঘটনার শিকার হন। এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পর্যালোচনা করে জনগণ/পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া একান্ত আবশ্যক।
ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৯০ (১) (গ) মতে আদালত এই ঘটনা স্বপ্রণোদিত হয়ে আমলে নেওয়ার এখতিয়ার রাখেন।
প্যারাসেইলিং করতে দূর্ঘটনায় শিকার এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে গত ১ জুন সকাল-সন্ধ্যা সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্যারাসেইলিং পরিচালনা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুদ রানা জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্যারাসেইলিং পরিচালনা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। ব্যবহৃত সরঞ্জাম যাচাই বাছাই, সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, টেকনিক্যাল টিম কর্তৃক মুল্যায়ন সাপেক্ষে পুনরায় চালু করে দেওয়া হবে।
প্যারাসেইলিং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ বিমানবাহিনীর কমান্ডো অফিসার, নৌবাহিনীর দক্ষ প্রশিক্ষক, লাইফ গার্ড ট্রেইনারসহ টেকনিক্যাল টিম সামগ্রিক মুল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিমানবাহিনীর কমান্ডো অফিসার, নৌ বাহিনীর দক্ষ প্রশিক্ষক, লাইফ গার্ড ট্রেইনার দিয়ে মাসব্যাপি প্রশিক্ষণ শুরু হবে। যারা প্রশিক্ষণে মূল্যায়ন হবে তাদেরকেই প্যারাসেইলিং পরিচালনার অনুমতি দেয়া হবে। একই সঙ্গে প্রতিমাসেই এই মূল্যায়ন কার্যক্রম চলবে।