Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

বড়রা ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শিশুদের ভাষার বিকাশ কম হয়

Parents Screen time feature
[publishpress_authors_box]

অভিভাবকের চোখ আটকে আছে ফোনে। আর ওদিকে তার সন্তান কী কী যে করে যাচ্ছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপই নেই। এটি বর্তমান সময়ের এক নিত্য ঘটনা। নেতিবাচক প্যারেন্টিং এর এক উৎকৃষ্ট উদাহরণও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, অভিভাবকদের এমন অভ্যাস ছোট্ট শিশুদের ভাষা বিকাশের পথেও অন্তরায়।   

অ্যাকাডেমিক জার্নাল ফ্রন্টিয়ার্স ইন ডেভেলপমেন্ট সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, মা-বাবার সঙ্গে শিশুদের মৌখিক যোগাযোগ তাদের ভাষা শেখার অন্যতম উপায়।

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স সেন্টার অব এক্সিলেন্স অন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ইয়ুথ মেন্টাল হেলথ এর কো-মেডিকেল ডিরেক্টর ড. জেনি রাডেস্কি বলেন, “যখন ফোনের স্ক্রিনের দিকে কেউ তাকিয়ে থাকে, শিশু অথবা অভিভাবক যেই হন না কেন, তখন তাদের কথা বলার মাত্রা অনেক কমে যায়। কমে যায় শিশুকে মুখে মুখে শেখানোর এবং পড়ানোর সুযোগ। এতে করে শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা এবং শব্দভান্ডারের যথাযথ বিকাশ ঘটেনা।”

এস্তোনিয়া ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজির  অধ্যাপক ড. টিয়া তুলভিস্তা বলেন, “গবেষণায় আমরা দেখেছি অভিভাবকদের (ফোন অথবা ল্যাপটপ) ফোন অথবা ল্যাপটপে সময় কাটানোর অভ্যাস কী করে শিশুদের ভাষা বিকাশকে প্রভাবিত করে।”

তার মতে, ফোন কিংবা ল্যাপটপে সময় কাটানোর এই অভ্যাসে ভারসাম্য নিয়ে আসতে দরকার পরিবারের সম্মিলিত উদ্যোগ।

ছবি- পেক্সেলস

এই গবেষণায় তুলভিস্তার সহকর্মী ছিলেন ড. জান তুলভিস্তা। গবেষণার প্রয়োজনে দুজনে মিলে কোভিড মহামারীর সময় কিছু ডেটা সংগ্রহ করেছিলেন। তাতে তারা দেখেছিলেন, সারা বিশ্বে শিশুরা করোনা মহামারীর সময় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি কাটিয়েছে ল্যাপটপ অথবা ফোনের স্ক্রিনে। একে তো অনলাইন ক্লাস, তার ওপর অভিভাবকরাও শিশুদের স্ক্রিনে সময় কাটাতে উৎসাহিত করতেন। যাতে তারা শিশুদের ব্যস্ত রেখে নিজেদের কাজ করতে পারেন।  

যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিবা যত্ন কেন্দ্রগুলোতে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ইমার্জেন্সি চিকিৎসা সেন্টারে যাওয়ার হার ৯ শতাংশ বেড়ে যায়।

এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গবেষকরা বলেন, ডে-কেয়ার কেন্দ্রের কেয়ারগিভাররা ফোনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে শিশুদের দিকে যথাযথ মনযোগ দিতে পারছেন না। ফলে শিশুরা দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে।

ফোন ব্যবহার, না অপ্রয়োজনীয় নির্ভরতা

ড. জেনি রাডেস্কি মনে করেন, অনেক পরিবারেই ফোনের ব্যবহার একটু বেশিই দেখা যায়। কখন ফোন ব্যবহার করবে আর কখন করবে না এই ব্যাপারে কোন সীমারেখাও মানতে তারা রাজি নন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, “ তারা মনে করেন অবসর কাটানোর সবচেয়ে সহজ উপায় নাকি ফোনে থাকা।”

রাডেস্কি আরও বলেন, “গবেষণায় দেখেছি পরিবারের সদস্যরা যখন সম্পর্ক নিয়ে চাপে অথবা হতাশায় থাকে তখন তাদের মধ্যে ফোনে অথবা ল্যাপটপে সময় কাটানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। একে অপরকে এড়িয়ে যেতে তারা এই কাজ করে।”

তার মতে, অভিভাবকরা শিশুদের হাতে ফোন তুলে দেন। কারণ এতে নাকি তাদের শান্ত রাখা যায়। বিশেষত তারা যখন চঞ্চলতা দেখায়।

ভারসাম্য আনুন ফোন ব্যবহারে

সাম্প্রতিক গবেষণা অভিভাবকদের পরামর্শ দিচ্ছে, শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় তারে যেন কোন ডিভাইস ব্যবহার না করেন।

নিউ ইয়র্কের মাতৃত্বকালীন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লরেন টেটেনবাউম বলেন, “আমাদের আসলে সারাক্ষণ ফোন ব্যহারের কোন দরকার নেই।”

স্ক্রিনটাইমে ভারসাম্য আনার পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, “শুরুতে ১৫ মিনিট সময় বের করুন। ফোন রাখুন এমন জায়গায় যেখানে চোখ যাবে না। এই সময়টি শিশুদের দিন। এটা মানসিক শান্তিও নিয়ে আসবে। আর এভাবে পরিবারের জন্যও সময় বের করা সম্ভব।”

ছবি- পেক্সেলস

টেটেনবাউম মনে করেন, ফোন ব্যবহার করার সময় কোন বিষয়ে কতটা প্রতিক্রিয়া দেখান উচিত সে বিষয়ে অভিভাবকদের চিন্তা ভাবনা করা দরকার।

তিনি বলেন, “আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করি যখন সবকিছুই জরুরী মনে করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে তা নয়। এটা সম্ভবও নয়। কিন্তু আপনি সবসময় একটা উত্তেজনার ভেতর আছেন, ফলে ক্লান্তি এবং মনযোগের ঘাটতি দুটোই আপনাকে পেয়ে বসছে। পরিবারে সময় না দিয়ে সারাক্ষণ ফোনে ব্যস্ত থাকার কারণে এক সময় আপনার অপরাধবোধ তৈরি হচ্ছে।”

গবেষণা বলছে, বাবা-মায়েরা যখন স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন তখন তা বাড়ির শিশুদেরও আক্রান্ত করে। এতে করে শিশুরা যেমন আহত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, ঠিক তেমনি তাদের ভাষার বিকাশও বাধাপ্রাপ্ত হয়।

তবে গবেষণা দাবি করছে, তাদের কাছে এর উত্তর নাকি আছে।

ফোনের অথবা ল্যাপটপের মতো ডিভাইসকে শিশুদের শান্ত করার কাজে ব্যবহার না করে অভিভাবকদেরই শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। আর সামাজিক যোগাযোগ এবং ইমেইলের সমস্ত নোটিফিকেশনে প্রতিক্রিয়া দেখান কতটা জরুরি তা নিয়েও ভাবতে হবে। পরিবারের শিশুদের সময় দিতে ফোন রাখতে হবে হাতের নাগাল থেকে দূরে।

সিএনএন অবলম্বনে     

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত