ভালোবাসার শহর প্যারিস। আইফেল টাওয়ার, মোনালিসার লু্ভ্য মিউজিয়াম, নটরডেম ক্যাথেড্রেল, কিংবা সিন নদীর উপর ‘লাভ প্যাডলক’ নামের তালায় ফুটে উঠে ভালোবাসার অন্য রুপ। সেই শহরে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ফিরল ১০০ বছর পর, ১৯০০ ও ১৯২৪ সালের পর এবার তৃতীয়বারের মতো। অলিম্পিক আয়োজনের এই হ্যাটট্রিক অবশ্য ২০১২ সালেই করেছে লন্ডন।
কয়েকটা খেলা আগে শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে আজ (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৩০ মিনিট, দেখাবে স্পোর্টস-১৮-১)। উদ্বোধনী প্যারেডের জন্য সাধারণত ব্যবহার করা হয় প্রধান অ্যাথলেটিক স্টেডিয়াম। তবে এবার ব্যতিক্রমী আয়োজনে উদ্বোধন হবে বিখ্যাত সিন নদীতে।
৬ থেকে ৭ হাজার অ্যাথলেট অস্টারলিটজ সেতু থেকে নৌকা ও বার্জে করে পাড়ি দেবেন সিন নদীর ৬ কিলোমিটার। অনুষ্ঠান ভাগ করা হয়েছে ১২টি ভাগে। অংশ নিবেন তিন হাজার নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও বিনোদনকর্মী। ৫ লাখের বেশি দর্শক বিশেষভাবে তৈরি স্ট্যান্ড থেকে উপভোগ করবেন এই অনুষ্ঠান। এর মধ্যে টিকিটধারী আছে ১ লাখের বেশি।
অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছেন প্রখ্যাত থিয়েটার পরিচালক টমাস জলি। অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপক এনবিসির মাইক তিরিকো। সঙ্গে থাকবেন হোদা কোতব, সাবানা গুথরি ও মারিয়া টেলর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান গাইবেন পপ আইকন সেলিন ডিওন ও লেডি গাগা। এজন্য শহর জুড়ে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জানালেন, ‘‘ আমরা প্রস্তুত। পুরো গেমস সফলভাবে শেষ করতে তৈরি আমরা।’’
দুই–তৃতীয়াংশ আয়োজন দিনের আলোয় হলেও বাকি অংশ দেখা যাবে গোধূলিবেলায়। এই আয়োজনে প্যারিসের অপরূপ সূর্যাস্তের মুহূর্ত উপভোগ করতে পারবেন দর্শকেরা। ৬৯ দিনে প্রায় ১০ হাজার বাহকের হাত ঘুরে আজ প্যারিসে পৌঁছেছে অলিম্পিক মশাল। ল্যুভর মিউজিয়ামের সামনের বাগানে এটি প্রজ্বলিত করার কথা। তবে সর্বশেষ বহনকারীর নাম এখনও জানায়নি আয়োজকরা।
প্যারিস অলিম্পিকের খেলা ৩২টি আর ইভেন্ট ৩২৯টি। ২০৬ দেশের ১০ হাজার ৭১৪ জন অ্যাথলেট অংশ নিচ্ছেন এবার। রয়েছেন বাংলাদেশের ৫ অ্যাথলেটও। তাদের মধ্যে আর্চার সাগর ইসলাম সুযোগ পেয়েছেন সরাসরি। রাশিয়া ও বেলারুশের অ্যাথলেটরা এই আয়োজনে অংশ নেবেন ব্যক্তিগত পরিচয়ে। ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেদের ভূমিকার কারণে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাদের।
অলিম্পিক গেমসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর অন্যতম মাসকট। আয়োজক দেশের সংস্কৃতির পরিচায়ক হয় এই মাসকট। এবারের গেমসের মাসকট ‘দ্য অলিম্পিক ফ্রাইরেজ’। এটা দেখতে ছোট্ট টুপির মতো। ঐতিহ্যবাহী টুপিগুলি রাঙিয়ে তোলা হয়েছে ফ্রান্সের পতাকার লাল, সাদা এবং নীল রঙে। আর বুকে রয়েছে প্যারিস অলিম্পিকের লোগো।
এতে তুলে ধরা হয়েছে ফ্রান্সের স্বাধীনতা ও ঐক্যের বার্তা। ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেবে এই প্রতীক। এ ধরনের টুপি ফ্রান্সের কিংবদন্তি মারিয়ানের মাথায় দেখা যায়। অনেকে একে লিবার্টি ক্যাপও বলে থাকেন। রোমান সভ্যতার আমলে দাসত্বের বিরুদ্ধে মুক্তির বার্তা তুলে ধরে এই টুপি। সেটাই এবার ফিরে এসেছে অলিম্পিকে।